এস এম হাবিবুল হাসান,সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় সদর হাসপাতালে পুরাতন টেন্ডার দরে রোগীদের খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমান বাজারদরের তুলনায় বেশী খাবার পাচ্ছেন রোগীরা। এতে রোগী ও সরকার উভয় পক্ষই লাভবান হচ্ছেন বলে মনে করেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু একটি সংঘবদ্ধ চক্র নতুন করে উচ্চমূল্য বাজারদর দিয়ে হাসপাতালটির খাদ্য সরবরাহের টেন্ডার পেতে নানামূখী চক্রান্ত শুরু করেছে বলে জানা যায়।বিষয়টি নিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তির প্ররোচনায় জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে চলছে নানা ধরনের অপপ্রচার।
অপপ্রচারে লিপ্ত সিন্ডিকেট এরই মধ্যে হাসপাতালে রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ নানা অনিয়ম দুর্ণীতির অভিযোগ তুলেছে।যা আদেও সত্য নয় বলে জানান সদর হাসপাতালটির খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার এস এম নজরুল ইসলাম।এছাড়াও সরেজমিন হাসপাতালটি পরিদর্শন,সিভিল সার্জনসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে,পুরাতন দরপত্র অনুযায়ী হাসপাতালে রোগীদের খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। দৈনিক রোগীপ্রতি ১শ’২৫ টাকা বরাদ্দে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। নতুন টেন্ডার আহব্বান হলে সেখানে বাজারদর বেড়ে যাবে,ফলে বরাদ্দের টাকায় এখন যে পরিমাণ খাবার পাচ্ছেন রোগীরা তখন সেই পরিমাণ খাবার পাবেন না।দরপত্র সিন্ডিকেট করে বাজার মূল্য বৃদ্ধি করে ব্যক্তিগত লাভবান হওয়ার আশায় একটি সুযোগ সন্ধানী চক্র এই বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে জানান ঠিকাদার এস এম নজরুল ইসলাম।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সুত্রে জানা যায়,দরপত্র সংক্রান্ত একটি মামলায় নতুন করে টেন্ডার কার্যক্রমের উপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে মামলাটি বিচারাধীন থাকায় আগের ঠিকাদার হাসপাতালের রোগীদের খাদ্যপথ্য সরবরাহ অব্যাহত রেখেছেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এক নং ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগী কেসমত মোড়ল জানান, সকালের নাস্তায় একটি কলা,একটি ডিম, একটি পাউরুটি ও অনুমান ২৫ গ্রাম চিনি পেয়েছি। দুপুরে অনুমানিক প্রায় দুইশো গ্রাম চাউলের ভাত, এক পিস রুই মাছ, আলু দিয়ে তরকারী ও ডাউল পেয়েছি। রাতেও একই খাবার দেয়া হয়। একই ধরণের তথ্য জানান হাসপাতালে ভর্তি থাকা অন্যান্য রোগীরাও।
দুই নং ওয়ার্ডের ভর্তিকৃত রোগী রফিকুল ইসলাম মিস্ত্রি গত পাঁচ দিন ভর্তি থাকলেও কোন খাদ্যখাবার পাননি বলে অভিযোগ করেন এবং যাতে প্রতিদিন খাদ্য পায় সেদিকটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।
খাবার না পাওয়ার বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সরকারি বাবুচ্চি রেজাউল ইসলাম বাবু জানান, সরকারিভাবে পুরাতন দরপত্রে বরাদ্দ দৈনিক একশোজন রোগীর খাবার সরবরাহ করা।সেই অনুযায়ী খাবার দেওয়া হয় হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের।কিন্তু হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ভর্তি থাকেন প্রায় দুইশো থেকে আড়াইশো জন রোগী।সেকারণে বরাদ্দ না থাকায় সকল রোগীরা খাবার দেওয়া সম্ভব হয় না।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার এস.এম নজরুল ইসলাম জানান,কর্তৃপক্ষের দৈনিক চাহিদা মতে সুনামের সাথে দীর্ঘদিন রোগীদের খাদ্যপথ্য ধোলাই, সরবরাহ করে আসছি।ব্যক্তি স্বার্থে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কিছু অসাধু আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।এতে আমি বিভ্রান্ত নয়।বরংচো,স্বাস্থ্যবিভাগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা,সাংবাদিকসহ সচেতন নাগরিকদের সরেজমিনে হাসপাতালটি পরিদর্শন ও খাদ্য সরবরাহের সার্বিক কার্যক্রম বাস্তবে খতিয়ে দেখার আহব্বান জানাচ্ছি।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়সাল আহমেদ জানান,দরপত্রের পুরাতন শিডিউল অনুযায়ী রোগীদের দৈনিক খাদ্য তালিকা অনুযায়ী ঠিকাদারের নিকট থেকে মালামাল বুঝে নেওয়া হয়। রোগীদের নিন্মমানের খাদ্য সরবরাহ বা পরিমাণে কম নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।তবে প্রতিদিন মাত্র ১শ’ জন ভর্তিকৃত রোগীকে খাদ্য সরবরাহ করা হয়।কিন্তু হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন থাকে প্রায় আড়াইশো জন রোগী।যা খুবই অসামান্য।
সিভিল সার্জন কার্যালয় ও হাসপাতালের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,পুরাতন দরপত্রে খাবার সংগ্রহ করায় রোগীরা বর্তমান বাজারদরের তুলনায় খাবার বেশী পাচ্ছেন এটা সঠিক। এতে লাভবান হচ্ছেন রোগীরা।বর্তমানে নতুন করে টেন্ডার হলে বাজারদর বেড়ে যাবে। এবং রোগীদের খাবারের পরিমাণ কমে যাবে বলে মন্তব্য করেন।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা.আব্দুস সালাম জানান,ঠিকাদারের কাছ থেকে নিম্নমানের বা পরিমাণে কম খাবার গ্রহণ করা হয় না।আদালতে মামলা থাকায় পূর্বের ঠিকাদার এস এম নজরুল ইসলাম এখনো রোগীদের খাবার সরবরাহ করে আসছেন।আদালতে বিচারাধীন মামলাটি নিষ্পত্তির পর নতুন করে দরপত্র আহব্বান করা হবে বলে জানান সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন।