আহমেদ আবু জাফর: আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি কাজেই মানুষের পরিচয় মেলে। আসুৃন, আমরা কোন না কোন ভাল কাজের দ্বারা মানুষ হিসেবেই পরিচিত হই। একজন সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত হই। ১৪ দফা একটি ভাল কাজের নাম। আর সেই ১৪ দফা বিএমএসএফ’র দাবি। সাংবাদিকদের প্রাণের দাবি। আপনিও যদি একজন সাংবাদিক। তাহলে বিরোধীতা নেই। এই ১৪ দফা দাবি বাস্তবায়নের মধ্যে লুকিয়ে আছে একজন সাংবাদিকের পেটের ক্ষুধা, কর্মস্থলে নিরাপত্তা-নিশ্চয়তা, পেশার মর্যাদা এবং কল্যান। আপনি যখন একজন পেশাদার সাংবাদিক। তবেই আপনাকে জেগে ওঠতে হবে এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য। আপনি বিএমএসএফ’র একজন গর্বিত সদস্য। আপনি আর ৭জন সাংবাদিকের মত নয়। হতে পারেন না। কারন; বিএমএসএফ কিছুটা ব্যতিক্রম সংগঠন।
ইতিমধ্যে, ৭ বছর বয়সী শিশু সংগঠন ৮ বছরে পথচলা বিএমএসএফ অন্য আর ৫টি সংগঠনের চেয়ে ব্যতিক্রমী দাবি নিয়ে মাঠে কাজ করছে। সাংবাদিকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দাবির প্রতি জনমত সৃষ্টি করে চলছে অবিরত। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় আমরা ছুটে চলছি ১৪ দফা দাবি বাস্তবায়নের বোঝা নিয়ে। কিছু কিছু জেলা উপজেলায় গিয়ে ওই বোঝার কিছুটা আপনাদের ঘাড়ে দিয়েও আসছি। কেউ কেউ মহাখুুশিও। আবার কেউবা বেজাড়। তবুও আমরা পিছপা নই।
আমাদের দাবি পৌঁছে দিয়েছি জাতিরজনকের কাছে। তিনি যেখানে ঘুমিয়ে আছেন মহাসুখে। গাছঘেরা ছায়া সুনিবিড় টুঙ্গিপাড়ায় আমরা তাকে কিছু সময়ের জন্য ঘুম ভাঙ্গিয়ে ছিলাম। নালিশ দিয়ে এসেছি আপনার সাংবাদিকরা আজ মর্যাদাহীন একটি ক্ষুধার্ত পেশায় পরিনত হয়েছে। এদেশের গণমাধ্যম গুলো আজ ‘ফসলের পাশের বেড়ায় পরিনত হয়েছে। বেশিরভাগ পত্রিকা- টিভির মালিকরা তার কোম্পানীর সাংবাদিকদের ক্যাডার কিংবা সৈন্য হিসেবে চালায়। সরকারের ওয়েজবোর্ড তারা বোঝেন না। আপনার হাতে গড়া ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল নামের প্রতিষ্ঠনটি আজ বুড়ো হয়ে গেছে। অথচ আজো তারা প্রকাশ করতে পারেনি এদেশে সাংবাদিকের সংখ্যা কত? এসব নালিশ আমরা তার কাছে দিয়ে এসেছি।
সাংবাদিকদের কস্টের কথা এদেশে ডাক্তারের তথ্য রয়েছে, শিক্ষকের সংখ্যা রয়েছে, কৃষকেরও সংখ্যা রয়েছে। মৎস অধিদপ্তরের নিকট রয়েছে জেলেদের সংখ্যা। প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর বলতে পারবে দেশে কোরবানীর পর কতগুলো গরু, ছাগল বেড়া আছে। কিন্তু তথ্য অধিদপ্তর কি বলতে পারবেন বাংলাদেশে সাংবাদিকের সংখ্যা কত? পারারই কথা, যখন দেশে কতগুলো পত্রিকা-টিভি আছে তা জোড় গলায় বলতে পারেন। তখন ওই পত্রিকা-টিভিগুলোতে কতগুলো সাংবাদিক কাজ করছে তাদের সংখ্যাতো জানারই কথা। কিন্তু আসলে তারা জানেন না এটাই সত্যি।
আপনারা জানেনতো, প্রতিটি গাড়ির নাম্বার আছে, রয়েছে রিকসার নাম্বারও। সাংবাদিকরা কতটা মর্যযাদাহীন যে তাদের কোন তালিকা নেই। আর যে কারনে যে কেউ সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এই পেশার সম্মানহানী করে চলছেই। তথ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়নের কাজটি সম্পন্ন করা হোক। আর তথ্য অধিদপ্তরকে সাংবাদিকদের অধিদপ্তর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হোক।
২০১৩ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম জন্মলাভের পর থেকে ওই প্রেস কাউন্সিলকে কার্যকর করে সারাদেশের পেশাদার সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়নের জন্য স্মারকলিপি পাঠিয়েছি একাধিকবার। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকটও স্মারকলিপি পাঠিয়েছি বিভিন্ন জেলা/উপজেলা থেকে। আমরা দাবি করেছি সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করার জন্য। এটি করা হলে কথায় কথায় মালিক পক্ষ কর্তৃক সাংবাদিক ছাটাই বন্ধ হবে। প্রতিনিয়ত হামলা-নির্যাতনের কবল থেকে বাঁচতে ‘সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে যুগোপযোগি আইন’ প্রণয়ন করার দাবি করেছি।
সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড জনগনের চোখের সামনে তুলে ধরতে বিটিভি, বাসস ও বাংলাদেশ বেতারে উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়ার। এতে উপজেলার খবরও সরকারের নিজস্ব এই তিনটি মিডিয়ায় উঠে আসবে। সরকারের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পিআরও নিয়োগের ক্ষেত্রে পেশাদার সাংবাদিকদেরকে সুযোগ দেয়ার। তাহলে বৃদ্ধ বয়সে অনেক সাংবাদিক পিআরও পেশায় প্রবেশ করে কিছুটা হলেও আর্থিক দৈন্যতা কাটাতে পারবে। পত্রিকাগুলোকে পূর্বের ন্যায় প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (কাগজ) বরাদ্দ দিতে হবে। এই বরাদ্দটি বাতিল করায় অনেক পত্রিকা পাঠকের চাহিদামত সংখ্যা ছাপাতে পারছেনা। ফলে পাঠক সংখ্যা দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে।
মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বইয়ে গণমাধ্যম বিষয়ক একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও রয়েছে আমাদের সংগঠনের। অধ্যায়টি চালু হলে স্কুল-কলেজ থেকেই শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যম বিভাগের ওপর অনার্স কোর্সে ভর্তি হতে আগ্রহী হবে। ফলে গণমাধ্যম জগতে আনাড়ি লোকজনের ভিড় কমে আসবে।
জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিও আমাদের। দেশে ৩য় বারের মত বিএমএসএফ’র শাখাসমুহ জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহ ঝাঁকজমক আয়োজনে উদযাপন করেছে। দেশে বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের স্বতন্ত্র দিবস এবং সপ্তাহব্যাপী নানা আয়োজন থাকে। আমরা দেশের গণমাধ্যমের পক্ষে জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট দু’বার স্মারকলিপি পাঠিয়েছি। আগামি বছর ২০২০ সালে দেশে চতুর্থবারের মত সাংবাদিকরা ৪র্থ জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহ উদযাপন করবে ইনশাল্লাহ । আমরা আশা করছি এর আগেই জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরেকবার গণমাধ্যম বান্ধব সরকার হিসেবে প্রমান দিবেন।
গণমাধ্যম বান্ধব সরকার জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রয়ণন করেছে। ওয়েজবোর্ড গঠন করেছেন, সাংবাদিকদের কল্যান ফান্ড গঠন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দূ:স্থ- অসহায় সাংবাদিকদের জন্য ২০ কোটি টাকা সাংবাদিক কল্যান তহবিলে জমা প্রদান করেছেন। এর আগেও তিনি আরো ১০ কোটি টাকা প্রদান করেছিলেন। সব মিলিয়ে বিশাল অংকের এই টাকা যেন প্রকৃত দু:স্থ-অসহায় সাংবাদিকদের মাঝে বিতরণ করা হয় এবং মফস্বলে কাজ করা সাংবাদিকরাও যেন একটি অংশ পেতে পারেন। সে ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিকতার মাঝে সুষম বন্টন করতে হবে।
‘জেগে ওঠো বাংলার বিবেক’ আসুন, এদেশের সাংবাদিকদের হারানো ঐতিহ্য ও মর্যাদা রক্ষা আন্দোলনে আপনিও একজন গর্বিত সহযোদ্ধা হউন। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত করা আপনার-আমার নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকুন যে কোন সময়। সাংবাদিক নির্যাতনমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হলে দেশ থেকে অন্যায়-অনিয়ম, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, দূর্নিতী-অনিয়ম লোপ পাবে। আর তাতেই গড়ে ওঠতে পারে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।
লেখক: বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা।