পিবিএ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বিজয়নগরে উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে লিচু চাষ দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে বাজারে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। লাল টসটসে রসালো লিচুর পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা ও । বিক্রির জন্য চলছে হাক ডাক। বিকিকিনিতে যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় চাষি, ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। তবে এখানকার লিচু রসালো,মিষ্টি ও স্বাধে অতুলনীয় হওয়ায় জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে এর কদর ও রয়েছে বেশ ভাল।
এখন ভরা মৌসুম থাকায় লিচুতে মেতে উঠেছে পুরো এলাকা। আবহাওয়া অনুকুল আর পরিচর্যার কারনে এ মৌসুমে দুই উপজেলায় লিচুর ফলন ভাল হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে স্থানীয় বাজারে অন্ত:ত ৩০-৩৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে বলে চাষিরা জানায়।
বর্তমানে লিচুর ভরা মৌসুম হওয়ায় ওই উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রামের নারী পুরুষ সভাই লিচু বাগানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রামগুলোর বেশীভাগ অনাবাদি জমি ছেয়ে আছে সবুজ পাতার ফাকে ফাকে বিভিন্ন জাতের লিচুতে। নানা প্রতিকুলতা অপেক্ষা করে স্থানীয় কৃষকরা এমৌসুমে লিচু চাষে নিরভ বিল্পব ঘটিয়েছেন। এমন কোন বাড়ি নেই যার আঙ্গিনায় ৪-৮টি লিচু গাছ নেই। গাছে গাছে লাল লিচুতে রঙ্গিন হয়ে আছে পুরো এলাকা। গ্রাম জুড়ে এখন গাছ ভর্তি লিচু আর লিচু । থোকায় থোকায় বাহারি লিচুতে যেন সবার মন কাড়ছে। সেই সাথে লিচুর মৌ মৌ গন্ধ আর ছোট পাখিদের কিচির মিচির শব্দে এলাকা এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে। বাগানে বাগানে চলছে লিচু সংগ্রহের কাজ। গাছ থেকে পেড়ে বাজারজাত করতে মহিলাসহ সব বয়সের লোকজন কাজ করছেন। আবার কেউ কেউ দিন মজুর হিসাবেও কাজ করছেন। এদিকে লিচু নিয়ে গড়ে উঠেছে বিজয়নগরের আওলিয়া বাজার, হরেষপুর, মুকুন্দপুর, মিরাশানি, ছতুরপুর, বিষ্ণপুর, মামাল মোড়া, চম্পকনগর, সেজামুড়া,নোয়াগাঁওসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে লিচু বাগান রয়েছে। এসব বাগানে দেশী পাটনাই, আর বোম্বে জাতের চাষ করেছে চাষীরা। আওলিয়া বাজারে প্রতিদিন ভোর থেকেই শুরু হয় লিচু বিক্রি। ওইসব বাজারে প্রতিদিন অন্ত:ত ৩০-৩৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হয়।
লিচু অর্থনীতি উন্নয়নে যতেষ্ট ভূমিকা রাখছে।বাজারে লিচুর ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
এদিকে লিচু চাষে কম শ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় ধান জমি গুলো লিচু বাগানে রুপান্তরিত হচ্ছে বলে চাষিরা জানায়। এমৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ে কিছু ক্ষতি হলে ও ফলন ভালই হয়েছে। বাজারে আকার ভেধে লিচু প্রতি শ লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০টাকা।
এদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন সড়ক পথে ব্রাক্ষণবাড়িয়া,কুমিল্লা, আশুগঞ্জ, ভৈরব, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকাররা নিয়ে লিচু বিক্রি করছেন। তবে বাগান থেকে লিচু তোলার শেষ সময় পর্যন্ত প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে আর্থিক ভাবে অনেক লাবভান হবে বলে জানায় অনেক চাষি।
লিচু চাষী হিরণ মিয়া বলেন, দুটি বাগানে ৫০টি লিচু গাছ রয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ে কিছু ক্ষতি হলেও ফলন ভাল হয়েছে।
এপর্যন্ত ৭০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করা হয়। গাছে লিচুর যে অবস্থা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ১ লাখ টাকার উপর বিক্রি হবে বলে জানায়।
মুকুন্দপুরের সিরাজ মিয়া বলেন, তার ৩টি বাগান রয়েছে। প্রতিটি গাছে ৩-৪ হাজার লিচু ধরেছে। স্থানীয় বাজারে লিচুর যে অবস্থা আশা করছে যাবতীয় খরচ বাদে ৬০-৭০ হাজার টাকা আয় হবে।
মিজান মিয়া বলেন, ৪০টি গাছ লিচু গাছ রয়েছে। এমৌসুমে লিচুর ফলন অন্য বছরের চাইতে ভাল হয়েছে। লিচুর যে অবস্থা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে যাবতীয় খরচ বাদে আশা করছি প্রায় লাখ টাকা আয় হবে। এই জায়গায় যদি ধান কিংবা পাট করা হত তাহলে ১০হাজার টাকার বেশী আয় হত না।
পাইকার কালাম জানায়, ১০ বছর ধরে আওলিয়া বাজার থেকে লিচু কিনে তিনি শায়েস্তাগঞ্জে বিক্রি করেন। এ মৌসুমে তিনি প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ হাজার টাকা লিচু কিনে বাজারে বিক্রি করা হয়।
পাইকার মো. আশরাফ আলী বলেন,দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এখানকার লিচু কিনে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছি। এখানকার লিচু রসালো ও মিষ্টি হওয়ায় বিক্রিতেও লাভ হয় বেশী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: হিজির হোসেন বলেন, এ বছর উপজেলাতে ৩৭০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়। আবহাওয়া অনুকুল ও পরিচর্যার কারনে চলতি মৌসুমে উপজেলায় লিচু বাম্পার ফলন হয়েছে। তাছাড়া এখানকার মাটি লিচু চাষের জন্য খুবই ভাল।
পিবিএ/কাজী সুহিন/এএম