সাতক্ষীরায় সমন্বয়কদের দু’গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি, সভা ভন্ডুল

হাবিবুল হাসান,সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দুই গ্রুপের দন্দ্বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা পন্ড হয়েছে। স্থানীয় সমন্বয়কারী পরিচয়দানকারী ইমরান ও রনি গ্রুপের দ্বন্দ্বে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সভা ভন্ডুল হয়ে যায়।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে এ ঘটনা ঘটে।

পৌর ছাত্রদলের নেতা আনারুল ইসলাম সান মঞ্চে উঠে মাইক হাতে নিয়ে বলতে শুরু করেন, সাতক্ষীরায় আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা (ছাত্রদল) সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম, সাতক্ষীরা জেলায় কোনো বৈষম্য চলবে না। আমাদেরকে মাইনাস করে এই প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে। যেসব ভাইয়েরা ঢাকা থেকে এসেছেন, আপনারা আমাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করছেন। আজকের প্রোগ্রাম আমরা হতে দেবো না, অবিলম্বে আপনারা এই স্থান ছেড়ে চলে যান।পরে ছাত্ররা অডিটোরাম ছেড়ে বাইরে চলে আসেন। এসময় ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে মুখোমুখি অবস্থান নেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলার অন্যতম সমম্বয়ক পরিচয় দানকারী নাজমুল হোসেন রনি জানান, শিল্পকলা একাডেমিতে বিকেলে ওয়াহিদুজ্জামান, আকরাম হোসেন রাজসহ কেন্দ্রীয় সমম্বয়কদের সাথে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বৈঠক চলছিল। মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় সমম্বয়ক আকরাম হোসেন রাজ। এসময় জনি ও সানি নামের দু’জন ছাত্র অডিটরিয়ামে বসা নিয়ে উচ্চ-বাচ্য করতে দেখা যায়। এমনকি তারা মঞ্চে তেড়ে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বাইরে চলে যাওয়ার ঘোষণা দেন সানি।এসব হট্রগোলের মধ্যে বক্তব্য শেষ করেন রাজ।

আরেক সমম্বয়ক পরিচয় দানকারী আল ইমরান ইমু বলেন, স্বেচ্ছাসেবার কাজ করছেন ছাত্রলীগের অনুপ্রবেশকারীরা, এমন অভিযোগে ছাত্রদলের কর্মীরা ভূয়া-ভূয়া শ্লোগান দেয়। এ থেকে সভায় গল্ডগোলের শুরু।

তবে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শেখ শরিফুজ্জামান সজীব জানান, জনি ও সানি নামের ছাত্রদলের কোনো নেতা-কর্মী নেই। ছাত্রদলের কর্মী বলে যাদের পরিচয় দেওয়া হচ্ছে, এটা ষড়যন্ত্রমুলক। ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মী আজকের সভায় উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান তিনি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, সাতক্ষীরার কয়েক সমম্বয়ককে বাদ দিয়ে অন্যান্যদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভা হয়েছে। এর জের ধরে শিল্পকলা একাডেমিতে হৈ-হট্রগোল শুরু হয়। ছাত্রদের এক পক্ষ মঞ্চে উঠে মাইক হাতে বলতে শুরু করেন, সাতক্ষীরায় আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে যারা সামনে থেকে আন্দোলন করছে,তাদের সাথে বৈষম্যমুলক আচরণ করা হচ্ছে। তাই প্রোগ্রাম হতে দেওয়া হবেনা। তাদেরকে প্রোগ্রাম বন্ধ করে ঢাকায় ফিরে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন তারা। এরপর থেকে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো অডিটরিয়াম। একে-অপরের সাথে হট্টগোলে জড়িয়ে পড়ে সভা পন্ড হয়। পরে অডিটরিয়ামের সামনে মারপিটে জড়ান ছাত্রদের দু’গ্রুপ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আকরাম হোসাইন রাজকে বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলে হট্টগোল শুরু করেন সাতক্ষীরা জেলার সম্বন্বয়ক পরিচয়দানকারী ইমরান গ্রুপ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।মূহুর্তেই অডিটোরিয়ামটি উত্তল হয়ে উঠলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে মঞ্চে ওঠা মাত্রই ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

এবিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাতক্ষীরার স্থানীয় প্রতিনিধি মীর জাভেদ জিতু বলেন, দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় জেলার সমন্বয়ক পরিচয়ে প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ ও হয়রানির অভিযোগ উঠে। এসময় সাতক্ষীরাসহ দেশের অন্যান্য জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র থেকে স্বীকৃত কোনো সমন্বয়ক কমিটি নাই এবং যে বা যাহারা আইন হাতে তুলে নিবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করা হয়। সমন্বয়কদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কতিপয় সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ক্ষুব্ধ হয় এবং তারা ছাত্র-জনতার মতবিনিময় সভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে পারে এরুপ ভিত্তিতে সাতক্ষীরার আজকের ছাত্র-জনতার মতবিনিময় সভা স্থগিত করা হয়েছে। যা পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে আয়োজন করা হবে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে এর আগে সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের সভাপতিত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সাথে সাতক্ষীরা জেলার স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া সারাদিন সমন্বয়ক স্থানীয় সংগঠক ও আন্দোলনকারীদের সাথে মতবিনিময়, শহীদ আসিফের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সাথে সাক্ষাত এবং স্থানীয় প্রশাসন, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা বিভাগীয় ছাত্র-জনতা-মৈত্রী সফরের অংশ হিসেবে এসময় উপস্থিত ছিলেন ওয়াহিদ উজ্জামান (ঢাবি), আকরাম হোসাইন রাজ (ঢাবি), আশরেফা খাতুন (ঢাবি), আবু বকর খান(ঢাবি), ফারহানা ফারিনা (জাবি), মুইনুল ইসলাম (ঢাকা কলেজ), বিশ্বজিৎ দত্ত (খুবি), তৈাহিদ ইসলাম শুভ (এন, ইউ, বি) মো. বাবু খান (ডি.আই.ইউ) ও জান্নাত (বদরুন্নেসা কলেজ)।সাতক্ষীরার স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মীর জাভেদ জিতু (জা.বি.), আশফাক উল সিমান্ত (ইউএপি), মো. মিকাইল ইসলাম চঞ্চল (ঢা.বি) ও মো. মাসুদুজ্জামানের (ঢা.বি)।

আরও পড়ুন...