পিবিএ ডেস্ক: ভারতের পুনর্নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, সংখ্যালঘুদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। তিনি বিরোধী দলগুলোর সমালোচনা করে বলেছেন, সংখ্যালঘুদের সবসময় একটা ‘কাল্পনিক ভয়ের’ মধ্যে বসবাসের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল। তাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রতারিত করা হয়েছে। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংখ্যালঘুরা প্রতারিত হয়েছেন, গরিবদের মতো। শিক্ষা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে তাদের যদি বিগত সময়েই এগিয়ে নেওয়া যেতো তবে ভালো হতো। এখন বঞ্চনার এই বলয় ভাঙতে হবে আমাদেরই। তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে আমাদের। তাদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ আমাদের বড় দায়িত্ব। যারা আমাদের ভোট দিয়েছে তারাও আমাদের, যারা ভোট দেয়নি তারাও আমাদের। এমনকি আমাদের কট্টর বিরোধীরাও আমাদের। কোনো বৈষম্য রাখা যাবে না আমাদের মনে।
শনিবার (২৬ মে) সন্ধ্যায় ভারতীয় সংসদের সেন্ট্রাল হলে বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) সদ্যনির্বাচিত ৩৫৩ লোকসভা সদস্যের (এমপি) উদ্দেশে বক্তৃতাকালে মোদী এ কথা বলেন। প্রায় ৭৫ মিনিটের বক্তৃতায় মোদী আন্তরিকভাবে সরকারে কাজ করার আহ্বান জানান এমপিদের।
নির্বাচনে এনডিএ জোটের ৩৫৩ আসনের মধ্যে কেবল বিজেপিই পেয়েছে ৩০৩ আসন। অভূতপূর্ব এই জয়ের পর ডাকা বৈঠকে জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি অমিত শাহ, শিব সেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও জনতা দলের (জেডিইউ) প্রধান নীতিশ কুমার প্রমুখ।
মোদী তার বক্তৃতার শুরুতে বলেন, আমাদের সরকার নতুন ভারত গড়ার জন্য নতুন উদ্যমে এক নতুন যাত্রা করবে। আমাদের মন্ত্র হবে, ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ সবকা বিশ্বাস’ (সবার সঙ্গে সবার উন্নয়ন এবং প্রত্যেকের অস্থা অর্জন)।
বিরোধীরা নির্বাচনের সময় সংখ্যালঘুদের ‘ভোট-ব্যাংক রাজনীতি’র অংশ বানিয়ে ব্যবহার করেছে অভিযোগ তুলে মোদী বলেন, তাদের (সংখ্যালঘুদের) এভাবে বিরোধীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না, তারা ফায়দা তোলে কারণ আমরা এতোদিন চুপ ছিলাম।’
বিগত সময়গুলোতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করা হয়েছে উল্লেখ করে মোদী দাবি করেন, তার সরকার এই বঞ্চনার বলয় ভেঙে ফেলেছে এবং এক্ষেত্রে অগ্রগতি এনেছে। এনডিএ এমপিদেরও দায়িত্ব নিয়ে সংখ্যালঘুদের ঘিরে থাকা এ বলয় ভাঙার আহ্বান জানান মোদী।
ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের কথা তুলে ধরে মোদী বলেন, সেসময় আমাদের সব সম্প্রদায়ের মানুষ এক হয়ে লড়াই করেছিল। সুশাসনের জন্য একই ধরনের উদ্যম নিয়ে কাজ করতে হবে আমাদের।
ব্যক্তির ধর্ম ভিন্ন হলেও রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সবার সবচেয়ে বড় আশ্রয় ‘ভারতমাতা’ উল্লেখ করে মোদী বলেন, সংবিধানই সবার ঊর্ধ্বে। ঘরে আমরা যে পূজা-প্রার্থনাই করি না কেন, বাইরে ‘ভারতমাতা’র চেয়ে বড় কোনো ঈশ্বর হতে পারে না।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দোপাধ্যায়সহ বিজেপিবিরোধী শিবির বরাবরই দলটিকে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলিম-বিদ্বেষী বলে অভিযুক্ত করে আসছে। এমনকি শনিবার তৃণমূলের বিজয়ী ও বিজিত প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকেও মমতা বলেন, সংখ্যালঘুরা আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা কাউকে ভয় পাই না। মিটিং শেষে আমি এখন ইফতারে যাবো।
বিরোধীদের এসব অভিযোগের দিকে ইঙ্গিত করে মোদী বলেন, যারা আমাদের বিশ্বাস করে, আমরা তাদের পাশে আছি। তাদের পাশেও আছি, যাদের বিশ্বাস আমাদের অর্জন করতে হবে। ভারতকে একবিংশ শতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে আমাদের সবাইকেই সঙ্গে নিয়ে এগোতে হবে।
পিবিএ/এএইচ