পিবিএ,লালমনিরহাট: কয়েক বছর আগে যেসব জমিতে তামাক চাষ হতো এখন সেই সব জমিতে এবার ভুট্টা চাষ হচ্ছে। দিন দিন তাই বাড়ছে ভুট্টার আবাদ। ভুট্টা আবাদের পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাগ্য ফিরবে শত শত কৃষকের। আর স্বল্প খরচে অধিক মুনাফার আশায় প্রতিবছর লালমনিরহাটে বাড়ছে ভুট্টার চাষ। এ জেলার অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখায় ব্র্যান্ডিং ফসল হিসেবে স্থান পেয়েছে ভুট্টা।
কৃষকেরা জানায়, এখানকার মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় কয়েক বছর ধরে বাম্পার ফলন হচ্ছে। স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা পাওয়ায় প্রতিবছর ভুট্টার চাষ বাড়ছে সীমান্তবর্তী এ জেলায়।
রবি ও খরিপ দুই মৌসুমে ভুট্টার চাষ করা হয়। লালমনিরহাটে সব থেকে বেশি ভুট্টার চাষ হয় পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধায়। আগে অন্য ফসল চাষ হলেও এখন লাভজনক হওয়ায় ভুট্টার চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
এজন্য ভুট্টার নানামুখী ব্যবহার বৃদ্ধিসহ ভুট্টাজাত পণ্য তৈরির কারখানা এ জেলায় গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন কৃষকেরা। তাদের মতে, ভুট্টাজাত পণ্যের কারখানা হলে চাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবে। এতে জেলার ব্র্যান্ডিং ফসলের মান বৃদ্ধির পাশাপাশি জেলাকে তামাকমুক্তও করা সম্ভব। হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী এলাকার কৃষক আজিজার রহমান বলেন, আগে এখানে তামাক চাষ হতো। এতে মাটি উৎপাদন শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই জমির উর্বরতা শক্তি রক্ষায় এখন ভুট্টা চাষ করছি।
তিনি আরও বলেন, গত বছর ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করে প্রায় লাখ টাকা আয় হয়েছে। তাই এ বছরও ১১ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। আবহাওয়া ভাল থাকায় এখন পর্যন্ত ক্ষেত ভাল রয়েছে। ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দেড় লাখ টাকা আয়ের সম্ভবনা আছে।
একই উপজেলার মধ্য গড্ডিমারী এলাকার কৃষক আমিনুর রহমান বলেন, স্বল্প জমিতে অল্প খরচে অধিক মুনাফা পেতে ভুট্টার বিকল্প নেই। জমি তৈরি করে বীজ বপন, দুইবার নিড়ানী ও সেচ সার দিলেই ভুট্টা ঘরে তোলা যায়। এ এলাকার জমিতে প্রতি শতাংশে এক থেকে দেড় মণ ভুট্টা ফলানো যায়। প্রতি বিঘায় (৩০ শতাংশে) ৭/৮ হাজার টাকা খরচ করলে বিঘা প্রতি কমপক্ষে ১৫/১৬ হাজার টাকার ভুট্টা পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ভুট্টার পাতা গো-খাদ্য এবং শুকনো গাছ ও মোচা জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করে বিঘা প্রতি আরও ৩/৪ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
সিংগিমারী এলাকার কৃষক শাহ আলম বলেন, ভুট্টার মুনাফায় পুরো বছর সংসার খরচ চলে এ অঞ্চলের কৃষকদের। নানামুখী ব্যবহারে বাজারে ভুট্টার চাহিদা বেড়েছে। ভুট্টার পাতা, গাছ, মোচা কোনটাই পরিত্যক্ত পণ্য নয়। তাই অধিক মুনাফার অন্যতম ফসল এখন ভুট্টা। তার ৫ বিঘার জমির পুরো অংশে ভুট্টা চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৮০ হাজার টাকা লাভ হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গত বছর জেলায় ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদিত হয়। চলতি মৌসুমে ২৬ হাজার ৬০৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হলেও ভুট্টা চাষ হয়েছে ২৯ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে। যা প্রতিবছর বাড়ছেই।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিদু ভুষন রায় জানান, ফলন ও মুনাফা ভাল পাওয়ায় প্রতিবছর বাড়ছে ভুট্টার চাষ। এ বছরও ভাল ফলনের আশাবাদী কৃষকেরা। জেলায় ভুট্টাজাত পণ্য উৎপাদন কারখানা হলে ভুট্টার চাষ বাড়বে।
পিবিএ/এসআই/হক