পিবিএ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর এলাকায় তিতাস নদীর ওপর রেলিং ধসে পড়া ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়েই পাথর বোঝাই ট্রাক ও ভারী যানবাহন চলাচল করছে রাতের আঁধারে। আর এতে প্রতিটি ভারী যানের চালকের কাছ থেকে পুলিশ ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা করে নিচ্ছে। পুরনো এ সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশে সংস্কার কাজ চলাকালে রাতে ভারী যান চলাচল করায় পুরো সেতু কাঁপতে থাকে, ফলে সেতুর সংস্কার কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন ও একাধিক পরিবহন চালক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, বিগত ১৯৬৩ সালে নির্মিত ২০৩ মিটার দীর্ঘ জরাজীর্ণ সেতুটি কয়েকবছর আগে দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে এ পুরনো সেতুর ওপর দুটি বেইলি সেতু নির্মাণ করে সওজ। সম্প্রতি এ সেতুতে বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। ফলে কোনো যানবাহন উঠলেই সেতুটি কাঁপত। গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচ’টার দিকে এ সেতুর চতুর্থ স্প্যানের ফুটপাত সহ রেলিং ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহবাজপুর সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেতুর দুইপাশে মহাসড়কে শত শত যান আটকা পড়ে।
মঙ্গলবার রাত আট’টার দিকে সওজ এক আদেশে মহাসড়কের শাহবাজপুর সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কর্তৃপক্ষ সেতুটি যান চলাচলে উপযোগী করতে ১০ থেকে ১২ দিন সময় নেন। এরমধ্যে বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-নাসিরনগর ও হবিগঞ্জের লাখাই-হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
এদিকে মহাসড়কের ভারী যান চলাচলে দুইদিনেই আঞ্চলিক সড়কগুলোতে একাধিক স্থানে ভারী যান উল্টে খাদে পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আঞ্চলিক সড়কগুলোর বিভিন্ন ছোট সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। সড়কগুলোতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত সোয়া নয়’টায় সরেজমিন শাহবাজপুর সেতুতে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর উভয়পাশে মহাসড়কে শত শত ভারী যান আটকা পড়ে আছে টানা তিন দিন যাবত। আটকাপড়া চালকেরা পিবিএকে জানান, বুধবার সেতুর সংস্কার কাজ করানো হলেও প্রয়োজনীয় মালামালের অভাবে বৃহস্পতিবার এ সেতুতে কোনো কাজ হয়নি। এদিকে বুধবার রাতে এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু দিয়ে বেশকিছু ভারী যান পারাপার করিয়েছেন। এতে পুলিশ প্রতিটি গাড়ি থেকে ২০০০ টাকা করে নিয়েছে।
রাতে সেতুর ওপর একপাশে দাঁড়িয়ে চালকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে হঠাৎ সেতুটি কাঁপতে শুরু করলো। অনেকে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলেন। দেখা গেল সেতুর দক্ষিণপাশ থেকে পাথর বোঝাই ও বিভিন্ন মালামাল বোঝাই ট্রাক ঝুঁকির মধ্যেই সেতু পারাপার হচ্ছে। আর প্রতিটি গাড়ি থেকে ২০০০ টাকা করে নিচ্ছেন আবুল হক নামে এক ব্যক্তি। দুইজন চালক ১৫০০ টাকা করে দিয়ে দুই হাত তুলে অনুরোধ জানাচ্ছেন তাকে। এভাবে ১১টি ভারী যান এ সেতু দিয়ে পারাপার করা হলো।
ঝুঁকির মধ্যেও পাথর বোঝাই ট্রাক (ঢাকা মেট্টো ট-২২৬৬৪৬) নিয়ে সেতু পার হয়ে আসা চালক রাজধানী ডেমরা এলাকার বাসিন্দা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, এখানে তিন দিন যাবত মহাসড়কে আটকা পড়ে আছি। খাবারের টাকা নেই। গত রাতে গাড়ির তেল চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। আমার স্ত্রী অসুস্থ হাসপাতালে আছেন, বাচ্চা হবে। গত রাতে (বুধবার) টাকার জন্য এ সেতু পার হতে পারিনি। অনেকে পুলিশকে ২০০০ টাকা করে দিয়ে সেতু পার হয়েছে। তাই আজ (বৃহস্পতিবার) খাবার কেনার জন্য শ্বশুরবাড়িতে ফোন দিয়ে ২১০০টাকা বিকাশে এনেছিলাম, এর থেকে ১৫০০টাকা দিয়ে ও হাত জোড়াত করে তিন দিন পর সেতু পার হলাম।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে একাধিবার কল দিলেও খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি হোসেন সরকার রিসিভ করেননি। পরে সরাইল থানার ওসি মফিজ উদ্দিন ভূইঁয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই বাণিজ্য বুধবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে। আমি হাইওয়ে ওসিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছি, আমার পুলিশ রাত জেগে সেখানকার ডিউটি করার মতো পরিবেশ নেই। এখন হাইওয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে।
বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আল মামুনকে ফোনে জানানো হলে তিনি বলেন, ছোট এবং হালকা যান ছাড়া মাঝারি ও ভারী যান এ সেতু দিয়ে চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ। এতে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি আমি এখনই দেখতেছি।
পিবিএ/এআই/হক