সিআইডির এসপির অনিয়মে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, ফ্ল্যাট মালিকদের থানায় অভিযোগ

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) শামীমা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে রমনা থানায় গেছেন ভুক্তভোগী ফ্ল্যাট মালিকরা। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে সিদ্ধেশ্বরী রোডের কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া ৬১/এ’র ফ্ল্যাট মালিকরা থানায় যান।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ,কনকর্ড ম্যাগনোলিয়ার দশতলা ভবনের চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে এসপি শামীমা ও তার স্বজনদের নামে। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে পাঁচবছর ধরে সার্ভিস চার্জ দেন না তিনি। যা প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা। ওই ভবনের পাঁচতলা ও দোতলায় পৃথক দুটি করে ফ্ল্যাট রয়েছে এসপি শামীমার। এসব ফ্ল্যাটে আলো-বাতাস যাবার সুবিধার্থে কিছু ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। এসব জায়গা দখল করে এসপি নিজের মতো রুম বানাচ্ছেন। বিশেষ করে ভবনের মূলপিলার ভেঙে তিনি এসব করছেন। এতে ভবন ধ্বসের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে। রাজউক এরইমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভবনটি রেডমার্ক করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে।

তবে অভিযোগ বিষয়ে সরাসরি ওই ভবনে গেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানান এসপি শামীমা। তিনি বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। এগুলো যারা দেখার তারা দেখবেন।’

ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে এখানে ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করছি৷ কিন্তু সেই ভবন এখন ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এসপির কাছে নিরুপায়। দুইবার থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি। শামীমা ইয়াসমিনের কারণে ভবনটি রাজউক রেডমার্ক করেছে কিন্তু এবিষয়ে শামীমার কাছে গেলে তিনি পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারের হুমকি দেন। এরইমধ্যে তার এসব কর্মকান্ড নিয়ে সিআইডি প্রধান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব বরাবরও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’

থানায় জমা দেওয়া অভিযোগে যা আছে:-

রাজউকের অনুমোদিত নকশা বর্হিভূতভাবে ফ্ল্যাটের আয়তন বাড়ানোর জন্য শামীমা ইয়াসমিন ২০১৭ সাল থেকে দুই-তিন জন নির্মাণ শ্রমিক দিয়ে প্রতিনিয়ত নির্মাণ কাজ করছেন।

রাজউক কর্তৃপক্ষ নকশা বর্হিভূত অবৈধ কাজ বন্ধে ২০২২ তাকে দুটি চিঠি দেয়। যা রমনা থানাকে অনুলিপি দেওয়া হয়। কিন্তু চিঠির বিপরীতে আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। চলতি মাসে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, অথরাইজড অফিসার, ইঞ্জিনিয়ার এবং ইন্সপেক্টর এই ভবনটি পরিদর্শন শেষে ঝুঁকিপূর্ণ রেড মার্ক দিয়েছে। এরপরেও নিয়মের তোয়াক্কা না করে কক্ষ নির্মাণ করে যাচ্ছেন এসপি। বর্তমানে ভবনটি কাঠামোগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং যেকোনো সময় ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে।

২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে ভবন নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান সব কাজ শেষে ফ্ল্যাট মালিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে। যেখানে শামীমা চরটি ফ্ল্যাট নামে-বেনামে মালিক হন। এসব ফ্ল্যাটের কোনো সার্ভিস চার্জ দেন না তিনি। মালিক সমিতি বিভিন্ন সময়ে এবিষয়ে তাগাদা দিলে উল্টো হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়৷ এছাড়া ভবনের Disable Park, Common Space, ভয়েডসহ বিভিন্ন জায়গা দীর্ঘদিন জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। ভবনের সিসিটিভির হার্ডডিস্ক নিজ হেফাজতে নিয়ে তা নষ্ট করে দিয়েছেন।

অভিযোগ বিষয়ে রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম ফারুক বলেন, আমরা একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।’

রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, সেখানে নিয়মের ব্যত্যয় করে কাজ চলছে বলে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। এরপর ভুক্তভোগী ফ্ল্যাট মালিকদের লিখিত অভিযোগ থানায় দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।’

আরও পড়ুন...