শরণখোলায় ১১ বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি বেড়িবাঁধের

পিবিএ,বাগেরহাট: প্রবল ঘুর্নিঝড় ফনির ধেয়ে আসার খবরে আতঙ্কে ছিল উপকুলবাসী। বিশেষ করে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর পাড়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্কের শেষ ছিল না। ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর রাতে প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্নিঝড় সিডর বলেশ্বর পাড়ের মানুষকে আতঙ্কিত করে রেখে গেছে। নদী পাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ক্ষতি হতে পারে এমন আশঙ্খা ছিল। সেই আশঙ্কা কিছুটা হলেও সত্যি হয়েছে।

ফনির প্রভাবে জোয়ারের পানির চাপে বলেশ্বর নদীর পাড়ের বগী এলকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাধের তিনটি অংশ ভেঙ্গে এবং বাধেঁর উপর দিয়ে পানি উপচে গ্রামে ঢুকে পড়ে। বগী, দক্ষিণ সাউথখালী ও চালিতাবুনিয়া গ্রামের বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হয়। তিন শতাধিক বাড়ি ঘরের পানি উঠে যায়। ওই সব গ্রামবাসীকে হাটু সমান পানি অতিক্রম করে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হয়। ফনির প্রভাব কেটে যাওয়ার পর আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া উপকুলবাসী বাড়ি ফিরে গেলেও ওই এলাকার অনেককে কয়েকদিন ধরে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকতে হয়েছে।

 শরণখোলায় ১১ বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি বেড়িবাঁধের
শরণখোলায় ১১ বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি বেড়িবাঁধের

সরেজমীনে গিয়ে দেখা গেছে বগী এলাকায় বাধের যে অংশ ভেঙ্গে গেছে সেখানে মেরামতের কাজ চলছে। বাঁশ দিয়ে পাইলিং করে বস্তা ভর্তি করে মাটি ফেলা হচ্ছে। কিছু দূর এগোতে বগীর সাত ঘর এলকায় এক্সাভেটরের সাহায্যে মাটি তুলে বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে। আগেও কয়েক দফা মেরামত করা হয়েছে। অস্থায়ীভাবে মেরামত করার এই বাঁধ কতদিন টিকে থাকবে এমন প্রশ্ন নদী পাড়ের মানুষের।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৬ সালে জানুয়ারীতে বলেশ্বর পাড়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩১/১ পোল্ডারের অধীনে শরণখোলা থেকে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা পর্যন্ত নদীপাড়ে ৬২ কি.মি. মজবুত ও টেকসই বেড়িবাধ নির্মাণ করা হবে। ৫-৬ ফুট উচ্চতার বেড়িবাধে উপরের অংশে প্রসস্থতা থাকবে সাড়ে চার মিটার।

২০১৯ সালের জানুয়ারীতে বাঁধ নির্মাণ করার কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। এ কারণে বাঁধ নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। চায়নার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘দ্যা ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো অব হ্যানান ওয়াটার কনসাভেন্সি এই কাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে। বলেশ্বর পাড়ের দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের মজিবুর রহমান জানান, ফনির প্রভাবে তার বাড়ির সামনে তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে তার বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে। ঘরে চুলা জ্বালাতে না পারায় রান্না বন্ধ ছিল এবং গরু ছাগল নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় দিন পাড় করে।

বগী ও দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের মোঃ জামাল জোমাদ্দার, শফিজ খান, নূর মোহাম্মদ, আব্দুল জলিল খলিফা ও সমশের আলী জানান, দফায় দফায় ভাঙ্গনের কারণে বগী এলাকার মানুষের শতকরা ৭৫% জমি বলেশ্বর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ জন্য তারা দ্রুত নদী শাসন করে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন। বাগেরহাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাহিউদজ্জামান খান বলেন, বগী এলাকায় পুরানো বাঁধ এরই মধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে।

উচ্চ পানির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। এজন্য পেছন থেকে বাঁধ তৈরি করতে হবে। এখন সেখানে অস্থায়ীভাবে রিং বাধ দিয়ে ভাঙ্গা বাধ মেরামত করা হচ্ছে। টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প ফেস-১ (সিইআইপি-১) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম জানান, ৬২ কি.মি. মজবুত ও টেকসই বেড়িবাধ নির্মাণ কাজ চলছে। শরণখোলার বগী ও মোড়েলগঞ্জের আমতলী এলাকায় ৩ কি.মি. নদী শাসনের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারনে নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করা যায়নি। বগী এলকায় যে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে তা জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করা হচ্ছে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমারা বিশ্বাস জানান, বগী এলাকার বাঁধ নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলছে। জেলা ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভা শিঘ্রই করা হবে। ওই সভা করার পর নোটিশ জারী করা হবে। নোটিশ দেওয়ার পর যদি কারও আপত্তি থাকে তাহলে সে বিষয়ে শুনানী করে নিষ্পত্তি করা হবে। এরপর দ্রুত জমি অধিগ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

পিবিএ/এসএইচ/আরআই

আরও পড়ুন...