শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ৫ পদক্ষেপ

শান্তি ও সমৃদ্ধি নাগরিক জীবনের পরম প্রত্যাশিত বস্তু। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কাঠামো আবর্তিত হয় এই কাঙ্ক্ষিত বস্তুকে ঘিরেই। কিন্তু প্রতিদিনের সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়, সমাজের সর্বত্রই অশান্তি আর উৎকণ্ঠার হতাশাজনক চিত্র। খুন-ধর্ষণ, মারামারি-হানাহানি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অসহায়দের ওপর অত্যাচার আর জুলুম-নির্যাতন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিন্তু এর শেষ কোথায়? এর প্রতিকারই বা কী? সামাজিক এই অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজন ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের সমন্বিত পদক্ষেপ। আজকের লেখায় শান্তিপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো।

শান্তি প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিত উদ্যোগ

সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে স্থিতিশীলতা আনতে প্রথম পদক্ষেপ হলো—ব্যক্তিগত অথবা সম্মিলিত উদ্যোগে ঐক্য, শান্তি ও সমাজসেবামূলক কাজে এগিয়ে আসা। কারণ, ঐক্য ও সেবামূলক কাজ ছাড়া সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

তাই রাসুল (সা.) সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নবুয়তপ্রাপ্তির আগেই তিনি ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি শান্তিসংঘ গঠন করে অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।

আর শান্তিসংঘের অঙ্গীকার বাণী ছিল আর্তের সেবা, অত্যাচারীকে প্রতিরোধ, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা এবং গোত্রীয় সমপ্রীতি বজায় রাখাসহ নানা কর্মসূচি। মানুষের কল্যাণে তাঁর গড়া স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সাংগঠনিক রীতিতে প্রতিষ্ঠিত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।

দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ

দুর্নীতি দমনে মহানবী (সা.) শান্তি ও সুনীতির যে বাণী উচ্চারণ করেছিলেন, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তা বাস্তবায়ন করতে পারলেই দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশৃঙ্খল রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো অন্যায় (পাপাচার, দুর্নীতি) হতে দেখে, সে যেন সম্ভব হলে তা হাত দ্বারা রুখে দেয়। আর এটা সম্ভব না হলে প্রতিবাদী ভাষা দিয়ে তা প্রতিহত করে। আর তা-ও না পারলে সে যেন ওই অপকর্মকে হৃদয় দ্বারা বন্ধ করার পরিকল্পনা করে (মনে মনে ঘৃণা করে), এটি দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৭২)

সংবাদ প্রচারে যাচাই-বাছাই

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মানুষ অসংখ্য মিথ্যা সংবাদ দ্বারা বিভ্রান্ত হয়। এর দ্বারা সমাজে অশান্তি নেমে আসে। তাই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে সংবাদ প্রচারের আগে তা যাচাই বাছাই করার তাগিদ দিয়েছেন। কোরআনে মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের কাছে যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই করো। অজ্ঞতাবশত কোনো গোষ্ঠীকে আক্রান্ত করার আগেই, অন্যথায় তোমরা কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ৬)

ধর্মীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি

মানবজীবনে শিক্ষার প্রয়োজন অপরিহার্য। বিশেষ করে দ্বিনি শিক্ষা একজন মানুষকে সৎ, আদর্শ, নৈতিকতা, পাপাচার, অনাচার ও অযাচার থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপর (দ্বিনি) জ্ঞানার্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৪)

হাদিসে দ্বিনি ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হলেও শুদ্ধ নিয়তে জাগতিক শিক্ষা গ্রহণেও ইসলাম উৎসাহ দেয়।

পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহযোগিতা

পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ, ভালোবাসা ও একে অপরের ভালো কাজে সহযোগিতা করার মাধ্যমে সামাজিক শান্তি ও সমপ্রীতি বজায় থাকে। ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ মানুষকে প্রশান্তি দেয়। এটি থাকলে মানুষ একে অপরের কল্যাণকামী হয়ে ওঠে। এর সুফল পরকালেও মানুষ ভোগ করতে থাকবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার জন্য যারা একে অন্যকে ভালোবেসেছিলে তারা কোথায়? আমি আজ তাদের আমার ছায়ায় আশ্রয় দেব। আজকের এই দিনে আমার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া নেই।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৬)

মহান আল্লাহ আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এই পদক্ষেপগুলো যথাযথ গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরও পড়ুন...