মোঃ এমদাদ উল্যাহ,চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা): জনগণই সকল ক্ষমতার অধিকারী। তাই জনগণের সম্মতি ছাড়া কেউ নিজেকে শাসক হিসেবে দাবি করতে পারে না। জণগণের অনুমতি ছাড়া কোন আইন পাশ হতে পারে না। এটাকেই বলে জণগণের ক্ষমতা ও গণস্বার্বভৌমত্ব। যে কোন বিষয়ে জনগণ যদি নিজের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসতে পারে, সেটাই আমাদের সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে। স্বৈরশাসক ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পাশ করেছে, সংবিধান বদলে দিয়েছে। সবকিছু বদলে দিয়ে তিনি নিজের নামে রাষ্ট্রের নামকরণ করেছে। এটা কি তিনি করতে পারেন? উত্তর হচ্ছে, না। যদি গণ-স্বার্বভৌমত্ব থাকে তাহলে এটা তিনি করতে পারেন না। জনগণের পরামর্শে কাজ করতে হবে। এটা যেই সরকার করবে না, সেই সরকারের ভাগ্য স্বৈরশাসকের মতো হবে। আর জনগণ যখন এ বিষয়ে সোচ্চার থাকে, তখনই কথা বলে, সমাধান করতে চায়। তার ব্যতয় ঘটলে জনগণ গণ-অভ্যুত্থান ঘটায়। কবি, গবেষক ও দার্শনিক ফরহাদ মজহাদ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিলকিছ আলম পাঠাগারের উদ্যোগে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সমাজ গঠন ও বই পড়া প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ড. ইউনুস সাহেব গণ অভ্যূত্থানের পর ক্ষমতায় এসেছে। গঠন করেছে অনেকগুলো কমিশন। কমিশনের লোকেরা উপরে বসে বসে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্কারের প্রস্তাবনা করতেছে। এদের কাদের সঙ্গে আলাপ হচ্ছে। জনগণ-তাদের সঙ্গে কতটা উপস্থিত। উত্তর হলো, না। আপনাদের(জনগণ) জিজ্ঞাস করছিল? চৌদ্দগ্রাম উপজেলার হিসেবে কি সমস্যা, কুমিল্লা জেলা হিসেবে কি সমস্যা? তারা কি জানতে চেয়েছে? এভাবে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার সমাজ সংস্কার করতে পারে না। তারা জনগণের অভিপ্রায় থেকে বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে।
কোমাল্লা ইবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান মাওলানা মোহাম্মদ নুরুল আলম খানের সভাপতিত্বে ও কবি ইমরান মাহফুজের সাঞ্চলনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক এইচ আর হারুন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের পরিচালক সাহাব উদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আগা আজাদ চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ, চৌদ্দগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ফরায়েজী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম মীর হোসেন। আলোচক হিসেবে ছিলেন কবি, গবেষক ও সাংবাদিক ড. কাজল রশীদ শাহীন, মোহাম্মদ রোমেল, শিশু সাহিত্যিক মামুন সারওয়ার, লেখক ও সাংবাদিক আবিদ আজম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফেনী সিটি কলেজের প্রভাষক এয়াছিন পাটোয়ারী। কবিতা আবৃত্তি করেন কবি আমজাদ হোসেন, আবৃত্তি ছড়াকার জয়নাল আবেদীন জয়, কাজী মাঈন উদ্দিন, আহসান উল্লাহ। এ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে ফরহাদ মজহারসহ অতিথিবৃন্দ শহীদ জামশেদুর রহমানের কবর জিয়ারত করেন এবং এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময় করেন।
মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক এইচ আর হারুন বলেন, আমাদের সময় এমন পাঠাগারের সান্নিধ্য পেলে নিশ্চয় আরও বড়ো হতাম। আজকের প্রজন্মের একটা অংশ বই থেকে দূরে। আমাদের অভিভাবক শিক্ষক সমাজের সবার উদ্যাগে শিক্ষার্থীদের বইয়ের মধ্যে আনা জরুরি। না হলে আমাদের আগামী অন্ধকার।
বিশিষ্ট ব্যাংকার আগা আজাদ চৌধুরী বলেন, চৌদ্দগ্রাম মাদকের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত। সম্মেলিত সাংস্কৃতিক মৈত্রী দরকার। দরকার প্রশাসনের পাশাপাশি অভিভাবকদের কঠোরতা। না হলে চৌদ্দগ্রাম শেষ হয়ে যাবে’।
সাংবাদিক ড. কাজল রশীদ শাহীন বলেন, কেবলমাত্র বই পড়ে একজন ব্যক্তি যে কোন কিছু হতে পারে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার দক্ষ প্রশাসক হতে গেলেও বই পড়া ছাড়া বিকল্প নেই।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সমাজ রাষ্ট্রের সংকট মোকাবিলা করতে পাঠাগারের ভূমিকা অসামান্য। বিলকিস আলম পাঠাগারের উদ্যাগে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে এবং এই প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ীরূপ দেয়া রাষ্ট্রের ভূমিকা জরুরি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, আজকের সামাজিক সংকটে দায় সবার। সমাজ ভেঙে পড়েছে সম্মিলিত ব্যর্থতায়। তাই সবার আন্তরিকতা, সততা ও গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে এ সমাজ দাঁড়াতে পারে নতুনভাবে। চৌদ্দগ্রামে অনেক গুণি মানুষের জন্ম। তাদের পদচারণা এ সমাজের জন্য সহায়ক। আমি আহবান করবো, ওনাদের মেধা ও গুণের সমাহার তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে।