পিবিএ ডেস্ক: শ্রীলঙ্কায় হোটেল ও গির্জায় ভয়াবহ বোমা হামলার জন্য এখনও পর্যন্ত দায় স্বীকার না করলেও ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত নামের একটি ভুঁইফোর মুসলিম চরমপন্থী সংগঠনকে সন্দেহ করা হচ্ছে। আর এর রেশ ধরে দেশটিতে আবার মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশংকা করা হচ্ছে। আর এতে ইন্ধন দিচ্ছে ইসরাইল ভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যম।
ইতোমধ্যে শ্রীলংকার একটি মসজিদে পেট্রোল বোমা হামলা চালানো হয়েছে। দেশটির পুত্তালুম জেলায় রোববার রাতে এই হামলা চালানো হয়।
এছাড়া বান্দারাগামা এলাকায় মুসলিম মালিকানাধীন দুটি দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এজেন্সিয়া ইএফই এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো ও এর আশপাশের চারটি হোটেল ও তিনটি গির্জাসহ মোট আটটি স্থানে ভয়াবহ বোমা হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ২৯০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৫০ জন। নিখোঁজও রয়েছেন বেশ কিছু মানুষ। এরপর থেকেই হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন মুসলিমরা।
এ ঘটনায় স্থানীয় মুসলমানরা বিব্রত ও আতঙ্কিত। শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাস এমনিতেই খুব ভালো না। গত বছর ক্যান্ডি এবং আশপাশের বেশ কিছু শহরে মসজিদ এবং মুসলিম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কট্টর বৌদ্ধদের হামলার পর সাময়িক জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। ফলে রোববারের হামলার সাথে মুসলিম একটি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতার সন্দেহের কথা প্রকাশ হওয়ার পর স্বভাবতই অনেক মুসলিম উৎকণ্ঠায় পড়েছেন।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি-র হাতে পাওয়া নথি অনুযায়ী, গির্জায় হামলার ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার পুলিশকে আগেই সতর্ক করেছিল ‘একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা’।
২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল পুলিশ প্রধান পুজুথ জয়াসুনদারা দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে এ সংক্রান্ত গোয়েন্দা সতর্কতা পাঠান। এতে বলা হয়, ‘একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে যে, ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত (এনটিজে) প্রখ্যাত চার্চ এবং কলম্বোয় ভারতীয় হাইকমিশন লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।’
শ্রীলঙ্কা সরকার এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে রবিবারের সিরিজ বিস্ফোরণের জন্য কাউকে দায়ী করেনি।
তবে ইতোমধ্যেই ন্যাশনাল তাওহীদ জামাতের একজন নেতাকে এ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ইসরায়েলভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যম।
সংবাদমাধ্যমটির দাবি, এ মাসের গোড়ার দিকে তিনি কলম্বোর ভারতীয় হাই কমিশনেও হামলা চালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
রবিবারের হামলার পরপরই শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার ঘোষণা দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, কলম্বোয় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমাদের অঞ্চলে এমন বর্বরতার কোনও স্থান নেই।
এদিকে শ্রীলঙ্কায় রবিবারের ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৯০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৫০০ জন।
সোমবার সকালে পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা হতাহতের এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধন জানিয়েছেন, অপরাধীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তদন্তকারীরা। সোমবার পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান।
তবে গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি।
পিবিএ/এএইচ