
পিবিএ, ঢাকা: প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ সরকারের চাকরিজীবীদের জন্য চালু হচ্ছে চিকিৎসা বীমা। উন্নত বিশ্বের মতো সরকারি চাকরিজীবী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকার এই চিকিৎসা বীমা চালুর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এর আওতায় কর্মকালে কোনো চাকরিজীবী অসুস্থ হলে চিকিৎসাজনিত ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার।
বিশেষ করে হাসপাতালের বেড ভাড়া, কনসালটেশন ফি, রুটিন পরীক্ষা, ছোট-বড় অস্ত্রোপচার খরচ ও ওষুধ কেনার পুরো খরচ বহন করবে। বিনিময়ে চাকরিজীবীদের বেতন থেকে সামান্য অর্থ (যা এখনও নির্ধারণ হয়নি) কেটে রাখা হবে।
এ বীমা চূড়ান্ত করতে অর্থ মন্ত্রণালয় সাত সদস্যের কমিটি করেছে। এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে কমিটি সবকিছু পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেবে। আসন্ন বাজেটে এ বীমার ঘোষণা আসতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।
সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এজন্য ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসা বীমা নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। এ সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ তৈরি হচ্ছে। এরপর তা অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি অনুমোদন দিলে পরে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে এটি কার্যকর হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও গবেষণা সেলের তথ্যানুযায়ী, দেশে সরকারি চাকরির প্রথম শ্রেণীতে কর্মরত রয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯১ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৬১ জন, তৃতীয় শ্রেণীতে আট লাখ ২৬ হাজার ৫১৭ জন এবং চতুর্থ শ্রেণীতে ২ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৪ জন। সবমিলিয়ে সারা দেশে মোট সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন ১৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৩ জন। চিকিৎসা বীমা চালু হলে তাদের প্রত্যেকের চিকিৎসা ব্যয় জোগান দেবে সরকার।
সূত্রমতে, চিকিৎসা বীমার খসড়া তৈরি করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সেখানে বলা হয়েছে, চিকিৎসা বীমার সুবিধা নিতে একজন চাকরিজীবীকে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বীমা করতে হবে।
১-৫ লাখ টাকার মধ্যে ৯টি স্লাব থাকবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেড ও পদবি অনুযায়ী এসব স্লাবে বীমা করতে হবে। এ বীমার আওতায় উল্লিখিত সব সুবিধা নিতে সরকারি চাকরিজীবীদের বাৎসরিক একটি প্রিমিয়াম (বীমার কিস্তি) দিতে হবে। প্রিমিয়াম ও ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ হবে বীমার মোট অঙ্কের ওপর। অর্থাৎ বীমার টাকা বেশি হলে প্রিমিয়াম ও ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়বে। আর বীমার অঙ্ক কম হলে প্রিমিয়াম ও ক্ষতিপূরণ কমবে।
সূত্র আরও জানায়, বাৎসরিক প্রিমিয়াম চাকরিজীবীদের বয়সের ওপর নির্ভর করে ৫টি গ্রুপে হতে পারে। প্রতি গ্রুপে ৯টি স্লাব করা হতে পারে।
গত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে বিগত সরকার ও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের মুক্ত আলোচনা হয়। সেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের চিকিৎসা বীমা চালুর প্রস্তাব আসে। এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠায়।
পিবিএ/এএইচ