সরকার বিরোধীদের টার্গেট জুলাই!

লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। মধ্য জুলাই থেকে এক দফার ভিত্তিতে এই কর্মসূচি শুরু হবে। যুগপৎ আন্দোলনের ‘যৌথ রূপরেখা’ ঘোষণা নিয়ে যে মতভিন্নতা ছিল তা-ও কেটে গেছে। এক দফার আন্দোলনে নামার আগেই এই রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের এক দফা চূড়ান্ত করতে গত সপ্তাহে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি পরপর দুইটি বৈঠক করেছে। আন্দোলনের সাথে যুক্ত দলগুলোর পরামর্শ নিয়ে গত শুক্রবারের বৈঠকে এক দফা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি পয়েন্ট যুক্ত করে এই এক দফা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি; মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার; ফরমায়েশি সাজা বাতিল; নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।

জানা গেছে, নিজ নিজ মঞ্চ থেকে এক দফার যৌথ ঘোষণার পর থেকে লাগাতার আন্দোলনে যাবে বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। তবে লাগাতার সেই আন্দোলনের কর্মসূচি এখনো হয়নি। এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক সব দল ও জোটের সাথে আলোচনা করে এক দফা ঘোষণার আগেই কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।

বিএনপি সূত্র জানায়, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে এক দফার ভিত্তিতে লাগাতার যুগপৎ আন্দোলন শুরুর পর প্রথম ধাপে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচিই থাকবে। হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কোনো কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি ও এর মিত্ররা। তৃণমূল ও কেন্দ্রে আবারো গণসমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, পদযাত্রা, গণ-অবস্থান, মানববন্ধন, গণমিছিলের মতো কর্মসূচি পালিত হবে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন হবে ঢাকামুখী। সে ক্ষেত্রে ‘চলো চলো ঢাকা চলো’, ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকায় অবস্থানের মতো কর্মসূচি আসবে। দলটির সেই আন্দোলনের ব্যাপ্তি ‘স্বল্প সময়ের’ হবে বলেও নেতারা জানান।

এ দিকে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে রাষ্ট্র মেরামতের ‘যৌথ রূপরেখা’ও চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এটিও ঘোষণা করা হবে; কিন্তু দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আন্দোলনের অভিন্ন এক দফা ঘোষণার আগেই এটি ঘোষিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য গতকাল জানান, যৌথ রূপরেখা প্রায় চূড়ান্ত। এ ক্ষেত্রে শুধু শব্দগত কিছু হেরফের হবে। আশা করি, দ্রুতই তা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের এক দফা ঘোষণার আগেই ‘রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ রূপরেখা’ ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিএনপি প্রণীত ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের যৌথ ঘোষণাপত্র মোটা দাগে তিন দফায় আটকে ছিল। সেগুলো হলো : সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উচ্চ কক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি ও এমপিদের ক্ষমতা এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কার্যক্রম। পরবর্তী সময়ে এটা নিয়ে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যে একাধিক বৈঠক হলেও উভয় পক্ষ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় সঙ্কট কাটেনি। এমন প্রেক্ষাপটে সঙ্কট নিরসনে ‘প্ল্যান-বি’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ‘প্ল্যান-বি’ অনুযায়ী চিন্তা ছিল যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটগুলো যার যার মতো করে রাষ্ট্র মেরামতের ‘যৌথ ঘোষণা’ করবে আর অভিন্ন দাবিতে এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা করা হবে।

এদিকে গণ-আন্দোলনের অভিন্ন এক দফা চূড়ান্ত হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্র মেরামতের ‘যৌথ রূপরেখা’ নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপির মধ্যে এখন তেমন কোনো মতানৈক্য নেই।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আগামী ২১ জুন ঢাকায় একটি সেমিনার করবে বিএনপি। সেখানে ঢাকায় কূটনীতিকদের পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও পেশাজীবী নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। সেমিনারে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কেন প্রয়োজন, কোন প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন করা হয়, কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফার ভিত্তিতে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত যুগপৎভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। তবে ঈদের পর থেকে বিএনপি এককভাবে কর্মসূচি পালন করছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরে পদযাত্রার কর্মসূচি পালন করে দলটি। এ দিকে বিএনপির কর্মসূচির মধ্যেই ঢাকাসহ দেশের ছয়টি বড় শহরে ১১ দফার ভিত্তিতে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করছে দলটির প্রধান তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত বুধবার চট্টগ্রামে কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারুণ্যের এই সমাবেশ শুরু হয়েছে। আগামী ২২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে। বিএনপির কর্মসূচির পাশাপাশি শরিকরাও নিজ নিজ ব্যানারে কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চ গত ৪ জুন থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ করেছে। এ ছাড়া অসহনীয় লোডশেডিং এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঙ্কট সমাধানের দাবিতে আগামীকাল সোমবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ করবে। আর ঈদুল আজহার পরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চের কর্মসূচি দিতে পারে গণতন্ত্র মঞ্চ।

সূত্র : নয়া দিগন্ত

আরও পড়ুন...