ইমরান হোসাইন, কুবি: বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মানেই শিক্ষার্থীদের জন্য ভালােবাসা ও আবেগের একটি জায়গা। অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল মজা উপভােগ করা যায়না। তাই যত দ্রুত সম্ভব ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার তীব্র বাসনা কাজ করতো শিক্ষার্থীদের মাঝে। অবশেষে মহামারী পরিস্থিতি সামলে দীর্ঘ ১৮ মাস পর ২ নভেম্বর খুলেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ক্যাম্পাসের প্রাণ শিক্ষার্থীরা যেন মুক্তপাখি হতে পেরেছে। বন্দি জীবনের হাঁসফাঁস কাটিয়ে আবারো ফিরেছে প্রাণ প্রিয় ক্যাম্পাসে।
পড়াশােনার হাজারাে ব্যস্ততার সঙ্গে প্যারাময় পরীক্ষার চাপ মাঝে মাঝে বিষিয়ে তুলত শিক্ষার্থীদের। তারপরও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে চায়ের আড্ডা, কখনো গিটারের ছন্দে হারিয়ে যাওয়া, খেলাধুলা, হৈ-হুলােড়ে, সময়টা কেটে যেত। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস জীবনটা ভালােই চলছিল। কিন্তু মহামারী করােনা জীবন থেকে সেই আনন্দময় ব্যস্ততা কেড়ে নিয়ে উপহার দিয়েছিল ঘরবন্দি বােরিং জীবন। শিক্ষার্থীদের মন সবসময় পুরনাে সেই দিনগুলােতে ফেরার অপেক্ষায় থাকত। দীর্ঘ দিন পর আবার সেই ক্যাম্পাস জীবনে ফিরতে পেরে শিক্ষার্থীদের অনেক প্রাণবন্ত মনে হচ্ছে, মনে হয় একরাশ আনন্দের আলাে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ক্যাম্পাসে।
শহীদ মিনারের রাতের আড্ডা, বিকালে খোলা ক্যাম্পাসে পাখি হয়ে উড়ে বেড়ানো কিংবা রাতে ভিসি টঙে গিটারের সুরে চায়ে মুখ ভেজানো সবই মেতে ওঠেছে আগের মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, বাবুই চত্বর, সানসেট বেলি, মুক্ত মঞ্চ, গোলচত্বরসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি ও উল্লাস করতে দেখা গেছে। সবাই একে অপরের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়ে ব্যস্ত। কেউ বন্ধুর সঙ্গে বসে চা খাচ্ছেন আবার বন্ধুরা মিলে গানের আসর বসিয়েছেন টঙ দোকানে। সবমিলিয়ে ক্যাম্পাসে যেন এক উতসবমুখর বিরাজ করছে।
দীর্ঘ দিন পর ক্যাম্পাসে ফিরার অনুভূতির কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজনীন নওশী বলেন, অনেক দিন পর ক্লাসরুমে ফিরতে পেরে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। করোনার দরুন দীর্ঘ সময় বাসায় অবস্থানের ফলে প্রায় যান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আর ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রতি আসক্তি হয়ে পড়েছিলাম। পড়াশোনার ছিলো বেহাল অবস্থা। এখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়াতে আমরা সেই আগের প্রাণবন্ত মুহূর্তগুলোতে ফিরে পেয়েছি। আশা করি এখন পড়ালেখা ভালোভাবে চালিয়ে নিতে সক্ষম হবো।প্রশাসনের ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্তটি খুবই প্রশংসনীয়। বাংলা ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমাম বলেন, এটা অবশ্যই বেশ স্বস্তিদায়ক সংবাদ আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রদের জন্য। অনলাইন সেমিস্টারে হয়তো আমরা নির্দিষ্ট সিলেবাসই শেষ করেছিলাম। কিন্তু একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্টটা এমন না। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেবাসভিত্তিক পড়াশোনার পাশাপাশি নানা ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী কাজ করার সুযোগ থাকে। সে সকল কাজের সুযোগ আবার পেতে চলছি এসব নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় খুলার এই বিষয়টায় আমি খুব বেশি স্বস্তি বোধ করছি।