পিবিএ, ঢাকা: মাত্র বারো মাস বয়সি শিশু তুহিন। রান্নাঘরে মা যখন রান্না করছিলো পাশের চেয়ারে বসে খেলছিলো সে। এসময় চেয়ার থেকে পড়ে যায় চুলায় রাখা কড়াইয়ে ফুটন্ত ডাউলের মধ্যে। সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ, গলা, বুক, পেট সহ দগ্ধ হয় শরীরের বেশকিছু অংশ।
বুধবার বিকেলেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসক তাকে দেখার পরপরই ভর্তি করেন। চিকিৎসকরা জানান, শিশু তুহিনের শরীরের ১২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ উপজেলার অামদিয়া গ্রামের লুৎফরের একমাত্র ছেলে তুহিন। বাবা গাজিপুরের একটি পোশাক তৈরি কারখানায় চাকরী করেন। দুর্ঘটনার খবর শুনে রাতেই তিনি হাসপাতালে ছুটে আসেন। মা সুফিয়া আক্তার গৃহিণী।
হাসপাতালের বেডে দগ্ধ শিশু তুহিনের পাশে বসে অাছেন নানী রফেজা বেগম। অশ্রুভরা চোখে তিনি জানান, ওর মা সুফিয়া বিকেল ৩ টার দিকে রান্নাঘরে রান্না করছিলো। রান্না করার সময় তার পাশেই একটি চেয়ারে বসিয়ে রেখেছিলো তুহিনকে। খেলতে খেলতে সে হঠাৎ ফুটন্ত ডাউলের কড়াইর উপর পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সেই গরম ডাউল তার শরীরে লেগে যায়। আর এতেই দগ্ধ হয় শিশু তুহিন।
ঢাকা মেডিকেল বার্ণ ইউনিটের অবজারভেশনে ওয়ার্ডে বুধবার রাত ১০ টার দিকে অনেক রোগীর মধ্যে দেখা মেলে এরকম আরো ৩ শিশুকে। যারা বিভিন্ন ভাবে অাগুন কিংবা গরম পানিতে দগ্ধ হয়েছে।
এমনই আরেকজন হচ্ছে মরিয়ম। তার বয়স ৫ বছর। বাবা রেনু মিয়া কবিরাজি করেন। মা রেখা আক্তার গৃহিণী। রাজধানীর দক্ষিণ সায়দাবাদ সিএনজি পাম্পের পিছনে ৪৩/১ নম্বর বাসায় থাকেন তারা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে মরিয়ম বাথরুম থেকে যখন রুমে ফিরছিলো তখন পাশের বাসার আরেক মেয়ে নুডুলস সিদ্ধ করে টিউবয়েলের দিকে যাচ্ছিলো। তখন তার সাথে ধাক্কা লেগে নুডুলসেরর গরম পানি সহ মরিয়মের শরীরের উপর পড়ে। এতে তার শরীরের ২২ শতাংশ দগ্ধ হয়।
একই রকম নারায়ণগঞ্জের লাট মিয়ার মেয়ে অনন্যা (৯)। স্থানীয় সোনার বাংলা পাবলিক স্কুলের ২য় শ্রেণিতে লেখাপড়া করে সে। বিকেলে বাসার পাশের মাঠে এলাকার ছেলেমেয়েরা যখন অাগুন জ্বেলে খেলছিলো তখন অনন্যার জামায় আগুন লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে যায় তার শরীরের ২০ শতাংশ।
পুরান ঢাকার ধুপখোলা তাতিবাড়ি গলির একটি ৭ তলা বাসার ৩য় তলায় পরিবারের সাথে থাকে সিহাব। বিকেলে বাসার বান্দার পাশের বিদ্যুতের তারের সাথে একটি ঘুড়ি আটকে থাকতে দেখে রড দিয়া সেই ঘুড়ি ছাড়ানোর চেষ্টা করে সিহাব। রডটি বিদ্যুতের তারের কাছে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিটে ডান হাত ঝলসে যায় ৩য় শ্রেণির ছাত্র সিহাবের।
বার্ন ইউনিটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্তব্যরত এক চিকিৎসক জানান, প্রতিদিনই ৫০-৬০ জন রোগী বিভিন্ন ভাবে দগ্ধ হয়ে এই হাসপাতালে আসেন। যাদের মধ্যে গ্যাস সিলিন্ডার বা গ্যাস বিস্ফোরণ, চুলার অাগুন, গরম পানি, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট রোগীই বেশী। আর এদের মধ্যে বেশীর ভাগই শিশু।
তিনি আরো বলেন, গরম পানি থেকেই শিশুরা বেশী দগ্ধ হয়। আর শীতকালে দগ্ধের সংখ্যাও বেড়ে যায়। এজন্য অভিভাবকদের অধিক সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
পিবিএ/এইচএ/এইচএইচ