পিবিএ,কক্সবাজার: ক্লোজআপ ওয়ান গায়িকা সালমা’র স্বামী সানাউল্লাহ নূরী সাগরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক (জেলা জজ) মোঃ নূর ইসলাম জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন।
সানাউল্লাহ নূরী সাগরের প্রথম স্ত্রী তাসনিয়া মুনিয়াত ওরফে পুস্পী’র মা ও টেকপাড়া প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা দিলারা খানম বাদী হয়ে দায়েরকৃত মামলায় বিচারক বুধবার ৩ জুলাই সানাউল্লাহ নূরী সাগর’কে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র বেন্ঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ শামীম পিবিএ’কে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে প্রকাশ, ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটের সাখাওয়াত হোসেনের পুত্র সানাউল্লাহ নূরী ওরফে সাগর ২০ লক্ষ টাকা দেনমোহর দিয়ে ১/৫৩ নম্বর কাবিন মূলে ২০১৪ সালের ৩ জুলাই কক্সবাজার শহরের পূর্ব টেকপাড়া নিবাসী কক্সবাজার কমার্স কলেজের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আখতার আলম ও দিলারা খানমের কন্যা তাসনিয়া মুনিয়াত ওরফে পুস্পী’কে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সাগর তার স্ত্রী থেকে যৌতুক দাবী করলে বিভিন্ন কিস্তিতে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নগদে ও চেকে সাগর’কে প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আরো ১০ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবীতে সানাউল্লাহ নূরী সাগর তার স্ত্রী তাসনিয়া মুনিয়াত’কে বেদম মারধর পূর্বক আহত করে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। পরে তাসনিয়া মুনিয়াত’কে চিকিৎসা করানো হয়।
এঘটনায় তাসনিয়া মুনিয়াতের মা বাদী হয়ে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর ৩ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। আাসামীরা হলেন-সানাউল্লাহ নূরী সাগর, তার পিতা-সাখাওয়াত হোসেন, মাতা-সুরাইয়া। বিচারক দায়েরকৃত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য কক্সবাজারের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার’কে নির্দেশ দেন। পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে মামলার ঘটনা প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া যায় মর্মে উল্লেখ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত বাদীনির অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ১ নম্বর আসামীর বিরুদ্ধে ২০০৩ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) ধারায় এবং অপর দু’জন আসামীর বিরুদ্ধে ১১ (গ) ৩০ ধারায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করেন। যার মামলা নম্বর নারী-২৫৪/২০১৯। আসামীগণ হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি মোঃ কুদ্দুস জামানের বেন্ঞ্চ থেকে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন নেন এবং জামিনের মেয়াদ শেষে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পন করে পূনরায় জামিন প্রার্থনার আদেশ দেন। যাহার হাইকোর্টের মামলা নম্বর ২৩৯৮৭/২০১৯। কিন্তু আসামীদের হাইকোর্টে প্রদত্ত আগাম জামিনের মেয়াদ গত ৪ জুন শেষ হলেও আসামীত্রয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করেননি।
আসামীরা একমাস পর বুধবার ৩ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক মোঃ নূর ইসলাম এর আদালতে জামিন চেয়ে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক শুনানী শেষে সানাউল্লাহ নূরী সাগরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। অপর দু’জন আসামী সানাউল্লাহ নূরী সাগরের পিতা সাখাওয়াত হোসেন, পিতা-মৃত সোলাইমান আলী এবং সুরাইয়া, স্বামী-সাখাওয়াত হোসেন’কে ১০ হাজার টাকা বন্ডে জামিন প্রদান করেন। জামিন আবেদনে সানাউল্লাহ নূরী সাগরের দ্বিতীয় স্ত্রী ক্লোজআপ ওয়ানের সেরা কন্ঠশিল্পী সালমা সন্তান সম্ভাবা এবং সাগর আইন বিষয়ে পড়ুয়া একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে দাবী করেন। প্রসঙ্গত, সানাউল্লাহ নূরী সাগর ক্লোজআপ ওয়ানে সেরা গায়িকা সালমা’র দ্বিতীয় স্বামী। একইভাবে সেরা গায়িকা সালমা কারাবন্দী সানাউল্লাহ নূরী সাগরের দ্বিতীয় স্ত্রী।
পিবিএ/টিএ/জেডআই