পিবিএ,ঢাকা: ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়া ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজনীতি করছে দাবি করে এর বিরুদ্ধে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আজকে রাতের মধ্যে প্রত্যেক হলের বহিরাগত ও অছাত্রদের বের করতে হবে। আমরা সন্ত্রাসীদের বিচার চাই। সেই সঙ্গে অছাত্রদের হল থেকে বের করতে হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, নুর, আখতার, ইমি ও বেনজিরের পর হামলা ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে আমরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে মারধরের শিকার এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে দেখতে গিয়ে মঙ্গলবার বিকালে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে অবরুদ্ধ হন নুরুল হক নূর। হল সংসদের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগ নেতারা তাকে অবরুদ্ধ করে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ ওঠে। প্রায় দুই ঘণ্টা তিনি সেখানে অবরুদ্ধ থাকেন।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নুর সেখান থেকে ছাড়া পান। এ সময় তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় এবং ডিম ছুড়ে মারে ছাত্রলীগের কর্মীরা। তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন আহতও হন। পরে প্রতিবাদস্বরূপ নুর ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। তার সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা রয়েছেন।
রাত নয়টার কিছু আগে ফেসবুক লাইভে নুরুল হক নুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজ মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়েছে। তারা ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি। ছাত্রলীগের তোষামোদিতে ব্যস্ত। বারবার প্রতিবাদ সত্ত্বেও তারা কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের দুটি দাবি। আজকে ছাত্রলীগ যে ঘটনা ঘটিয়েছে এর বিচার করতে হবে। এর সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করতে হবে। আরেকটি হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে অছাত্র ও সন্ত্রাসীদের বের করে দিতে হবে। আমরা চাই আজই হলে হলে অভিযান চালানো হোক।’
ছাত্রলীগের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এরা সন্ত্রাসী সংগঠন। জোর করে শিক্ষার্থীদের মিছিল-মিটিংয়ে নেয়। আমরা এর প্রতিকার চাই। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করব।’
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নুর বলেন, ‘আপনারা সোচ্চার হোন। অনেক নির্যাতিত হয়েছেন সন্ত্রাসীদের হাতে। এখন সময় এসেছে প্রতিবাদ করার।’
ডাকসু ভিপি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে যেভাবে মেধার জোরে চান্স পাই তেমনি সিট পাওয়ার ক্ষেত্রেও মেধাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনো ছাত্র সংগঠনের করুণা বা কৃপায় সিট দেয়া যাবে না। জোর করে মিছিল-মিটিং করানোর অধিকার কোনো ছাত্র সংগঠনের নেই। তারা সন্ত্রাসী সংগঠন, তারা দখলদার সংগঠন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা চাই। শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক দাবির যথাযথ বাস্তবায়ন চাই।’
এ সময় ডাকসুতে সমাজ কল্যাণ সম্পাদক পদে বিজয়ী আখতার হোসেনও কথা বলেন। তিনি জানান, নুরের সঙ্গে এসএম হলে তার ওপরও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। তাকে পেছন থেকে ঘাড়ে চেপে ধরে এবং কিল-ঘুষি মারে। তিনি এর বিচার চান।
ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্র ফেডারেশন নেত্রী উম্মে হাবিবা বেনজি, ডাকসুর ভিপি প্রার্থী অরুণী সেমন্তি খান, শামসুন্নাহার হল ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পিবিএ/এএইচ