সালাউদ্দিনকে হত্যার দায় নেবে না আলম এশিয়া

পিবিএ,ঢাকা: ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে সালাউদ্দিন (৩৫) নামে এক যাত্রীকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চাকায় পিষে মারা সেই ঘাতক চালকের নাম ও পরিচয় জানা গেছে। ফজলুল হক ওরফে ফজলু নামে ওই চালক ক’দিন আগে বদলি হিসেবে আলম এশিয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব ১১৬৩৬৬) বাসের চালকের আসনে বসেন। তিনি ঢাকা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য। আর বাসটির মালিক রাজধানীর মহাখালীর নাখালপাড়া এলাকার ইকবাল হোসেন।

সালাউদ্দিনকে হত্যার দায় নেবে না আলম এশিয়া

তবে এ ঘটনায় পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন আলম এশিয়া পরিবহনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বাসটির রুট নিয়ে দুই রকম কথা বলেছেন দায়িত্বশীলরা। জানা যায়, ফুলবাড়িয়া-ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটে আলম এশিয়া পরিবহনের প্রায় শতাধিক বাস চলাচল করে। এর মধ্যে কেবল ফুলবাড়িয়া থেকেই ঢাকার উদ্দেশ্যে প্রায় ৫০-৬০টি বাস ছেড়ে যায়।

তবে রবিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে স্থানীয় আলম এশিয়া পরিবহন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা দাবি করেন, ফুলবাড়িয়া ও ঢাকা মিলিয়ে আলম এশিয়ার মোট ৭৩টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে ফুলবাড়িয়ার ৪৫টি ও ঢাকার মালিকদের রয়েছে ২৮টি বাস।

ভাড়ার মতো ঠুনকো বিষয় নিয়ে চালক ও তার সহযোগীরা যাত্রীকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে তার ওপর বাস চালিয়ে চাকায় পিষ্ট করে মেরে ফেলার ঘটনায় দেশজুড়ে তুমুল সমালোচনা চলছে। দাবি উঠেছে দোষীদের কঠোর শাস্তির।

এ অবস্থায় খেই হারিয়ে আলম এশিয়া পরিবহন কর্তৃপক্ষ পরস্পরবিরোধী তথ্য দিচ্ছে। আলম এশিয়া পরিবহনের ভাইস চেয়ারম্যান এসএম শাহজাহান দাবি করেন, ঈদের চার দিন আগে এ বাসটি ফুলবাড়িয়া রোড থেকে বেরিয়ে ফুলপুর রোডে যায়। সেখান থেকেই ঈদের এ সময় অবধি ঢাকা পর্যন্ত চলাচল করছে বাসটি। ফলে এ বাসচালকের নাম-ঠিকানা বা প্রয়োজনীয় তথ্য তার জানা নেই।

আর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তোফাজ্জল খান চালক ও মালিকের নাম ঠিকানা জানিয়ে প্রকারান্তরে স্বীকার করেন, বাসটি ফুলপুর নয়, নিয়মিতই ফুলবাড়িয়া থেকে ঢাকা এবং ঢাকা টু ফুলবাড়িয়া রুটে চলাচল করছে।

তবে ঈদে যাত্রীর চাপের কারণে অনেক সময় এসব বাস ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত না এসে ময়মনসিংহ শহর বাইপাস থেকেই পুনরায় যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাসটি ঢাকার মালিকের হওয়ায় পুরো বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব ঢাকা মালিক সমিতি নিয়েছে বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তোফাজ্জল হোসেন দাবি করেন, এখানে কোম্পানির কোনো দায় নেই। পুরো ঘটনার জন্য দায়ী চালক ও তার সহযোগীরা। আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই দাবি করছি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, আলম এশিয়া পরিবহন দীর্ঘদিন ‘স্পেশাল সিটিং সার্ভিসের’ নাম করে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এ পরিবহনের চালকরা বেপরোয়া গতিতে যেমনি ছোটেন, তেমনি অনেক চালকেরই ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্সও নেই।

শুধু তাই নয়, এ বাসের ভেতরের পরিবেশও অপরিচ্ছন্ন। বাতি ও ছাদ পাখা নষ্ট প্রায় সব বাসেই। আদতে যাত্রী উঠিয়ে-নামিয়ে ঢাকা পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায় চলা এ পরিবহনটিকে অনেকেই ‘লোকাল সার্ভিস’ হিসেবেও টিপ্পনি কাটেন। কিন্তু এরপরও তারা বাড়তি ভাড়া হাতিয়ে নিয়ে যাত্রীদের পকেট কাটছে।

যাত্রীরা আরও অভিযোগ করেন, ওভারটেকিং প্রবণতা আর বেপরোয়া গতির কারণেই প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চলছে এ পরিবহনের বাস। কিন্তু প্রভাবশালীরা এ পরিবহনের সঙ্গে জড়িত থাকায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সবসময়ই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকেছে পরিবহনটি।

রবিবার সকালে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রী সালাউদ্দিনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চাকায় পিষে মারে আলম এশিয়ার একটি বাস। সালাউদ্দিন তার স্ত্রীকে নিয়ে ফুলপুর থেকে গাজীপুরে আসছিলেন। তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার পর স্ত্রীকে না নামিয়েই বাস টান দিতে চাইলে সালাউদ্দিন গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থামাতে বলেন, কিন্তু বেপরোয়া চালক তার ওপর দিয়েই চালিয়ে দেন বাস।

পিবিএ/আরআই

আরও পড়ুন...