জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, সরকার দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। সাধারণ মানুষ, ভোটের প্রার্থী এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা বলছেন- আমরা ভোট দিতে পারছি না। কখনো কখনো সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারলেও সরকার ভোটের ফলাফল পাল্টে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি মহানগর উত্তরের বিশেষ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে সরকার স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করেছে। তাই ন্যায়বিচারভিত্তিক এবং সমতার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন সমাজ গঠন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এটা করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের নামেই।
জিএম কাদের বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে সব মানুষকে পর্যবেক্ষণে রাখবে সরকার। কে কী করছে, কোথায় খাচ্ছে- তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেওয়া হচ্ছে। দেশটাকে জেলখানা এবং দেশের মানুষকে ক্রীতদাস বানাচ্ছে। লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া দেশ একটি গোষ্ঠীর কাছে বন্ধক দিয়ে আমরা ক্রীতদাস হতে পারি না।
জিএম কাদের বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলাম। আওয়ামী লীগ জনগণের দল ছিল, তাদের দীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস আছে। মানুষের অধিকার আদায়ে আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগ আছে। যে আওয়ামী লীগ মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, আমরা সেই আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিলাম।
বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, কথা ছিলো- আমরা দুর্নীতি নির্মূল করব, বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করব। ভোটের অধিকার কতটা আছে, তা সবাই জানে। আর ভাতের অধিকার নিয়ে দেশের মানুষ কষ্টে আছে।
তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভ অনেক কমে গেছে, প্রতিদিনই কমছে। সরকার অনেক কথাই বলছে, কিন্তু আইএমএফ বলছে- রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলার। বকেয়া পরিশোধ করলে রির্জাভ দাঁড়াবে ১৯ বিলিয়ন ডলারে। বৈদেশিক মুদ্রা যা আয় হচ্ছে, ব্যয় তার চেয়ে অনেক বেশি।
জিএম কাদের বলেন, যদিও আমরা আমদানি অনেক নিয়ন্ত্রণ করছি। আমদানি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল পাচ্ছে না কলকারখানা। নিত্যপণ্য প্রয়োজন অনুযায়ী বাজারে আসছে না। ডলার সংকটের জন্য বেশি দামে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করে। ৮০ থেকে এখন ডলারের দাম ১১৫ টাকা হয়েছে। তার মানে ৮০ টাকার পণ্য ১১৫ টাকা দামে কিনে আমদানি করতে হচ্ছে। সব কিছু স্লো হয়ে গেছে, তাই স্বাভাবিকভাবে মানুষ আয় করতে পারছে না। অন্যদিকে রাজস্ব আয় কমে গেছে।
বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী ৪ মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার খরচ হয় আমদানির জন্য। প্রতিদিনিই ডলার কমছে। এভাবে চললে এক সময় আমাদের রিজার্ভ ফুরিয়ে যাবে।
জি এম কাদের বলেন, পৃথিবীর যেকোন দেশের চেয়ে আমাদের দেশে রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ হয়। আবার সরকার পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থায় অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দিয়ে খরচ বাড়িয়ে ফেলেছে। সরকারের হাতে টাকা নেই, তাই টাকা ছাপতে হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে। একটি অসমর্থিত সূত্র অনুযায়ী, গেল ৫ বছরে ৫ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আবার টাকা ছাপানোর কারণে মুদ্রাস্ফিতি হয়ে মালামালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তাই মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একশ্রেণির মানুষের হাতে আছে কোটি কোটি বিলিয়ন। আবার মশানিধন করতে বেশি দামে নকল ওষুধ কিনছে।
দুপুরে চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক, প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে এবং পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের সঞ্চালনায় জরুরি সভায় বক্তব্য দেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
উপস্থিত ছিলেন- খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান আমার উদ্দিন আহমেদ ঢালু, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম-মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নাসির উদ্দিন সরকার, কাজী আবুল খায়ের, আনিস উর রহমান খোকন, এমএ রাজ্জাক খান, সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সাত্তার, প্রিন্সিপাল মোস্তফা চৌধুরী, মঈনুল রাব্বি চৌধুরী রুমন, আলমগীর হোসেন, মোহাম্মদ আলী, এসএম হাসেম প্রমুখ।