সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী সব ছাত্রকে পদত্যাগের আহ্বান

গুটিকয়েক ছাত্রনেতা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ ও মন্ত্রণালয়ের নানাকাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদে থেকে দল গঠনে কাজ না করে দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ডাকসু’র সাবেক এই ভিপি। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, আজ তাতে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর বিজয়নগরের আল রাজি কমপ্লেক্সে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নুরুল হক নুর বলেন, সরকারে থেকে নির্বাচন করলে তা নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। সরকারে তিনজন ছাত্রনেতার একজন পদত্যাগ করে সরকারে এসেছেন। বাকি দু’জন তো আছেন। সরকারে থেকে দলীয় সরকারের অধীনে শেখ হাসিনা নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। তা রুখে দেয়ার জন্য আমরা আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছিলাম। এখন এই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থেকে যদি তারা (ছাত্ররা) দল গঠন করেন তাহলে এটা সরকারি দল হবে। তাহলে আওয়ামী লীগের মধ্যে এবং এই (জাতীয় নাগরিক পার্টি) দলের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

তিনি বলেন, অবশ্য আমরা চাই তারা (জাতীয় নাগরিক পার্টি) ভালো রাজনীতি করুক, শুদ্ধ রাজনীতি করুক। কিন্তু সরকারে থেকে সেটা তো সম্ভব নয়। একজন দল গঠন করেছেন, তিনি পদত্যাগ করেছেন, বাকি দু’জন তো সরকারে রয়েছেন। আর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ছাত্র উপদেষ্টাদের তদারকি কমিটি রয়েছে। সরকারের সঙ্গে কাজে তিন উপদেষ্টার আজ্ঞাবহ নেক্সাস (যোগসূত্র) তৈরি হয়েছে।

নুর বলেন, ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেড় দশকের ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের জনআকাক্সক্ষা তৈরি হলেও দেশি-বিদেশি অদৃশ্য ষড়যন্ত্রে সেটি হয়নি। একটি নির্দিষ্ট বলয়কেন্দ্রিক সরকার গঠিত হয়েছে। যার ফলে গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছিল, আজ তাতে ফাটল ধরেছে, বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। যা এই মুহূর্তে জাতির জন্য কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।

তিনি বলেন, তারুণ্যের রাজনৈতিক দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদ রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণকে সব সময় উৎসাহিত করে, নতুন দলকে স্বাগত জানায়। তবে গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গুটিকয়েক ছাত্রনেতার সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় অযাচিত হস্তক্ষেপে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জনগণের মধ্যে একটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। যেহেতু আন্দোলনের পরিচিত মুখ থেকে সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, সেহেতু সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা ও জনগণসহ রাজনৈতিক নেতাদের আস্থা ধরে রাখতে সরকারে থাকা অন্য দুই ছাত্র উপদেষ্টাসহ সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী সব ছাত্রকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি।

নুরুল হক নুর বলেন, গত শুক্রবার নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানেও জেলা প্রশাসকের নোটিশে ঢাকার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মতো বিষয় দেখা গেছে, গাড়ি সরবরাহে মালিক সমিতি ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বা জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোনো একক সংগঠন বা নেতার দ্বারা সংঘটিত হয়নি। রাজনৈতিক নেতাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপ, ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। কাজেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী চেতনার বয়ানের মতো কোনো অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক ন্যারেটিভ তৈরি না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এ সময় কিছু দাবি তুলে ধরেন নুর। সেগুলো হলো- জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন, আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং শহীদ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রসংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা।

আরও পড়ুন...