শাহজালালে প্রবাসীদের হয়রানি যেন থামছেই না

পিবিএ,ঢাকা: বছরের পর বছর সংবাদ প্রকাশ, মন্ত্রীপরিষদের সিদ্বান্ত, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নানামুখী তৎপরতায়সহ নানা কর্মকান্ডেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বন্ধ হচ্ছে না যাত্রীদের ভোগান্তি। বিমানবন্দরে আসা-যাওয়ার পথে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দেশি-বিদেশি যাত্রীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশের শ্রমবাজারে সুনাম ও দক্ষতার সাথে হাড়ভাঙা পরিশ্রমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছেন প্রবাসীরা। সেখানে ইমিগ্রেশনের হাতে তাদের নিয়মিত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এ বিষয়টি দেখার জন্য কেউ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বিমানবন্দরে লাগেজ হারানো, লাগেজ কেটে মালামাল চুরি, দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহারের অবমাননাকর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ভ্রমণকারীরা।

জানা যায়, বিদেশ থেকে ফেরার সময় দেশে প্রিয়জনের জন্য লাগেজ ভর্তি নানা ধরনের মালামাল নিয়ে আসেন প্রবাসীরা। অথচ লাগেজ পাওয়ার ভোগান্তির কারণে দীর্ঘদিন পর দেশে আসার আনন্দ অনেক সময় ম্লান হয়ে যায়। প্লেন থেকে নামার কয়েক ঘণ্টা পরও মেলে না লাগেজ। মাঝে মধ্যে মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে অনেক সময় অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাননি ভুক্তভোগী যাত্রীরা।

সাম্প্রতিক সময়ে সাউথ আফ্রিকা থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সে করে আসা ঢাকা এয়ারপোর্টে আবদুল হক(পাসপোর্ট নম্বর BN 0219054)নামে এক প্রবাসীর দুইটি লাগেজ কেটে মালামাল নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। খোয়া যাওয়া মালামাল ফিরে পেতে বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট শাখায় অভিযোগ করেও কার্যকর কোন প্রতিকার পাননি বলে পিবিএ(প্রেসবাংলা এজেন্সি) এর কাছে অভিযোগ করেন। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে বুধবার(২৪ জুলাই) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে লাগেজ সংগ্রহকালে তিনি এঘটনা দেখতে পান।

আবদুল হক পিবিএকে জানান, সাউথ আফ্রিকার এয়ারপোর্টে দুইটি লাগেজ বুকিং দিয়ে প্লেনে উঠেন। এয়ারপোর্টে নেমে দেখেন তার ব্যাগের তালা ভাঙা আরেকটি কাটা। ব্যাগ থেকে বেশির ভাগ মালামাল নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে অভিযোগ করলেও তারা প্রথমে কোন গুরুত্ব দেয়নি, পরে তারা নামে মাত্র একটি অভিযোগ গ্রহণ করেছে।

আবদুল হক আক্ষেপ করে বলেন, আমরা প্রবাসীরা দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার করি না, বিদেশ থেকে দেশে আমরা টাকা আনি। তাহলে কেন এয়ারপোর্টে আমাদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। প্রবাসীরা বিদেশ থেকে টাকা এনে দেশের উপকার করে। প্রবাসীদের টাকায় দেশের উন্নয়ন হয়। তাহলে কেন প্রবাসীকে এত অবহেলা করা হয়। এজন্য আমি দেশবাসী কছে বিচার চাই।

ভুক্তভোগীরা আরো বলছেন, গত ২০ বছরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী ও বিমান ওঠা-নামার সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি যাত্রীসেবার মান। আগে লাগেজ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হতো। এখনো সেই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মেলেনি যাত্রীদের। এখন নতুন করে যাত্রীদের ভোগান্তি আরো বেড়েছে। বিদেশগামী যাত্রীদের বিমানবন্দরের দোতলায় প্রবেশপথে দীর্ঘ সময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। নিরাপত্তা তল্লাশির নামে যাত্রীদের এ ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন।

যাত্রীদের হয়রানিমুক্ত রাখা যাদের দায়িত্ব উল্টো তারাই হয়রানির কাজে মেতে উঠেছেন। বিমানবন্দরে প্রবেশপথের মোড় থেকেই শুরু হয় যাত্রী হয়রানি। এরপর কনকর্স হল, মূল ভবন, ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টমস পোস্টসহ ঘাটে ঘাটে চলে হয়রানির মচ্ছব।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, আগে দীর্ঘপথ জার্নি করে বিদেশ থেকে আসার পর লাগেজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এখন এর সাথে আরো নতুন উপসর্গ যুক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বিমানবন্দরের দোতলায় দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সাথে কথা বলে এসব অভিযোগ পাওয়া যায়।
তারা বলছেন, শুধু লাগেজ পেতে এবং প্রবেশপথেই নয়, ইমিগ্রেশনেও যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কিছু কর্মকর্তার নির্দয় আচরণে সর্বস্তরের যাত্রীরা দিশাহারা। ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিদেশে কর্মরত বৈধ শ্রমিকরাও চরম হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। স্বল্পশিক্ষিত যাত্রীদের নানা প্রশ্ন করে তাদের পাসপোর্ট আটকে রেখে টাকা আদায় যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।

যাত্রীরা অভিযোগ করে জানান, বিমানবন্দরের বাইরের তুলনায় ভেতরের ঘাটে ঘাটে হয়রানি-ভোগান্তি কয়েক গুণ বেশি। যাত্রীসেবায় নিয়োজিত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা, বিমানবন্দর পুলিশ ও কাস্টমসসহ বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বরতদের একটা বড় অংশই নিয়মিত যাত্রী হয়রানি করছেন। বিমানবন্দর অভ্যন্তরের অন্তত ১০টি ধাপে যাত্রীদের কাছ থেকে চাহিদামাফিক টাকা হাতানোর ধান্ধায় নানা রকম হয়রানি চালানো হয়। যাত্রীরা বিদেশ গমনের সময় বহির্গমন লাউঞ্জের প্রবেশমুখে কর্তব্যরত একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর খপ্পরে পড়েন। সেখানে টার্গেটকৃত যাত্রীদের পাসপোর্ট, টিকিট ইত্যাদি চেক করার সময় জানানো হয়, তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে। কাজেই তাকে দেশ ছেড়ে যেতে দেয়া সম্ভব নয়। বিমানে ওঠার চূড়ান্ত মুহূর্তে এমন অভিযোগের কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। দিশাহারা যাত্রী কাকুতি-মিনতি করতে থাকেন। এ অবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃৃপক্ষকে ম্যানেজ করার নামে যাত্রীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্মকর্তদের মুখে অন্যসুর। তাদের দাবি, বিমানবন্দরে লাগেজ হারানো বা লাগেজ কেটে মালামাল নিয়ে যাওয়ার ঘটনা এখন নেই বললেই চলে। যাত্রীদের হয়রানির অন্য যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো আমরা গুরুত্বের সাথে নিয়ে কমিয়ে আনতে কাজ করছি। আমাদের মন্ত্রীও বিমানবন্দরের সার্বিক বিষয়গুলো অবহিত রয়েছেন। যাত্রীসেবার মান আরো কিভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে মন্ত্রী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) মোকাব্বির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, কখন কোন উড়োজাহাজে কী পরিমাণে লাগেজ আসে আমরা তদারকি করি। এরপরও জনবল ও অবকাঠামোগত অসুবিধার কারণে কিছু সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে কিছু করারও থাকে না। ফলে লাগেজ পেতে দেরি হয় যাত্রীদের। লোকবল ও কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বাড়ানোর উদ্যোগ রয়েছে বলে জানান তিনি। মোকাব্বির হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি সবসময়ই মনিটারিং করছি। বড় এয়ার ক্র্যাফটের লাগেজ খালাস হতে ৩০ থেকে ৭০ মিনিট সময় লাগে। কারণ এসব এয়ার ক্র্যাফটে ২২ থেকে ২৮টি কন্টেইনার থাকে। ট্রানজিটের টেকনিক্যাল সমস্যাও আছে।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...