‘সরকারে প্রতিনিধি রেখে ছাত্ররা দল গঠন করলে নিরপেক্ষতা থাকবে না’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করলে নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকার আনার প্রয়োজন হবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর, সরকারে থেকে কেউ নির্বাচন করতে চাইলে রাজনৈতিক দলগুলো তা মেনে নেবে না।

গতকাল মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে ভাবনা, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র, সংস্কার প্রস্তাবে প্রতিক্রিয়াসহ আরও অনেক বিষয়ে তার দলের অবস্থান তুলে ধরেছেন মির্জা ফখরুল। সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য এখানে প্রকাশ করা হলো।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক গঠন নিয়ে আলোচনা রয়েছে। এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নেবে না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি সরকার পূর্ণ নিরপেক্ষতা পালন করে, তাহলেই তারা নির্বাচন পরিচালনা করা পর্যন্ত থাকবেন। তা না হলে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে।

বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুললে ছাত্র নেতারা বলেন শুধুমাত্র নির্বাচন আয়োজনের জন্য গণঅভ্যুত্থান হয়নি। এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের খুব পরিষ্কার করে বলা আছে, ভাই। আমরা আন্দোলন করছি, রাজনৈতিক দল করছি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান জন্যে। আর গণতন্ত্রে ঢোকার প্রথম ধাপটিই হচ্ছে, নির্বাচন। যেহেতু তিন তিনটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকার নষ্ট করে দিয়েছে, জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আমার ভোটের অধিকারটা তো প্রথম অধিকার নাগরিক হিসেবে। আমি এই দেশের মালিক। আমার একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে, আমার ভোটটা। সেটাই তো আমরা দিতে পারিনি। সুতরাং নির্বাচন চায় না বা নির্বাচন প্রধান নয়- এ কথা চিন্তা করাও তো ভুল। নির্বাচনটা আমরা মনে করি প্রধান। কারণ এই নির্বাচনের মাধ্যমেই আমি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারবো। আমি গণতান্ত্রিক সংবিধানের পরিবর্তনগুলো আনতে পারবো। গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র আবার পুনর্নির্মাণ করতে পারবো। এছাড়া আমার বিকল্প কিছু নেই।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেসব সংস্কারের কথা বলছে তা নির্বাচিত সরকার ছাড়া পুরোপুরি অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে যুক্তি দিতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, যেকোনো সংস্কারের অনুমোদন নেওয়ার জন্য নির্বাচিত সংসদের প্রয়োজন হবে। এ কারণেই দ্রুত নির্বাচন দেওয়া প্রয়োজন।

মির্জা ফরখরুল বলেন, ‘উনি (অধ্যাপক ইউনূস) যতগুলো সংস্কারের মধ্যে হাত দিয়েছেন, অতগুলো সংস্কার করতে গেলে ১০ বছরের মধ্যেও শেষ হবে না। আর সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। দুবছর আগে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা দিয়েছি আমরা। তার মধ্যে এই বিষয়গুলি তো রয়েছে।

সংবিধান সংস্কারের বিষয় রয়েছে, জুডিশিয়াল কমিশনের কথা আমরা বলেছি, আমরা ইলেকশন কমিশনের কথা বলেছি, আমরা ব্যুরোক্রেসি সংস্কারের কথা বলেছি ৩১ দফায়, আমরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা বলেছি -এগুলো আমাদের সমস্ত বলা আছে।

এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, সংসদ ছাড়া সাংবিধানিক সংস্কার কঠিন হবে। সংবিধানে কিছু কিছু পরিবর্তন আনার দরকার আছে। কিন্তু সেগুলা সংসদ ছাড়া সম্ভব না। সেজন্যই আমরা মনে করি, নির্বাচন যত দ্রুত হবে ততই ভালো।

কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে আবার স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসার যে আশঙ্কার কথা বলে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এক্ষেত্রে বিএনপির স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করা হয় কি? এই প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোনোমতেই না। কারণ আমরা কখনই স্বৈরতান্ত্রিক ছিলাম না। আমরা সবসময় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলাম। এখানে মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসি আমরাই নিয়ে আসছি। একদলীয় শাসনব্যবস্থা শেখ মুজিবের, সেখান থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে উত্তরণ তো জিয়াউর রহমান সাহেব করেছেন। গণমাধ্যমকে মুক্ত করা, আমরাই করেছি। পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি তো আমরাই নিয়ে আসছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরাই চালু করেছি। সুতরাই প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমাদেরকে কেউ স্বৈরাচারী আঙুল তুলবে এ কথা আমরা কখনই মেনে নিতে পারব না।’

এদিক থেকে বিএনপিকে ‘ডেমোক্রেসির চ্যাম্পিয়ন’ বলা যায় বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

আরও পড়ুন...