সঠিক বিচার ফয়সালার প্রতিদান

পিবিএ: প্রতিটি ভালো কাজের জন্য রয়েছে পুরস্কার বা প্রাপ্তি। প্রবাদ আছে, যেমন কর্ম তেমন ফল। সুতরাং ব্যক্তি পরিবার ও সমাজ জীবনে যারা বিচার ফয়সালার কাজে জড়িত, তারা যদি সঠিক বিচার ফয়সালা করেন, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও পরকালে অসামান্য প্রতিদান। কুরআনুল কারিমেও সঠিক বিচার ফয়সালা এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের নির্দেশনা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতাকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।’ (সুরা নহল : আয়াত ৯০)

এ আয়াতে আদল বা ন্যায়পরায়ণতাকে ফরজ হিসেবে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। এ কারণেই বিচার ফয়সালায় ন্যায়পরায়ণতা হবে কেয়ামতের দিন আরশের ছায়া লাভের অন্যতম কারণ। কুরআনুল কারিমে নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষকে কেমন ন্যায়পরায়ণতার দিক থেকে কেমন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, তার বর্ণনা উঠে এসেছে হাদিসে-

‘পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষই দায়িত্বশীল, কেয়ামতের দিন প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যে ব্যক্তি তার দায়িত্ব পালনে (বিচার-ফয়সালায়) ন্যায়পরায়ণতার পরিচয় দেবে, তার জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। সুতরাং দায়িত্বশীল হতে হবে এমন-

– পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে ন্যায়পরায়ণ হতে হবে।

– সমাজের জনপ্রতিনিধিকে ন্যায়পরায়ণ হতে হবে।

– মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের প্রধান পর্যন্ত সব ক্ষেত্রের দায়িত্বশীলকে ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। কারণ, প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সঠিক বিচার ফয়সালা ও দায়িত্ব পালনের প্রতিদান

দায়িত্ব পালনে ন্যায়পরায়ণ হলে তাদের জন্য রয়েছে মহান পুরস্কার। হাদিসের একাধিক বর্ণনা তাদের জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রতিদান লাভের কথা উঠে এসেছে-

– হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কঠিন হাশরের দিন যখন মহান আল্লাহ তাআলার আরশের ছায়া ব্যতিত আর কোনো ছায়া থাকবে না, তখন মাত্র সাত শ্রেণীর মানুষ আল্লাহ তাআলার আরশের নিচে ছায়া পাবে তাদের মধ্যে অন্যতম ও প্রথম হচ্ছে- ‘ইমামুন আদেলুন তথা ন্যায়পরায়ণ শাসক বাদশা বা বিচারক।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

– হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই যারা ইনসাফ (প্রতিষ্ঠা) ও ন্যায়বিচার করবেন মহান আল্লাহ তাআলার কাছে তারা নূরের মিম্বরে আসন গ্রহণ করবেন। এরা হচ্ছে এমন লোক যারা তাদের বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে এবং যেসব দায়-দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পণ করা হয় সেসব বিষয়ে ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচার করেন’। (মুসলিম)

– হজরত ইয়াদ ইবনে হিমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের অধিকারী হবে তিন শ্রেণীর লোক, প্রথমত- ন্যায়বিচারক বা শাসক, যাকে তাওফিক দান করা হয়েছে; দ্বিতীয়ত- কোমল হৃদয় ও নরম দিল লোক, যার অন্তরে প্রত্যেক আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম ভাইদের প্রতি অতিশয় কোমল ও নরম আর তৃতীয়ত- যে লোক শরীর ও মনের দিক থেকে পুতঃপবিত্র, নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী ও সন্তান বিশিষ্ট তথা সংসারী’। (মুসলিম)

সুতরাং ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা দায়িত্বশীল রয়েছেন, তাদের জন্য যথাযথ দায়িত্ব পালন ও সঠিক বিচার ফয়সালা করা আবশ্যক কর্তব্য। কেননা যার যার দায়িত্ব সম্পর্কেই পরকালে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যারা সঠিক দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের জন্য রয়েছে হাদিসে উল্লেখিত এসব প্রতিদান।

সুতরাং প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তি উচি ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। তবেই প্রতিটি পর্যায়ে সুখ ও শান্তি বিরাজ করবে। নিয়ম-শৃঙ্খলা ঠিক থাকবে। আর পরকালে পাবে হাদিসে উল্লেখিত উত্তম প্রতিদান।

আল্লাহ তাআলা গোটা মানবজাতির সবাইকে যার যার দায়িত্ব পালনে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করে উত্তম প্রতিদান লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

পিবিএ/এসডি

আরও পড়ুন...