বাহাত্তরে প্রণিত সংবিধান কবর দেওয়ার কথা শুনলে কষ্ট লাগে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনিপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়া পল্টনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই সংবিধানে যদি খারাপ কিছু থাকে নিশ্চয়ই সেটা বাতিলযোগ্য।
মির্জা আব্বাস বলেন, “একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি এবং ফ্রন্ট লাইনে অংশ গ্রহণ করেছি সামনা-সামনি। আমার সামনে বহু সহযোদ্ধা মারা গেছে। আমার বন্ধুবান্ধব… মোট মারা গেছে প্রায় তিন লক্ষ।
“শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে লেখা যে সংবিধান সেই সংবিধানকে যখন কবর দেওয়ার কথা বলা হয়, তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে। আমরা তোমাদের সিনিয়র হিসেবে, তোমাদের অগ্রজ হিসেবে আমরা কষ্ট পাই যে, এটা কি করছে? এইভাবে কথা বলাটা ঠিক হলো “
৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ ঘোষণা ও ১৯৭২ সালের ‘মুজিববাদী’ সংবিধানকে কবর দেওয়ার কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
রোববার বাংলামোটরে সংগঠনটির ক্দ্রেীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেছেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ এর মাধ্যমে এটা করা হবে।
এ বিষয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, “যদি নতুন কোনো সংবিধান লিখতে হয়..তাও তো লিখতে হবে আগের ওমুক সালের সংবিধান বাতিল করে এই সংবিধান জারি করা হলো।”
তিনি বলেন, “আমি আগে একবার বলেছিলাম, একজন আমার ওপর খুব ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে, যিনি আমার এক ছোট ভাই, আমার খুব প্রিয়, বাইরে থেকে দেশ পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন, ছাত্রদের পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন… আমি বলেছিলাম যে, সংবিধান একটা রাফ খাতা নয় যে, ছুঁড়ে ফেলে দিলাম।”
তিনি বলেন, “আমি বলব, আমাদের সন্তানদের কাছে, যারা এই ঘোষণা দিয়েছে (সংবিধানের কবর দেয়া হবে), বৈষ্যমবিরোধী ছাত্রদের কাছে অনুরোধ জানাব, কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করবেন, ভুল বুঝবেন না… সেটা হলো এই, এধরনের কথাগুলো ফ্যাসিবাদের মুখ দিয়ে আসে। কবর দিয়ে দেবো, মেরে ফেলবো, কেটে ফেলবো, ছিঁড়ে ফেলবো… এই সমস্ত কথা ভালো কথা নয়।
“জাতি তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে, আমরাও তাকিয়ে আছি তোমাদের দিকে। তোমাদের মুখ থেকে এই ধরনের কথা আমরা আশা করি না।
“আমি ’৭২ সালের সংবিধানের সমর্থক নই, আমি একাত্তর সালের সংবিধানের মুক্তিযুদ্ধের রক্তের সমর্থক। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বলেই এই সংবিধা। যদি মুক্তিযুদ্ধটা একাত্তরের আগেই অর্থাৎ একাত্তরের প্রথম দিকে শেষ হয়ে যেত তাহলে ৭১ সালের সংবিধান বলা হত।”
‘একাত্তর সালে যুদ্ধ কি অন্যায়’
মির্জা আব্বাস বলেন, “কিছু লোক বাইরে থেকে সরকার গঠন করে ফেলেছে… তারা আবার বলেও আমাদের সাথে এদেশের কথাবার্তা হয় এবং তাদের কথাবার্তার যে ধাঁচ, আজকে আমাদের ছাত্রদের কথাবার্তার যে ধাঁচ …একরকম।”
একাত্তরে যুদ্ধ করায় কি অন্যায় হয়েছে? এ প্রশ্ন করে তিনি বলেন, “আমি জানি একটা পক্ষ বলবে যে, হ্যাঁ ওইদিন পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন করে অন্যায় করেছেন। বলতে পারেন। কিন্তু আমরা কি যুদ্ধ করে অন্যায় করেছিলাম, দেশকে স্বাধীন করে কি অন্যায় করেছিলাম?”
’২৪ আন্দোলনকে কেউ ব্র্যান্ডিং করবেন না’
২০২৪ সালের আন্দোলনকে কেউ ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা যেন না করে সেই আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্বাস বলেন, “যিনি আজকে বক্তব্য দিয়েছেন, আমি তাকে অনুরোধ জানাব, টেলিভিশনে ক্যামেরায় দেখেন কি বলেছেন। অহংকার আল্লাহতালা পছন্দ করে না। হাসিনা অহংকার করেছিল, পতন হয়ে গেছে। হাসিনার পতন আমাদের কষ্টের অর্জন, এরকম বালখিল্য কথা বলে জাতিকে বিভক্ত করবেন না। এটা আমার সর্বশেষ অনুরোধ।”
‘উস্কানিদাতারা এখানেই আছে’
মির্জা আব্বাস বলেন, “আজকে আওয়ামী লীগের দোসরদের মন্ত্রণালয়ে রেখে… এই যে সচিবালয়ে কয়েকদিন আগে আগুন লেগেছে, এর আগে চট্টগ্রাম সি-পোর্টে মালবহনকারী বার্জে আগুন লেগেছিল, আনসার বিদ্রোহ হল… আরও কত কিছু হবে। এত কিছু হওয়ার সুযোগ কেনো আমরা দিচ্ছি এবং দেবে কেন?”
তিনি বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, এই যে আগুন (সচিবালয়), এই যে বিদ্রোহের (আনসার বিদ্রোহ) ঘটনা, এসব এমনি এমনি ঘটছে না, খামখা ঘটছে না। কেউ না কেউ উস্কানি দিচ্ছে এবং তারা সচিবালয়েই বসে আছেন…. সবাইকে কিন্তু আমরা চিনি।”
তিনি বলেন, “আমাদের অবস্থান থেকে বার বার বলেছি যে, আওয়ামী লীগের প্রেত্মাতাকে রেখে… হাসিনা চলে গেছে কিন্তু তার প্রেত্মাতারা সব রয়ে গেছে… আমার সামনে এখন ৮ জনের নাম আছে। আমি নাম বলব না, এরা সবাই সচিব হিসেবে মন্ত্রণালয়ে অবস্থান করছে।
“সবচেয়ে আশ্বর্যজনক বিষয় হলো এতো বিরোধিতার পরও মাত্র দুই-তিনদিন আগে সচিবালয়ে আরেকজন প্রাক্তন বাকশালী সচিবকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”
আব্বাস বলেন, “এখন বাকশালীদের প্রেত্মাতাকে বগলদাবা করে নিয়ে আপনারা কি সংস্কার করবেন, জাতির কাছে প্রশ্ন জাগে? আমার কাছেও প্রশ্ন জাগে? আমরা কি আওয়ামী লীগকে আবার ফিরিয়ে আনার রাস্তা করে দিচ্ছি?”
তিনি বলেন, “অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, সংস্কারের কথা বলছেন। করেন, যতটুকু লাগে করেন। আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু যথাসময়ে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন দেবেন।”
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বাযক রফিকুল আলম মজনু। সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটি সদস্য কাজী আবুল বাশার, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হক, সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার নুরুদ্দিন আহমেদ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি বাছির জামাল, সাংবাদিক কামরুজ্জামান রাজিব, মহসিন হোসেন, নাজিয়া আফরিন, আহমেদ সালেহীন, রেজা করীম, বাবুল তালুকদার, মো. মহসিন।
উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের হারুনুর রশিদ হারুন, লিটন মাহমুদ, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, মনির হোসেন চেয়ারম্যান, সাইদুর রহমান মিন্টু, আব্দুস সাত্তার, মীর হোসেন মীরু, ফরিদ উদ্দিন, ফারুকুল ইসলাম, শরীফ হোসেন, আরিফা সুলতানা রুমা।