সারাদেশে চিকিৎসকদের কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা

নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসকদের কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা এসেছে।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন আব্দুল আহাদ গণমাধ্যমকে এ কমপ্লিট শাটডাউনের কথা জানান।

এর আগে চিকিৎসকদের ওপর হামলার বিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে সকালে ইন্টার্নি চিকিৎসক পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব চিকিৎসক কমপ্লিট শাটডাউন শুরু করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জমান আজ সোয়া একটার দিকে বলেন, চিকিৎসকেরা কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন। ইন্টার্নিসহ সব চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। তবে আলোচনার পর তাঁরা কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন। কিন্তু যেসব জরুরি সেবা দান সেগুলো অব্যাহত আছে।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে শুধু জরুরি বিভাগ নয়, বিভিন্ন অপারেশনের কক্ষ এবং বর্হিবিভাগের কক্ষের সমস্ত চিকিৎসা সেবাই বন্ধ রয়েছে। শুধু ভর্তি রোগীদের কিছু চিকিৎসা হচ্ছে।

আজ সকাল থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন চিকিৎসকেরা। গতকাল শনিবার জরুরি বিভাগে ভাঙচুর ও চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে আজ রোববার সকাল থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় কারণে জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন তাঁরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবদুর রহমান আজ বেলা ১১টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, আজ সকাল থেকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছেন। গতকাল একদল বহিরাগত এসে সমস্যা সৃষ্টি করে। তারা অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে চিকিৎসকদের বের করে নিয়ে মারধর করে।

গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার দুটো ঘটনা ঘটে।

প্রথমে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল হট্টগোল হয়। মৃত শিক্ষার্থীর নাম আহসানুল ইসলাম (২৫)। আহসানুল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

পরবর্তীতে বিষয়টি মেডিকেলে ছড়িয়ে পড়লে রোগী স্বজনদের, ডাক্তাররা এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা অবরুদ্ধ করে রাখে এবং জরুরি গেট বন্ধ করে দেয়।

আবার গতকাল রাতে খিলগাঁও সিপাহিবাগ এলাকা থেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসলে পরবর্তীতে অন্য গ্রুপের লোকজন জরুরি বিভাগে ভেতরে ঢুকে চাপাতিসহ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে যায়।

এ সময় হাতেনাতে চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনীকে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইলে ডাক্তার এবং ছাত্ররা তাদের স্থান ত্যাগ না করে, অবস্থান ধরে রাখে। এ ঘটনায় চিকিৎসকেরা দোষীদের সিসি টিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেন।

আজ সকালে প্রথমে জরুরি বিভাগের ইন্টার্নি চিকিৎসকেরা কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন। এরপর তাঁদেরসহ সব চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনায় বসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। তারপরও চিকিৎসকেরা কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন। তাদের বিস্তারিত কর্মসূচি আজ দুপুর দুইটায় জানানো হবে বলে জানান ডা. আব্দুল আহাদ।

আরও পড়ুন...