আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ৮টার দিকে এ ঘোষণা দেন তারা। এ ঘোষণার মধ্যদিয়ে দীর্ঘ একমাস পর আন্দোলন থেকে সরে এলেন শিক্ষার্থীরা।
গত ১৩ জানুয়ারি থেকে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা চালায় পুলিশ। ওই ঘটনায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
উপাচার্যের দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা এলো।
এর আগে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) উপাচার্য কার্যালয়ে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনার পর ওই ঘটনার জন্য উপাচার্যকে দুঃখ প্রকাশ করার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এছাড়া প্রায় ২৬ দিন পর বৈঠক ঘিরে এদিন নিজ বাসভবন থেকে বের হন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। একইদিন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল।
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন করে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে সুনির্দিষ্ট আটটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
যেভাবে আন্দোলন শুরু
ঘটনার সূত্রপাত শাবিপ্রবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল নিয়ে। গত বছরের ২৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল খুলে দেওয়া হয়। প্রায় ১৯ মাস পর ওইদিন থেকে হলে ফিরতে শুরু করেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। ফেরার পর হলে তারা বিভিন্ন সংস্কার দেখতে পান। পাশাপাশি বেশকিছু নতুন নিয়মনীতি ও সমস্যার সম্মুখীন হন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের আবাসিক ছাত্রীরা।
এরপর থেকে হলের এসব নিয়মনীতি, সিট বণ্টন, খাবার সমস্যা, ওয়াইফাই সমস্যা, পানির সমস্যা, বাইরের হোস্টেলের ভাড়া নিয়ে দিন দিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হল প্রভোস্ট বডির দূরত্ব বাড়তে থাকে। ছাত্রীদের অভিযোগ, এসব বিষয়ে অভিযোগ করে প্রভোস্ট বডির ‘অসদাচরণের’ শিকার হয়েছেন তারা।
এসব কারণে গত ১৩ জানুয়ারি থেকে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর ১৬ জানুয়ারি বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।
এরপর শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করে এতদিন আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) টানা সাতদিনের অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।