সম্পদের লোভে লিপিকা গোমেজকে হত্যা, দুই ঘাতক গ্রেফতার

রাজধানীর পুরান ঢাকায় নটরডেম কলেজের অফিস সহকারী লিপিকা গোমেজ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

আসামিদের বরাত দিয়ে সংস্থাটি বলছে, লিপিকার পূর্বপরিচিত জুয়েল রানার (২১) ধারণা ছিলো লিপিকার বাসায় বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ রয়েছে। সেগুলো লুট করতেই ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে বাসায় প্রবেশ করে জুয়েল ও তার বন্ধু নজরুল (২২)। পরবর্তীতে চিনে ফেলার ভয়ে লোহার পাইপ দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়।

গতকাল রোববার সদরঘাট ও পুরান ঢাকা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যা জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পশ্চিমাঞ্চলের ডিআইজি সায়েদুর রহমান।

তিনি বলেন, রাজধানীর পুরান ঢাকার সুত্রাপুর থানার ৭৫ নং ঋষিকেশ দাস রোডের একটি বাসা থেকে ঢাকা নটরডেম কলেজের অফিস সহকারী লিপাক গোমেজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দেশে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত লিপিকা গোমেজ ১৮ বছর ধরে একাই বসবাস করতেন। তার কোন সন্তানাদি ছিলো না। গত ১০ সেপ্টেম্বর লিপিকা গোমেজ অফিস করেন। তবে পরের দিন কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ায় অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও সন্ধানে কলেজের দুই স্টাফ জনি ও জয়দেবকে তার বাসায় পাঠান। জনি ও জয়দেব লিপিকা গোমেজের গিয়ে কেয়ারটেকার মিতুকে নিয়ে লিপিকা গোমেজের বাসায় প্রবেশ করে খাটের উপরে তার মৃতদেহ দেখতে পান। পরে তথ্য পেয়ে মামাতো ভাই প্রিন্স গোমেজ এসে পুলিশকে সংবাদ দিলে সূত্রাপুর থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠায়। তার মাথায় বাম পাশে ভোতা অস্ত্রের আঘাত (কাটা দাগ) ও বিছানায়, বালিশে জমাট বাঁধা রক্ত দেখা যায়। এই ঘটনায় ভিকটিমের মামাতো ভাই প্রিন্স গোমেজ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানার মামলা দায়ের করেন।

মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)। ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক তদন্তের এক পর্যায়ে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জুয়েল রানা(২১) ও নজরুল (২২)কে আটক করা হয়।

পিবিআইয়ের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, তারা উভয়েই ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করে এবং তাদের দেওয়া তথ্য মতে তাদের হেফাজত হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত এক টি নোজ প্লাস, দুই টি স্কু ড্রাইভার এবং চুরি যাওয়া বিভিন্ন মালামাল উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।

গ্রেফতার দুই আসামির বরাত দিয়ে ডিআইজি সায়েদুর বলেন, জুয়েল রানা নজরুলদের বাসায় মেসে খেতো। সেখান থেকেই তাদের পরিচয় এবং ৭ থেকে ৮ বছরের বন্ধুত্ব। জুয়েল রানা নজরুলকে জানায় তার পাশের বিল্ডিং এর চতুর্থ তলায় একজন নারী একা থাকে। তার কোনো স্বামী ও সন্তান নেই। তার বাসায় চুরি করলে অনেক টাকা পয়সা পাওয়া যাবে। পরিকল্পনা মোতাবেক জুয়েল রানা তার স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে ঘটনার তারিখে রাত অনুমান ১১টার দিকে নজরুলকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসায় আসে। রাত আনুমানিক ১টার দিকে নজরুল ছাদের উপর দিয়ে এসে রশির সাহায্যে ঝুলে ভিকটিমের বাসার পিছনের ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে।

নজরুল বাসার মেইন দরজা খুলে ছাদে গিয়ে জুয়েল রানাকে ডেকে আনে। তারা একত্রে বাসায় চুরি করার সময় ভিকটিম শব্দ করলে নজরুল একটি লোহার পাইপ দিয়ে ভিকটিমের মাথায় সজোরে আঘাত করে এবং জুয়েল রানা বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে। তারা উভয়ই ভিকটিমের দুইটি মোবাইল, হাত ব্যাগ নিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে জুয়েল রানার বাসায় চলে যায়। হাত ব্যাগে থাকা ২৬ হাজার ৩৫০ টাকা ভাগ করে নেয়। ভোরে নজরুল বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসায় চলে যায়। পরবর্তীতে মোবাইল ফোন দুটি সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।

এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, লিপিকা গোমেজ হত্যা ও তার বাসায় প্রবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে নটরডেম কলেজের একাধিক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে সন্দেহভাজন কাউকে পাওয়া যায় নি। তারপরও আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েয়েছে।

আরও পড়ুন...