শপথ নিলেন গণফোরামের মোকাব্বির খান

শপথ
স্পিকার ড. শিরীন শারমিনের কাছে শপথ বাক্যপাঠ করেন মোকাব্বির খান

পিবিএ, ঢাকা: শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরামের মোকাব্বির খান।
আজ দুপুর ১২টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিনের কাছে শপথ বাক্যপাঠ করেন ণফোরামের এ নেতা।

স্পিকারের সংসদ কার্যালয়ে এ শপথ অনুষ্ঠান হয়। মোকাব্বির খানের শপথের বিষয়ে নিশ্চিত করেন স্পিকারের একান্ত সচিব এমএ কামাল বিল্লাহ।

এর আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়েছিলেন গণফোরামের আরেক নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। পরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

মোকাব্বির খানের দাবি- গণফোরামের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের অনুমতি নিয়েই তিনি শপথ নিয়েছেন।

শপথের বিষয়ে মোকাব্বির খান সোমবার বলেন, ‘আমি গণফোরামের সিদ্ধান্তেই শপথ নিচ্ছি। আমার পার্টি থেকে বলা হয়েছে শপথ নিতে।’

মোকাব্বির খানের শপথ নেয়ার বিষয়ে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু সোমবার বলেছিলেন, দলীয় ফোরামে মোকাব্বিরের শপথ নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আর গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত এখনও বহাল আছে। তিনি নিজ দায়িত্বে শপথ নিচ্ছেন।’

গণফোরামের প্যাডে স্পিকারকে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে সুব্রত চৌধুরী বলেন, মোকাব্বির খান গণফোরামের প্যাড ‘চুরি’ করে সেই কাগজে স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। মোকাব্বিরের বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরে বৈঠক করে তা জানানো হবে।

তবে এ বিষয়টি নিয়ে দলটিতে একটি তালগোল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সোমবার ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে তার মতিঝিলের চেম্বারে যান মোকাব্বির খান। উদ্দেশ্য শপথের আগে ড. কামালের আশীর্বাদ কামনা। সেখান থেকে বেরিয়ে মোকাব্বির খান জানান, ড. কামাল হোসেন ও গণফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শপথগ্রহণ করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের সিদ্ধান্ত মানেই হলো গণফোরামের সিদ্ধান্ত।’

অথচ ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান এবং শপথ ও সংসদে যোগ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ড. কামালসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ।এর আগে এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়ায় দলটির অপর নেতা সুলতান মনসুরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

এদিকে শপথ নেয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে থাকেন মোকাব্বির খান।নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে কেন শপথ নিতে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা পুরো নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছি। কিন্তু প্রতিকূল অবস্থা থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, সেটি কিন্তু প্রত্যাখ্যান করিনি। অর্থাৎ যেখানে জনগণ ভোট দিয়েছে, সেখানে তো আমাদের প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ নেই। যেখানে ভোট হয়েছে, সেটি তো গণরায়। ২৯২টি সংসদীয় আসনে ভোট হয়নি, সেটিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ ৮টি আসন দিয়ে তো পুরো বাংলাদেশকে বিচার করা যায় না। এ জন্য আমরা বলছি যে, নির্বাচনটিকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা যে নির্বাচনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছি, সেটি বলার জন্য সংসদে যাওয়া। এটি তো অলিগলিতে বললে হবে না। সংসদে গিয়ে বলতে হবে যে এই নির্বাচন হয়নি।’

শপথ নেয়ায় সুলতান মনসুরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তা হলে আপনাকে কেন গণফোরাম শপথের অনুমতি দেবে—জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেননি বলেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি দলীয় মতামত উপেক্ষা করে শপথ নিয়েছেন। এ জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর আমি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেই শপথ নিতে যাচ্ছি।

এদেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর লতিফুল বারী হামিম বলেন, মোকাব্বির ব্লাকমেইল করে গণফোরামের প্যাড ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, মোকাব্বির খান দলকে ব্লাকমেইল করে গণফোরামের প্যাড ব্যবহার করেছেন। যদি উনি শপথ নেন, তা হলে তার বিরুদ্ধে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এর আগে ৭ মার্চ শপথ নেয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ৬ মার্চ সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত পাল্টান মোকাব্বির খান। দলীয় চাপের মুখে তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তবে ওই দিন অর্থাৎ ৭ মার্চ শপথ নেন গণফোরামের আরেক সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...