শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি বেসরকারি শিক্ষকদের

রাজন্য রুহানি,জামালপুর: বৈষম্য দূরীকরণে মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, জাতীয়করণে পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের পদায়ন বন্ধ রাখা ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবিতে জামালপুরে মানববন্ধন করেছে বেসরকারি স্কুল ও মাদরাসা শিক্ষক পরিবার। মানববন্ধন শেষে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে শহরের ফৌজদারি মোড়ে ঘন্টাব্যাপী এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মো. নওশের আলীর সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন মাস্টারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন, একাডেমিক সুপার ভাইজার শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল্লাহ মাস্টার, মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ হীরা, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট জেলা শাখার সহসভাপতি নজরুল ইসলাম মাস্টার প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠানের ৯৭% বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একই শিক্ষাগত যোগ্যতা, একই বই পড়ানো, একই বোর্ডের আওতায় পরীক্ষা অথচ সরকারি ও বেসরকারি নাম দিয়ে আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদার মধ্যে বিরাট বৈষম্য তৈরি করে রাখা হয়েছে যা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়।

এছাড়া শিক্ষা বিভাগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একাডেমিক ও প্রশাসনিক। শিক্ষকেরা একাডেমিক কাজে দক্ষ। তাদের সকল প্রশিক্ষণ পেড্যাগোজি কেন্দ্রিক। ক্লাস রুমের পঠন-পাঠনে তারা দক্ষ। অন্যদিকে শিক্ষা প্রশাসনে দীর্ঘ ৩১ বছরে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের সকল প্রশিক্ষণ প্রশাসনিক। শিক্ষকতা ও প্রশাসন ভিন্ন চরিত্রের, ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের, কাজের ধরন ভিন্ন, চর্চা বা অনুশীলন ভিন্ন। জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপপরিচালক পদে তাঁদের পদায়ন করা হলে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূন্যতা যেমন সৃষ্টি হয় তেমনি ক্লাস রুম শিক্ষকতায় অভিজ্ঞ একজন শিক্ষককে উল্লেখিত পদ সমূহে পদায়ন করা হলে বিভিন্ন বিধি বিধান সম্পর্কে পূর্ব জ্ঞান না থাকার কারণে অফিসের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নিম্নপদের লোকজনের পরামর্শ দ্বারাই পরিচালিত হতে হয়। প্রশাসনিক দৃঢ় সিদ্ধান্ত তাঁরা গ্রহণ করতে পারেনা। এছাড়াও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকগণকে পদায়ন করা হলে প্রশাসনিক অনভিজ্ঞ সিনিয়র শিক্ষকের অধীনে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রধানগণকে কাজ করতে হবে। এতে শিক্ষাঙ্গনে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে।

বক্তারা উপজেলা, জেলা, অঞ্চল ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখায় ৩১ বছর শিক্ষা প্রশাসনে কাজের দক্ষতা সম্পন্ন ৬ষ্ঠ গ্রেড অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের পদোন্নতি ও পদায়নের জোর দাবি জানান।

তারা আরও দাবি করেন, শিক্ষার মাঠ প্রশাসনে কাজ করা ১০-২২ বছরের দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত SESIP এর ১১৮৭টি পদ জনবলসহ রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

এছাড়া নানা মাত্রিক সমস্যায় মাধ্যমিক শিক্ষা জর্জরিত। স্কুল, মাদরাসা, সরকারি, বেসরকারি এ রকম নানা রকম প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এদের মধ্যে বৈষম্য প্রকট। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করার জোর দাবিও জানান তারা।

মানববন্ধনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে তারা শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।

আরও পড়ুন...