শাজাহান খানের পাঁচ বছরে ছয় বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট

পিবিএ ডেস্ক: নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী। কৃষি-অকৃষিজমিসহ তার নিজ নামে রয়েছে ৭টি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট। পিছিয়ে নেই স্ত্রীও। তার নামেও রয়েছে অগাধ সম্পদ ও অ্যাপার্টমেন্ট। ব্যবসা খাত থেকেও কোটি কোটি টাকা আয় করেন এই নেতা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

শাজাহান খান মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস। বর্তমানে ফৌজদারি মামলা না থাকলেও অতীতে ৩টি মামলা ছিল। শাজাহান খান দুটি লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেন।

২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় ব্যবসা থেকে শাজাহান খানের কোনো আয় ছিল না। কিন্তু এবারের হলফনামায় ব্যবসা থেকে তার আয়ের পরিমাণ ৩ কোটি ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৫০ টাকা। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান ভাড়া থেকে ২০১৩ সালের হলফনামায় আয় না থাকলেও এবারের হলফনামায় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪৩৯ টাকা। ২০১৩ সালের হলফনামায় স্ত্রী সৈয়দ রোকেয়া বেগমের চাকরি ও ব্যবসায় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ছেলে মো. আসিবুর রহমান খানের ব্যবসায় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু এবারের হলফনামায় স্ত্রী ও সন্তানের ব্যবসা ও চাকরির ক্ষেত্রে কোনো আয় দেখাননি।

শাজাহান খানের কাছে নগদ রয়েছে ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৪১৩ টাকা। স্ত্রীর কাছে এর পরিমাণ ২৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫৬৪ টাকা। যদিও ২০১৩ সালের হলফনামায় স্ত্রী ও নিজের কাছে নগদ কোনো টাকা ছিল না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শাজাহান খানের জমা রয়েছে ১ কোটি ২৩ লাখ ৫২ হাজার ৩১১ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ২০ লাখ ৯১ হাজার ৪৩৬ টাকা। ২০১৩ সালের হলফনামায় নিজের নামে কেবল ১৮ লাখ টাকা ছিল। এ ছাড়া তার নামে রয়েছে ২টি জিপ ও একটি মাইক্রোবাস। এগুলোর মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

তবে ২০১৩ সালের হলফনামায় ছিল কেবল একটি জিপ। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে শাজাহান খান নিজের নামে ২০ তোলা সোনা দেখিয়েছেন। এগুলোর মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৮০ হাজার টাকা। টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, ফ্যান, আয়রন, ওয়াশিং মেশিন বাবদ দেখানো হয়েছে ১ লাখ টাকা। আসবাব দেখিয়েছেন খাট, সোফা, কাঠের আলমারি, স্টিলের আলমারি, ড্রেসিং ও ডাইনিং টেবিল, যার মূল্য ১ লাখ টাকা। এ ছাড়া নৌমন্ত্রীর রয়েছে ১টি বন্দুক ও একটি পিস্তল। এগুলোর মূল্য দেখিয়েছেন ৩ লাখ ২ হাজার টাকা।

হলফনামায় অস্থাবর সম্পদ হিসেবে শাজাহান খানের একক নামে রয়েছে ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৬২ হাজার ৯৩৩ টাকার জায়গা-জমি। স্ত্রীর নামে রয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৩ হাজার ৪০৯ টাকা। যৌথ মালিকানা সম্পদের মধ্যে শাজাহান খানের রয়েছে ২ কোটি ৭৫ লাখ ২১ হাজার ৫৩২ টাকা টাকার জমি। কৃষি স্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজ নামে ১ একর ৫৫ শতাংশ কৃষিজমি আছে। এগুলোর মূল্য ৩৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া ১২৫ গৈদী মৌজায় ৪ শতাংশ, মূল্য ৬ লাখ ৭৩ হাজার ২০০ টাকা, ৩৬ নম্বর হাউসদী, পাতিলাদী ও ৩৫ নম্বর মাদারদী ৬৩ শতাংশ ২২ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে।

অকৃষিজমি ও অর্জনকালীন আর্থিক মূল্য হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন নিজ নামে শরীয়তপুরে ৬৪ শতাংশ, যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৩ টাকার সম্পদ। এ ছাড়া ২৮ দিয়াপাড়ায় ২.০৪ শতাংশ, মূল্য ৮৬ হাজার ৯০০ টাকা; ৬৯ নম্বর রাজৈর ০.৬৫ শতাংশের মূল্য ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা; গঙ্গাবরদীতে ৫ শতাংশের মূল্য ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা; দিয়াপাড়াতে ৩ শতাংশ জমির মূল্য ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৬০ নম্বর সাতপাড়া, ডুমুরিয়ায় ৬০ শতাংশের ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের জমি রয়েছে তার। এ ছাড়া শিরখাড়াতে ৪.৪৩ শতাংশ জমিদানপ্রাপ্ত বলে উল্লেখ করেছেন।

অকৃষিজমির মধ্যে স্ত্রীর নামে রয়েছে ১১০ নম্বর হরিকুমারিয়া ২৪ শতাংশ জমির ১/২ অংশ, অর্জনকালীন সময়ে যার মূল্য ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। মালিগ্রাম মৌজায় ১৭ শতাংশ জমি। এর মূল্য ৬৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে রাউজক পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট, মূল্য ২৩ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা। চুনকুটিয়ায় রয়েছে ১১৩৪ অযুতাংশে অর্ধেক জমি। এর মূল্য দেখানো হয়েছে ৫৫ লাখ টাকা। ১২৫ গৈদী মৌজায় রয়েছে ৪৫.৫০ শতাংশের প্রায় ৬০ ভাগ জমি। এর মূল্য ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চুনকুটিয়ায় ১৪৮৬ অযুতাংশের অর্ধেক জায়গাও স্ত্রীর নামে, মূল্য ধরা হয়েছে ৬৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাড্ডা মৌজায় ৫.৭৫ শতাংশের ১.৪৩৭৫ শতাংশ জমি হেবা প্রাপ্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাড্ডা মৌজায় ০২০৮.৫০ অযুতাংশ জমির অর্ধেকের মালিক, মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর গজারিয়া মৌজায় ২ লাখ ৭৮ হাজার ও ৮৪ হাজার ৬৯ টাকা মূল্যের জমি রয়েছে তার স্ত্রীর নামে।

শাজাহান খানের যৌথ মালিকানায় রয়েছে শকুনী মৌজার ১২.০৫ শতাংশ জমি ও স্থাপনার ৪৫ শতাংশ মালিকানা বাবদ ১ কোটি ৫২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। ১১০ হরিকুমারিয়ায় ৫.৫ শতাংশ জমির ২০ ভাগের ৯ অংশের মালিকানা বাবদ ২৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের সম্পদ রয়েছে। ১০৬ মহিষেরচরে ১৫ শতাংশ জায়গার অর্ধেক মালিকানা বাবদ রয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার সম্পদ। একই দাগে ৪ ও ৮ শতাংশের অর্ধেক মালিকানা বাবদ যথাক্রমে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে।

শাজাহান খানের দালানকোঠার মধ্যে রয়েছে নির্মাণাধীন ভবন, যার মূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ৬৯ নম্বর রাজৈর ৯ শতাংশে নির্মাণাধীন বাড়ি, মূল্য ধরা হয়েছে ৬৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। শাজাহান খানের নামে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে আরও ৫টি। এর মধ্যে ১১১ শকুনী মৌজায় ২.৪৫ শতাংশে যৌথ অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ৮৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। লালমাটিয়া হাউজিংয়ে ১৫.২৪ বর্গমিটারের ফ্ল্যাট হেবাপ্রাপ্তি বলে উল্লেখ করেছেন। ৬৯ নম্বর রাজৈরে রয়েছে ৫.৭৩ শতাংশের বাড়ি, দাম ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ৬৯ নম্বর রাজৈরে রয়েছে ৩ শতাংশের আরও একটি বাড়ি, মূল্য দেখানো হয়েছে ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।

স্ত্রীর নামে রয়েছে মেরাদিয়া মৌজায় ৮২.৫০ অযুতাংশের জমিতে ১৫৭৬ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, যার মূল্য বাবদ দেখানো হয়েছে ২০ লাখ ৭০ হাজার ৭৫০ টাকা। স্ত্রীর সার্বিক প্রিন্টিং প্রেসের ৪০ শতাংশ মালিকানা বাবদ ৮ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। তবে ২০১৩ সালের হলফনামায় নিজ নামে ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকার আবাসিক ভবনের কথা উল্লেখ করা হয়। সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...