শোক দিবসের প্রস্তুতি সভায় আ’লীগ নেতাদের উপর হামলা

পিবিএ,কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে শুক্রবার(৯আগষ্ট) বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।আলোচনা সভায় বিভিন্ন সভা সমাবেশে উপজেলা সভাপতি পদে মশিউর রহমান রতন প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ ও প্রচারণা চালানোর আভিযোগ তুলে বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাই সরকার ও মশিউর রহমান রতন বাগবিতণ্ডায় জরিয়ে পড়েন।এসময় রতন’কে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করায় দলীয় কার্যালয়ে উপজেলা আ’লীগ সভাপতি আব্দুল হাই সরকারে’র ছেলে শুভ সরকার সকলের সামনে মশিউর রহমান রতনে’র গলা চেপে ধরে ধাক্কাদিয়ে চেয়ার থেকে ফেলে দেয়।এসময় সেখানে আ.লীগ সভাপতি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মী ও সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।পরে সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আলোচনা সভা ভন্ডুল হয়ে যায়।
সাবেক এই নেতাকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সুরহা না করেই আ’লীগ সভাপতি তার অনুুুুসারীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসে।দলীয় কার্যালয়ে এমন ঘটনা হওয়ায় উপজেলা শহর জুড়ে উত্তেজনা ও আতঙ্ক জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে মশিউর রহমান রতন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বাবুকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বটতলা বাজারের স’মিল সংলগ্ন এলাকায় পৌছলে তাদের পথ গতিরোধ করে আ’লীগ সভাপতির ছেলে শুভ সরকার,ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহমুদ, ভাগনে খবির উদ্দিন,কবির উদ্দিন সহ প্রায় ১৫ জন মিলে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে রতন ও বাবু কে ব্যাপক মারপিট করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে চলে যায় এবং রতনের ব্যাবহৃত বাজাজ ডিসকভার ১২৫ সিসি মডেলের মোটরবাইকটি সাথে নিয়ে চলে যায়।থানায় লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে এই তথ্য।
মারপিটের শিকার হওয়া নেতাদের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় দুই জনকে উদ্ধার করে রাতেই রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।মশিউর রহমান রতনের মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে রের্ফাড করা হয়েছে।
আশরাফুল ইসলাম বাবুর ডান হাতের দুটি আঙ্গুল ভেঙ্গে গেছে ও কবজিতে আঘাত পাওয়ায় ডান হাত ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। মাথায় আঘাত ও ক্ষত হওয়ায় মাথায়ও ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।তার শরীরের বিভিন্ন স্থানেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ডা.দেলোয়ার হোসেন।আজ শনিবার রতনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
এঘটনায় মারধরের শিকার হওয়া আশরাফুল ইসলাম বাদি হয়ে রাজীবপুর থানায় আ’লীগ সভাপতি আব্দুল হাই সরকার(৭০),শুভ সরকার(২৫),খবির উদ্দিন(৩৫),কবির উদ্দিন(৪৫),আব্দুল মোতালেব(৪২),আজাদ খাঁ(৪৫),ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেক(২৫),রফিকুল ইসলাম রাফি(২২)মানিক মিয়া(৩২),সৌরভ হাসান(২২) সহ অজ্ঞাত নামা ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এাকাধিক আ’লীগ নেতা কর্মী’রা জানান গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়। বিদ্রোহী প্রার্থী জয় লাভ করে।এর পর থেকেই দলে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা আ’লীগ সভাপতি আব্দুল হাই সরকার বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক।নির্বাচনে জয় লাভের পর তিনি আগ্রাসী হয়ে উঠেন। সব জায়গায় নিজের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন।
এতে দলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।গত কাল শোক দিবসের আলোচনায় সভায় তার ছেলে রতনকে মারধর করলেও তিনি নিজ সন্তানকে কিছু না বলে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।এবং রাতে তার নির্দেশেই সাবেক দুই নেতাকে আবারও মারধর করা হয়।এমন ঘটনায় দলীয় নেতা কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মশিউর রহমান রতনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয় নি।রতনের স্বজনরা জানিয়েছে তার চিকিৎসা চলছে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে।মারধরের শিকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম বাবু বলেন,উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় সভাপতির রোষানলে পড়েছি আমরা নানা সময় রতন ভাই ও আমাকে হুমকি দেওয়া হত।
রতন ভাই খুব শঙ্কিত ছিলেন তাই আমি রাতে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য সাথে যাই। এসময় অতর্কিত দা লাঠি নিয়ে হামলা চালায় আমাদের উপর আমাদের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। স্থানীয়রা না আসলে হয়ত আমাদের মেরে ফেলত।
নিজ দলের সাবেক নেতাদের মারপিট করার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা আ’লীগ সভাপতি আব্দুল হাই সরকার বলেন রতন বিভিন্ন সময় আমাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলে। এতে আমার ছেলে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে আঘাত করেছে বিষয়টি তখনই মিটিয়ে ফেলতে চেয়েছিলাম তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় করতে পারি নি।রাতে তাদের মারধর করার বিষয়ে তিনি বলেন আমি এ বিষয়ে জানতাম না ঘটনাটি ঘটার পর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাই নি।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম বলেন,সাবেক নেতাদের উপর হামলা চালানোর বিষয়টি খুব দুঃখজনক সব জায়গায় এগুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে মানুষের মাঝে ভয়ের সঞ্চার হচ্ছে।জেলা নেতৃবৃন্দ বিষয়টি জেনেছে দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে উনারা পরবর্তী সিন্ধান্ত জানাবেন।
শনিবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন,লিখিত অভিযোগ পেয়েছি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন...