পিবিএ,চাঁদপুর: দেখতে ছোটখাটো গড়নের হলেও মেধা তাকে ইতিমধ্যেই অনেক দুর নিয়ে গেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির সমাপনি পরীক্ষায় সে সকল বিষয়েই শতভাগ নম্বর পেয়েছে। আবার মাত্র সাড়ে চার মাসেই হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের ভান্ডারী মহলস্থ জামালুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে এই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে। একই সাথে দুটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে সে প্রতিভার পরিচয় দিলো। মেধাবী এই শিশুর নাম আব্দুল আউয়াল। সদ্য সে ৯ বছর পেরোলো।
জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ কড়ৈতলী গ্রামের মৌলভী বাড়ির মো: মোশারফ হোসেন (মোশারফ মাস্টার নামে পরিচিত) ও মাজেদা আক্তারের দুই সন্তানের মধ্যে আব্দুল আউয়াল বড়। বাবা বর্তমানে ৫৮নং পশ্চিম ভাওয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ওই বিদ্যালয়েই বর্তমানে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল আউয়াল।
গর্বিত এই সন্তানের পিতা মো: মোশারফ হোসেন জানান, ২০১০ সালের ২ নভেম্বর জন্ম আব্দুল আউলের । শিশু থেকেই তার মেধার পরিচয় তিনি পেয়েছেন। তাই তার প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়ার জন্য নিজের বিদ্যালয়ের ভর্তি করান। তিনি জানান,আব্দুল আউয়াল সারাদিন দুষ্টোমি করতো। পড়তো অল্প কিছুক্ষণ। আর তাতেই সে তার স্কুলের পড়া শেষ করতে সমর্থ হতো। এতে আশার উদ্রেক দাদীর নাতির আলেম হওয়ার স্বপ্ন ও চাচা মুফতি মুনওয়ার হোসেনের আগ্রহে তাকে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সাথে হাফেজ করার জন্য উব্ধুদ্ধ হন। প্রথমে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পিছনের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করালেও একমাস পর ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ জামালুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করান। মার্দাসার নূরানি ও নাজিরা শাখায় ভর্তি হলেও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের আগ্রহ ও তার মেধা দেখে প্রাথমিক বিদ্যালয়েও তার পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন তিনি।
ফলে একসাথে দুটি প্রতিষ্ঠানে সে অধ্যয়ন করেছে এবং সফল হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণি থেকে সমাপনি পরীক্ষায় সকল বিষয়ে শতভাগ নাম্বার পেলেও একই নাম্বার পাওয়া অপর একজন থাকায় এবং আউয়াল হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়ার কারণে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির কারণে তাকে ক্লাসে রোল নাম্বার দুই প্রদান করেন কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২য় শ্রেণিতে তার ক্লাস রোল ছিল ১ এবং তৃতীয় শ্রেণিতে একই কারনে ক্লাস রোল দুই ছিল। পুত্রের ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মোশারফ হোসেন আরো বলেন, তার ছেলে একজন আলেম হওয়ার সাথে সাথে সে যদি সাধারণ শিক্ষা নিয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বা যে কোন পেশায় যেতে আগ্রহী হয়, তবে আমি সেই চেষ্টা করবো।
জামালুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক হাফেজ মাওলানা ইবনে আহমদ ওয়ালী উল্ল্যাহ জানান, আব্দুল আউয়াল তার মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পার এক বছরের মধ্যেই নূরানি ও নাজিরা শেষ করে। পরে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট হিফ্জ বিভাগে ক্লাস শুরু করে। আর সফল ভাবে শেষ করে চলতি বছর তথা ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারী । মাঝে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য সে ১৫দিনের ছুটি নিয়েছিল। অর্থাৎ সাড়ে চার মাসেই সে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
তিনি জানান, আব্দুল প্রথম দিকে প্রতিদিন ৩পৃষ্ঠা করে পড়া দিতো। শেষদিকে এসে সে দিনে ৬/৭ পৃষ্ঠা করে পড়া দিতে পারতো। আব্দুল আউয়াল এমনিতে সারাদিন খুব একটা পড়া লেখা করতো না। অল্পতেই তার পড়া মুূখস্থ হয়ে যায়। তার মেধা দেখে তাকে পড়া লেখায় আরো আগ্রহ করার জন্য তাকে নিয়মিত পড়ার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করি। এতে সে আনন্দের সাথেই পড়া লেখা করেছে। আবার একটি অমনযোগী হলে পুরস্কারের সাথে সাথে জরিমানা দিতে হবে একথা তাকে স্মরণ করিয়ে দিলে সে পথে পা আর বাড়াতো না। তিনি বলেন, ৯ বছর বয়সে সে আমাদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অহংকারে পরিনত হয়েছে।
আমি চেষ্টা করেছি, তাকে আমার মাদ্রাসার নিয়মিত পড়ার বাইরে যে সময়টুকু অবশিষ্ট থাকতো সে সময় তাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বই সমূহ পড়ার জন্য সহায়তা করেছি। ফলে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও তার পড়া লেখার বড় ধরনের ক্ষতি হয় নি। তাছাড়া আব্দুল আউয়াল তার প্রতিভার মাধ্যমে একই সাথে দুইটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়। তিনি জানান, ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট যাত্রা শুরু করা জামালুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় বর্তমানে ৩০জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। মাত্র ৪/৫জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করলেও প্রতিষ্ঠান আজ মেধাবীদের আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিনত হচ্ছে।
মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আরো জানান, আব্দুল আউয়াল হাফেজ হলেও সে নিয়মিত এই চর্চা অব্যাহত রাখবে। ভবিষ্যতে আলেম হওয়ার সাথে সাথে তিনি আশা করছেন প্রথাগত শিক্ষা নিয়ে সে যেন নিজেকে আরো শানিত করে তোলে। পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী ভাল একটি প্রতিষ্ঠানে সে পড়তে পারলে পরিবারের পাশাপাশি দেশের জন্য সম্পদ হয়ে দাড়াবে। তবে এইজন্য তার পরির্চযা করতে হবে। তার এই প্রতিভা যেন কোন কারণে ক্ষয়িষ্ণু না হয় সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে পরিবার কে।
আব্দুল আউয়ালের চাচা মুফতি মুনওয়ার হোসেন জানান, শিশুকাল থেকেই সে অল্প সময়ের মধ্যে পড়া শেষ করে তার বাবার কাছে দেয়ার দৃশ্য দেখে আশান্বিত হই। তাই একই সাথে হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া লেখা করার ঝুঁকি নিয়েছেন। এই পর্যন্ত সফল হয়েছেন। আমার ইচ্ছা দ্বীনি শিক্ষার সাথে সাথে আউয়াল সাধারণ শিক্ষা নিয়ে সে নিজেকে পরিপূর্ণ একজন আদর্শবান মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবে।
সর্বদা হাসিমুখে থাকা আব্দুল আউয়াল মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহপাঠিদের কাছে আজ একটি গৌরবের অংশ। তার শিশু মনের আশা তার মতো আরো অনেত হাফেজ বেড়িয়ে আসবে এই মাদ্রাসা থেকে। কারণ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক পরিচালক হাফেজ মাওলানা ইবনে আহমদ ওয়ালী উল্ল্যাহ ও সহকারি শিক্ষক হাফেজ মেহেদী হাসানের মতো শিক্ষক রয়েছেন।
পিবিএ/মহিউদ্দিন আল আজাদ/বিএইচ