সামনের বাংলাদেশ যেন শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করে, এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেছেন, ‘এই দেশ ১৯৭১-এর শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সামনের বাংলাদেশ যেন শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করে। আমরা যদি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে না পারি, তাহলে সরাসরি সেটি আবারও ২৪-এর শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।’
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার কুমিল্লা টাউন হল মিলনায়তনে গণসংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন জোনায়েদ সাকি।
এদিন বিকেল চারটা থেকে ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কেমন বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক এই গণসংলাপের আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলন, কুমিল্লা জেলা কমিটি।
গণসংলাপ করে দেশের মানুষের মতামত শোনার চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে গেলে মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ২০১১ সালে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১৪, ২০১৮ সালের মতো ২০২৪ সালেও ভয়ংকর নির্বাচন করে ফেলতে পারল। আমরা এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছি। মানুষকে নতুন স্বপ্ন দেখানোর চেষ্টা করছি। নতুন একটি বন্দোবস্ত হবে। রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার হবে, প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার হবে, আইনের সংস্কার হবে, দেশে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি হবে। আমাদের তরুণেরা আত্মাহুতি দিয়ে একটি বিরাট অভ্যুত্থান করে দেশে একটি বিপ্লবী সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন। আমরা যতটা চিন্তা করতে পেরেছি, তার চেয়ে অনেক বড় স্বপ্ন আমাদের সামনে হাজির করেছেন তরুণেরা।’
তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে না পারলে জনগণের থেকে রাজনৈতিক দলগুলো অনেক দূরে সরে যেতে পারে মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা নিজের জনগোষ্ঠীর জন্য, নিজের দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার মতো সাহস দেখিয়েছেন। এর চেয়ে বড় মানবিক মুহূর্ত আর কিছুই হতে পারে না। আমাদের সন্তানেরা যে মানবিক মুহূর্ত তৈরি করেছেন, আমাদের সেই দায় বহন করে চলতে হবে। তাদের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক শক্তি এবং সব নাগরিকের সামনে এটি এখন বড় দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমরা এই দায় থেকে মুক্ত হতে পারি না।’
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি বলেন, সচিবালয়ে আগুন লাগল কীভাবে? রাষ্ট্রের যতটুকু সক্ষমতা আছে, সবটুকু দিয়ে এ ঘটনার তদন্ত করতে হবে। নিরাপত্তার কোথায় সংকট হচ্ছে, সেটা বের করতে হবে। সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডকে মামুলি কোনো দুর্ঘটনা হিসেবে দেখার কারণ নেই। দেশ নিয়ে সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে চায়। বর্তমানে সরকারকে বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য দাবি দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। মানুষ জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত, আবার বাজারে দ্রব্যমূল্য কমছে না। কেন দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, সরকারকে সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলন, কুমিল্লা জেলা আহ্বায়ক ইমরাদ জুলকারনাইনের সভাপতিত্বে গণসংলাপে বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহের হোসেন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য হাসান মারুফ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ, কুমিল্লার আইনজীবী আরিয়া ইমাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গণসংহতি আন্দোলন, কুমিল্লা জেলার সদস্যসচিব মো. হাবিবুর রহমান। গণসংলাপে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ কেমন বাংলাদেশ চান, এ নিয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।