শ্রেণিশিক্ষক হাসনাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ

পিবিএ, ঢাকা– আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার পর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অরিত্রী অধিকারীর শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনাকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বুধবার রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের এই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার এম আতিকুল ইসলাম।

অরিত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে তার বাবা দিলীপ অধিকারীর মামলায় এই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা আতিক। মঙ্গলবার রাতে পল্টন থানায় করা ওই মামলায় হাসনা হেনার পাশাপাশি রাজধানীর নামি ওই বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও প্রভাতি শাখার প্রধান জিনাত আখতারকেও আসামি করা হয়।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রীর আত্মহত্যার পর সহপাঠি ও অভিভাবকদের বিক্ষোভের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আসামি তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বুধবার র‌্যাব ও পুলিশকে চিঠি দেয়। এর মধ্যে সন্ধ্যায় মামলাটির তদন্তভার পেয়ে তৎপর হয় গোয়েন্দা পুলিশ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীনসহ অন্য দুই শিক্ষককে খোঁজা হচ্ছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) আব্দুল বাতেন জানিয়েছিলেন।

তিনি সন্ধ্যায় পিবিএকে বলেছিলেন, “আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। খুব শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।” মামলা হওয়ার পর বুধবার দিনভর স্কুলে দেখা যায়নি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীনসহ অন্য তিন শিক্ষককে; শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চললেও আগের দিন স্কুলে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

মামলা দায়েরের পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন মঙ্গলবার রাতে পিবিএকে বলেছিলেন, “শুনেছি আমাকেসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।” মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বুধবার সন্ধ্যায় ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদ জরুরি সভায় বসে তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করেন। তার আগে মন্ত্রণালয় ওই তিন শিক্ষকের এমপিও বাতিল করে।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী গত সোমবার আত্মহত্যা করার পর থেকে উত্তেজনা চলছে রাজধানীর নামি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা নানা অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করছেন। গত রোববার বার্ষিক পরীক্ষা চলার সময় মোবাইল ফোনে নকল করার সময় অরিত্রী ধরা পড়েন বলে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি। ওই ঘটনার পরদিন তার বাবা-মাকে ডেকে নেওয়া হয়। তখন অরিত্রীর সামনে তার বাবা-মাকে অপমান করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এরপরই ঘরে ফিরে আত্মহত্যা করেন এই কিশোরী।

মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা ফুঁসে উঠলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজে যান ভিকারুননিসায়; দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়। একটির প্রতিবেদনে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে শিক্ষামন্ত্রী বুধবার জানান।

দিলীপ তার মেয়ের বিরুদ্ধে স্কুল কর্তৃপক্ষের তোলা নকলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে স্বীকার করেন যে তা মেয়ে মোবাইল নিয়ে স্কুলে গিয়েছিল। মামলার এজাহারে বলা হয়, অরিত্রী অধ্যক্ষের পা ধরে মাফ চাইলেও তাকে ক্ষমা করা হয়নি, তার বাবা-মা করজোড়ে ক্ষমা চাইলেও তাদের কথাও শোনা হয়নি। দিলীপ মামলায় বলেছেন, শিক্ষকদের ‘নির্মম আচরণে’ মর্মাহত হয়ে অরিত্রী আত্মহত্যায় বাধ্য হয়। একই সাথে শিক্ষকদের ‘নির্দয় ব্যবহার ও অশিক্ষকসুলভ আচরণ’ অরিত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছে।

পিবিএ/এমটি/এইচএইচ

আরও পড়ুন...