সরকার জনগণকে সুন্দর জীবন দেওয়ার চেষ্টা করছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেহেশত থেকে দেখে খুশি হবেন যে সরকার তার জনগণকে একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন দেয়ার চেষ্টা করছে, যার জন্য তিনি তার সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন।’ বহুল আলোচিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিকভাবে পেনশন স্কিম-প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা এবং প্রবাসী উদ্বোধন করেন। স্কিমটি চালু করার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শোকের মাসে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করলাম। প্রাথমিকভাবে ছয়টির মধ্যে চারটি স্কিম আজ উদ্বোধন করা হলো। অন্য দু’টি স্কিম পরে চালু করা হবে।’

তিনি সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প চালু করতে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে, বিশেষ করে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি কেবলমাত্র তার দলের শাসনামলে পেনশন স্কিমটি খুলতে চেয়েছিলেন। কারণ তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে অন্য কোনো সরকার এই জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করবে না। কারণ অতীতে তাদের একচেটিয়েভাবে নিজেদের ভাগ্য গড়তে দেখা গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় থাকার সময় পেনশন স্কিম চালু করতে চেয়েছিলাম। নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। আমরা ক্ষমতায় আসলে ভালো হবে, অন্যথায় এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে না।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জিয়া, এরশাদ ও খালেদার শাসনামলে অমানুষিকভাবে নির্যাতন, হত্যা ও গুম করায় আওয়ামী লীগ তার দলের নেতাকর্মীদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য আওয়ামী ফাউন্ডেশন গঠন করে পেনশন স্কিম খুলেছিল।

তিনি আরো বলেন, তারা এ স্কিমটি চালিয়ে যেতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের প্রতিটি ব্যক্তিকে একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আনার সিদ্ধান্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি সবচেয়ে বড় বিষয় যে আমরা বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে পেরেছি। এটি আমাদের আত্মতৃপ্তি দেয়।’ শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে দেশবাসীকেও ধন্যবাদ জানান। কারণ, তারা বারবার আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস দেখিয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থেকে তাদের সেবা করতে পেরেছে।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা, মা ও ভাইদের হত্যার মাধ্যমে সবকিছু হারিয়েছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর বাবা, মা, ভাই কাউকে পাইনি। কিন্তু দেশবাসীকে পাশে পেয়েছি। তাই দেশের সবাইকে একটি সুন্দর জীবন দিতে কাজ করে যাচ্ছি।’

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগীদের সাথেও মতবিনিময় করেন এবং তিনটি জেলা গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও রংপুর এবং সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল একটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইভেন্টের সাথে যুক্ত হয়।

প্রগতি স্কিমটি বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য, স্বকর্মে নিযুক্ত লোকদের জন্য সুরক্ষা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাসী এবং দেশের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সমতা প্রযোজ্য হবে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মূল লক্ষ্য দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকলকে এর আওতায় আনা এবং তারা তাদের ৬০ বছর বয়স হওয়ার পরে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।

পেনশন ব্যবস্থার বয়সসীমা প্রাথমিকভাবে ৫০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা পরে সংশোধন করা হয়। ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও টানা ১০ বছর ধরে কিস্তি পরিশোধের পর পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর আবদুর রউফ তালুকদার। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো: তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।

অনুষ্ঠানে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র ও দেখানো হয়।

আরও পড়ুন...