শীতে যেভাবে নেবেন নবজাতকের যত্ন

পিবিএ,ঢাকা: পরিবারে কোনো শিশুর জন্ম মানে আনন্দের বন্যা বয়ে যাওয়া। তাকে কোথায় ঘুম পাড়ানো হবে, কী খাওয়ানো হবে, কী কাপড় পরানো হবে, তার অসুখ করলো কিনা, কতোটুক সময় ঘুমালো- এগুলো নিয়ে তো চিন্তাভাবনার কোনো শেষ থাকে না। কিন্তু এই শীতের মধ্যে কোনো শিশু জন্মালে তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তাই যেন বেশি থাকে। শীতের মধ্যে নবজাতক শিশুর যত্নআত্তি বিশেষ জরুরি। সে বিষয়েই থাকছে আজকের আলোচনা-

তাপমাত্রা

শিশু মায়ের গর্ভের স্বাভাবিক তাপমাত্রা পৃথিবীতে আসার পরে চারপাশের তাপমাত্রায় খাপ খাওয়ানো জরুরি। শিশুর শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দ্রুত তৈরির জন্য শিশুর থাকার জায়গাটিতে পর্যাপ্ত তাপমাত্রার ব্যবস্থা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, মায়ের স্বাস্থ্যের সঙ্গে নবজাতকের স্বাস্থ্যও সম্পর্কযুক্ত। তাই মায়ের স্বাস্থ্যের যত্ন এসময় বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

বুকের দুধ

জন্মের পর থেকেই শিশুকে প্রচুর মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কারণ এতে করে দ্রুত শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে। নিয়মিত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে শিশু সহজে ঠাণ্ডা, কাশিতে পড়বে না। সতর্ক হন যাতে শিশু চাহিদামতো বুকের দুধ পায়।

পর্যাপ্ত গরম কাপড়

শিশু জন্মানোর পর তার ত্বক আর শ্বাসতন্ত্র নাজুক, অপরিণত অবস্থায় থাকে। তাই দেখা যায়, শিশুর দেহ বেশি তাপ ধরে রাখতে পারে না বলে সহজেই ঠাণ্ডা হয়ে যায়। শিশুকে সবসময়ের জন্য উষ্ণ রাখতে তাকে পর্যাপ্ত আরামদায়ক গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন।

শিশুর গোসল

শূন্য থেকে ৩০ দিন বয়সের নবজাতকদের সপ্তাহে সাধারণত দুদিন গোসল দেওয়ানো ভালো। আর ৩০ দিন বয়স পার হলে শিশুদের প্রতিদিন গোসল করানো ভালো। তবে শিশুর ওজন অল্প হলে, শিশুর নাক দিয়ে পানি পড়লে, নিউমোনিয়ার কোনো লক্ষণ থাকলে বা ঠাণ্ডা লেগে থাকলে গোসল না করানোই ভালো। নবজাতক শিশু হলে বা ঠাণ্ডার সমস্যা থাকলে বেশি কুয়াশার দিনে শিশুকে অল্প সময় নিয়ে গোসল করাবেন। আর অবশ্যই হালকা উষ্ণ পানিতে গোসল করাবেন।

শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি

শীতকালে শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির প্রকোপ বাড়ে। আর নবজাতক শিশুর শ্বাসনালী বেশি সংবেদনশীল হওয়ার কারণে এই রোগ দুটি নিয়ে ভয় বেশি থাকে। যে ঘরে আপনার শিশুটি থাকবে সেই ঘরে কার্পেট, লোমযুক্ত চাদর, কম্বল ইত্যাদি ব্যবহারে সতর্ক হোন। আর পরিবারে যদি কোনো সদস্য বা আত্মীয়ের সর্দি, কাশি, ভাইরাস জ্বর থাকে তো তাদের কাছ থেকে মা ও শিশুকে দূরে রাখবেন। এই শীতের মধ্যে নতুন শিশুকে বাইরে নেবেন না কোনো কারণ ছাড়া।

শিশুর ত্বকের যত্ন

শীতের শুষ্ক আবহাওয়াতে শিশুর ত্বকের ক্ষতি হয়, বিভিন্ন চর্মরোগও হতে পারে। এই সময় ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। মাথায় বেশি পরিমাণে তেল না দেওয়াই ভালো। এতে করে মাথার তালুতে হলুদ বা বাদামি আঁশের মতো স্তর পড়ে। আর শীতকালে মাথার ত্বকে নিজ থেকেই তেল নির্গত হয়। সেটা থেকে আবার মাথার ত্বকে পুরু কোনো স্তর পড়ে যেতে পারে। এর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অয়েন্টমেন্ট লাগাতে হবে।

ডায়াপার

নবজাতককে ডায়াপার না পরানোই ভালো। আর নিতান্তই যদি পরাতে হয় তবে নিয়মিত তা বদলে দিতে হবে। মলমূত্র ত্যাগের পর দীর্ঘসময় যেন তাদের গায়ে লেগে না থাকে সেদিকে মনোযোগ দিন। এক্ষেত্রে শিশুদের শরীরে বিশেষ ধরনের অ্যান্টি-র‌্যাশ ক্রিম ব্যবহার করা উচিৎ, নাহলে শরীরে ফুসকুড়ি ওঠার ভয় থাকে।

রোদ লাগানো

শিশুর ব্যবহার করা লেপ, তোশক, কম্বল, চাদর ইত্যাদি নিয়মিত কড়া রোদে শুকাতে হবে। রোদ থেকে তোলার পর তা ভালো করে ঝেড়ে পরিস্কার করে নেবেন। আর এগুলোর ওপর কাপড়ের কভার ব্যবহার করবেন।

শীতকালে শিশুর শরীরেও পর্যাপ্ত রোদ লাগাতে হবে। এতে করে শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ হবে, তার হাড় ও পেশী শক্ত হবে। রোদ লাগাতে তাকে ঘরের বাইরে না নিয়ে একেবারে সকালে ছাদে নিয়ে যেতে পারেন, দরজা বা জানালার কাছে রোদ লাগানোর ব্যবস্থা করতে পারেন।

মেনে চলুন একটু সতর্কতা

ঠাণ্ডায় শিশুর নাক বন্ধ হয়ে গেলে, বুকে কফ জমে শব্দ হতে থাকলে বা অন্য কোনো রোগের লক্ষণ দেখলে দেরি করবেন না। তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন। কোনোরকম অবহেলা না করে বা ঘরোয়া চিকিৎসা না করিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আর নিজে থেকে তাকে কোনো ওষুধও খাওয়াতে যাবেন না।

পিবিএ/জেআই

আরও পড়ুন...