পিবিএ ডেস্ক: ধূমপানের পর নিজের সন্তানের কাছে ঘেষাটা সন্তানের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। আসুন জেনে নেই ধূমপানের ফলে শিশুর কী সমস্যা হতে পারে। ৭০০০ রাসায়ানিক! সাত হাজার ক্ষতিকর রাসায়ানিক পাওয়া গিয়েছে সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়ায়। এদের মধ্যে ১০০টি অত্যন্ত ক্ষতিকর। অনেক সময় গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তান বেরিয়ে আসে। হবু মায়ের সামনে যদি বাড়ির অন্য সদস্যেরা সিগারেট টানেন, তা হলেও বাচ্চার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী, অন্য ঘরে সিগারেটের ধোঁয়া টানলেও সন্তানসম্ভবার শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে।
সাইড স্ট্রিম বেশি ক্ষতিকর
সিগারেটের ধোঁয়া দু’ভাবে অধূমপায়ীর শরীরে প্রবেশ করে। সিগারেট টেনে ধোঁয়া ছাড়া হলে তা যখন অন্য জন বাতাসের সঙ্গে টেনে নেন, তাঁকে বলে মেন স্ট্রিম। আর সিগারেট জ্বালিয়ে রাখা আছে, তার থেকে ধোঁয়া সরাসরি বাতাসের সঙ্গে টেনে নিলে তাকে বলে সাইড স্ট্রিম।
শ্বাসনালী ও ফুসফুসের কষ্ট
লক্ষ্য করে দেখবেন, বাচ্চারা খুব দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়। তাই সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়া চট করে ওরা টেনে নেয়। শিশুদের শ্বাসনালী আকারেও অনেকটা ছোট। তাই নিজেদের অজান্তে বুক ভরে টেনে নেয় বাবা-কাকা-মামার মতো নেশাড়ুদের ছেড়ে দেওয়া বিষ ধোঁয়া। সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিংয়ের ফলে বাচ্চার অত্যন্ত সংবেদনশীল শ্বাসনালী আর ফুসফুস ‘ইরিটেটেড’ হয়ে পড়ে। শুরু হয় সর্দিকাশি। এ রকম চলতে থাকলে বারে বারে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের প্রদাহ হয়ে ক্রনিক সর্দিকাশি, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি ও নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। যে সব শিশুর অ্যাজমা আছে, তামাকের ধোঁয়ায় তাদের বারে বারে অ্যাটাক হয়। অনেক সময় ইনহেলার বা ওষুধে কোনও কাজ হয় না।
আচমকা শেষ নিঃশ্বাস পড়ার ঝুঁকি থাকে
মা, বাবা অথবা বাড়ির অন্য সদস্যদের ধূমপানের কুপ্রভাবে এক বছরের কমবয়সী বাচ্চাদের আচমকা (Sudden infant death syndrome বা SIDS) মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শুরুতে মা ধূমপান করলে অথবা পরোক্ষ ভাবে সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে থাকলে এক বছরের কমবয়সী শিশুদের মধ্যে আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
নাক-কান-দাঁতের অসুখ থেকে ক্যানসার
হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন, সিগারেটের বিষ ধোঁয়া শুধুই যে ফুসফুসের বারোটা বাজায় তা নয়, শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বিকল করে দিতে পারে। নাক-কান-গলায় সংক্রমণ, কানের ইউস্টেশিয়ান টিউবে বাধা, অটাইটিস মিডিয়া, মধ্য কর্ণের সংক্রমণ থেকে ক্রমশ বধির হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। কথা বলার সমস্যা তো হয়ই, মানসিক বিকাশও ব্যাহত হতে পারে।
বাড়ির বারান্দায় সিগারেট ধরালেও শিশুর ক্ষতি
নিকোটিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কিছুটা ওয়াকিবহাল শিশুর নিকটাত্মীয়েরা অনেক সময় বাড়ির বারান্দায় গিয়ে সিগারেট টেনে এসে বাচ্চাকে কোলে নেন। মনে রাখবেন, এর ফলেও শিশুর শরীরে সিগারেটের বিষ প্রবেশ করে। ধূমপানের পর জামাকাপড়ে ও ধূমপায়ীর শরীরে বিষাক্ত রাসায়ানিক থেকে যায় কমপক্ষে ঘণ্টা চারেক। তাই বারান্দায় সিগারেট টানলেও বাচ্চার ক্ষতির পরিমাণ বহাল থাকে পুরোদমে।
পিবিএ/বিএইচ