নাজমুল হুসাইন,ইবি (কুষ্টিয়া): ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষিকা কর্তৃক হেনস্থার শিকার হয়েছেন এক ছাত্রী। হলের আবাসিকতা প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারী ছাত্রীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় বোরকা পরিধান করায় নানাভাবে হেনস্থার শিকার হন ওই শিক্ষার্থী। শনিবার (২৭ আগস্ট) ওই শিক্ষার্থী নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষক নাজমুল হুদা কে আহ্বায়ক করে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকার নাম মাহবুবা সিদ্দিকা। তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। এছাড়া তিনি খালেদা জিয়া হলের হাউজ টিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৩শে আগস্ট) খালেদা জিয়া হলের আবাসিকতা প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারী ছাত্রীদের সাক্ষাৎকার নেয় হল প্রশাসন। এসময় বোরকা পরিধান করায় নানাভাবে হেনস্থার শিকার হন ওই শিক্ষার্থী। পরে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী তার আত্মীয় শাখা ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতাকে বিষয়টি জানান। পরে তিনি শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সাগরকে বিষয়টি অবহিত করেন। এ বিষয়ে সাগর মাহবুবা সিদ্দিকার সাথে যোগাযোগ করে ঐ শিক্ষার্থীকে হেনস্থা না করার জন্য অনুরোধ করেন।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে (২৪ আগস্ট) বুধবার ফের ওই ছাত্রীকে প্রভোস্ট কার্যালয়ে ডেকে হেনস্থা ও হুমকি দেয়া হয়। এসময় ওই শিক্ষিকা নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ‘তোমারে পুইত্তা ফালামু’ বলে হুমকি দেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক ছিলাম। চিনো তুমি আমারে? আমি কত পাওয়ার চালাইছিলাম তুমি জানো? তোমার এলাকার মেয়র টিটু ভাইকে চিনো? বইল্লা ঐখানে তোমারে পুইত্তা ফালামু। আমার বাড়ি কোথায় জানোস? আমার শশুরবাড়ী কোথায় জানোস? আমার সাথে ফাইজলামি না? এলাকায়ও টিকতে পারবা না।’ এসময় হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. ইয়াসমিন আরা সাথী, হাউজ টিউটর নাজমুল হুদা ও ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, আমি এর আগে হলের সকল কার্যক্রমে যেতাম। তবে সামনে পরীক্ষা থাকায় হলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাই না আর হিজাব ও বোরকা পরি। সেজন্য আমাকে বলা হয়েছে আমি নাকি শিবির করি। আমার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ ছাড়াই ম্যাম আমাকে দোষারোপ করেছেন।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমার এলাকার বড়ভাই ম্যামের সাথে কথা বলেছেন। এজন্য তিনি আরো রেগে যান। পরে আমাকে ডেকে নানাভাবে হুমকি দেন। আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এজন্য আমি নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করি।
শিক্ষার্থীকে হুমকির বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক মাহবুবা সিদ্দিকা বলেন, আমার জানামতে কোনো শিক্ষার্থীকে হুমকি বা হেনস্থা করি নাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন বলেন, অভিযোগ পত্রটি হাতে পেলাম। আগামীকাল শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা রয়েছে। এজন্য একটু ব্যস্ততা রয়েছে। খুব শ্রীঘই এটা নিয়ে বসবো।