পিবিএ,ঢাকা: পাবনা জেলার সদর থানার শালগাড়ীয়া প্লাস্টিক মোড় এলাকার বহুল আলোচিত শাজাহান অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের মামলার রহস্য উদঘাটন ও মূল পরিকল্পনাকারী এবং হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই, পাবনা। মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী ১। মোছাঃ যুথী আক্তার ওরফে আদুরী (২৮), স্বামী-মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ২। মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), পিতা-মৃত ইউসুফ আলী, উভয় সাং-শালগাড়ীয়া শাপলা প্লাস্টিক মোড়, থানা-পাবনা সদর, স্থায়ী সাং-বনকোলা ঈদগাহ মাঠ, থানা-সুজানগর, জেলা-পাবনাদেরকে পলাতক অবস্থায় ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন উত্তর গাজীর চট এলাকা হতে গত ২৪/০৫/২০২১ খ্রিঃ রাত অনুমান ১২.১০ ঘটিকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ৩১/০৪/২০২১ খ্রিঃ তারিখে সন্ধ্যা অুনমান ১৯.৩০ ঘটিকায় শাহজাহান আলী (৪০), পিতা-মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, সাং-শালগাড়ীয়া গোরস্থান রোড, থানা ও জেলা-পাবনা পাবনা শহরে শালগাড়ীয়া প্লাস্টিক মোড় থেকে নিখোঁজ হয়। এ বিষয়ে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন গত ০১/০৪/২০২১ খ্রিঃ পাবনা সদর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করে। এরপর গত ০৫/০৪/২০২১ খ্রিঃ দুপুর অনুমান ১৪.৩০ ঘটিকায় বস্তাবন্দি একটি লাশ আটঘরিয়া থানাধীন গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মোঃ কাসেম, পিতা-কানু মন্ডল এর বসতবাড়ীর টয়লেটের সেফটি ট্যাংকের ভিতর হতে উদ্ধার করে থানা পুলিশ। সংবাদ পেয়ে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন উক্ত লাশ শাহজাহানের বলে দাবী করে। এ বিষয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিকটিমের ভাই মোঃ আব্দুল গফুর এজাহার দায়ের করলে পাবনা সদর থানায় হত্যা মামলা নং ১৫, তারিখ-০৭/০৪/২০২১ খ্রিঃ, ধারা-৩৬৪/৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
মামলাটি প্রথমে পাবনা সদর থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। গত ১০/০৪/২০২১ খ্রিঃ পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার নির্দেশে উক্ত মামলাটি পিবিআই, পাবনা তদন্ত শুরু করে। ডিআইজি পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই, পাবনা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব জনাব মোঃ ফজলে এলাহী এর সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সবুজ আলী মামলাটি তদন্ত করেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার পিবিআই, পাবনা জনাব মোঃ ফজলে এলাহী জানান, এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। পরকিয়ার জের ধরে মামলার ভিকটিম শাহজাহান আলী (৪০), পিতা-মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, সাং-শালগাড়ীয়া গোরস্থান রোড, থানা ও জেলা-পাবনার সাথে মোছাঃ যুথী আক্তার @ আদুরী (২৮) এর সম্পর্কের টানাপোড়ন চলতে থাকে। বিজ্ঞ আদালতে প্রেরিত আসামী মোছাঃ যুথী আক্তার আদুরী তার পরিবারসহ যে বাসায় ভাড়া থাকত তার মালিক চট্টগ্রামে বসবাস করে। উক্ত বাসার ভাড়া উঠানোর দায়িত্ব ছিল ভিকটিম শাহাজাহানের উপর। তাদের বাসাও ছিল পাশাপাশি স্থানে। তারা মোবাইল ফোনে মাঝেমধ্যে কথা বলতে থাকার কারণে এক পর্যায়ে পরকিয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। শাহজাহান ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত ছিল। ভিকটিম শাহজাহান যুথীকে স্ত্রীর মত ব্যবহার করতে চাইতো। কিন্তু যুথী এক পর্যায়ে শাহাজাহানের প্রতি প্রচন্ড অতিষ্ট ও বিরক্ত হয়ে সকল ঘটনা তার পরিবারকে খুলে বলে। তখন যুথীর স¦ামী ও নিজস্ব লোকজন শাহজাহানকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং যুথীর স্বামী জাহাঙ্গীর আলম শাহজাহানকে হত্যার জন্য ঘুমের ঔষধ কিনে যুথীকে দেয়। যুথীর ভিকটিম শাহজাহানকে হত্যার উদ্দেশ্য শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রলোভন দেখিয়ে ঘটনার দিন গত ৩১/০৩/২০২১ খ্রিঃ সন্ধ্যা অনুমান ১৯.৩০ ঘটিকায় পূর্ব নীল নকশা অনুযায়ী অন্যান্য আসামীদের সাথে পরষ্পর যোগসাজস করে সু-কৌশলে আটঘরিয়া থানাধীন গঙ্গারামপুর গ্রামস্থ তাদের এক নিকট আত্মীয়ের বাড়ীতে হত্যার উদ্দেশ্য অপহরণ করে নিয়ে যায়। উক্ত বাড়ীতে যুথী, জাহাঙ্গীরসহ অন্যান্য আসামীগণ পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক খাবারের মধ্যে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে ভিকটিম শাহজাহানকে খাওয়ায়। ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত খাবার খেয়ে ভিকটিম শাহজাহান আলী ঘুমিয়ে পড়লে যুথী তার স্বামী জাহাঙ্গীর এবং অন্যান্য আসামীগণ ভিকটিম শাহজাহানকে অচেতন অবস্থায় হাত-পা বেধে গলার রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। একপর্যায়ে তারা উক্ত লাশ গুম করার উদ্দেশ্য বস্তাবন্দি করে আটঘরিয়া থানাধীন গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মোঃ কাসেম, পিতা-কানু মন্ডল এর বসতবাড়ীর টয়লেটের সেফটি ট্যাংকের ভিতরে ফেলে দিয়ে খড়-কুটা দিয়ে ঢেকে রাখে। পরবর্তিতে যুথী ও তার স্বামী জাহাঙ্গীর ঢাকা পালিয়ে যায় বলে জানান।
উল্লেখ্য যে, অত্র মামলার ঘটনায় ইতিপূর্বে গত ১২/০৪/২০২১ খ্রিঃ আসামী মোঃ ইব্রাহীম প্রাংকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে সেও নিজেকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। গ্রেফাতারকৃত আসামীদ্বয়কে গত ২৪/০৪/২০২১ খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামী যুথী আক্তার ওরফে আদুরী ও তার স্বামী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম শাহাজাহানকে সু-কৌশলে অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুম করার ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে এবং অন্যান্য আসামীদের নাম প্রকাশ করেছে।
পিবিএ/জেডএইচ