সিঙ্গাপুরেও এরশাদ নজরদারিতে

পিবিএ,ঢাকা: রভোটের আগে অসুস্থতা নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যেই ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য’ সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সোমবার সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে যান আরো উন্নততর চিকিৎসার জন্য। বেশ কয়েকদিনের নাটকীয়তা শেষে এরশাদের সিঙ্গাপুরে যাওয়া নিয়ে নানা মহলে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাজ্য থেকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিশেষ দূত এখন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে এরশাদের সিঙ্গাপুরে যাবার সাথে তারেকের বিশেষ দূতের সিঙ্গাপুরে অবস্থান করার পেছনে কোনো যোগসূত্র রয়েছে কিনা?

জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুর যাওয়ার পথে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই জাপার সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে যে অবিচার করা হয়েছে তা নিয়ে নয়া মহাসচিবের কাছে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এরশাদ। বিশেষ করে রংপুরে জাপাকে ক্ষমতাসীন দল কোনো ভাবেই ছাড় দেয়নি। এমনকি এরশাদের কাঙ্ক্ষিত ঢাকা-১৭ আসনও দেয়নি আওয়ামী লীগ।


এরশাদকে বিদায় জানাতে তার দলের যারা বিমান বন্দরে ছিলেন তাদের মধ্যে এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, নির্বাচনের অনেক খেলা এখনো বাকি আছে। এরশাদ স্যার, শেষ খেলাটা খেলবেন বলে তাদের ধারণা। জাপা চেয়ারম্যান এর আগেও দু’বার সিঙ্গাপুরে গেছেন চিকিৎসার জন্য। তখনই গুঞ্জন রটে তারেক রহমানের সঙ্গে এরশাদের বিগ ড্রিল হচ্ছে। সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেই এরশাদ চলে যান ভারতে। ভারত থেকে কাঙ্ক্ষিত সবুজ সংকেত না মেলায় মহাজোট ছাড়ার সাহস পাননি এরশাদ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট না ছাড়লেও ভেতরে-ভেতরে সহোদর জিএম কাদের বিএনপির সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রাখেন। এই গোপন আঁতাতের খবর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকারের কাছে পৌঁছে গেলে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড এতে নাখোশ হয়। কিন্তু জাপা চেয়ারম্যান সবসময়ই কৌশলী ভূমিকা নিয়ে সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক আসন বণ্টন ইস্যু নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট হন এরশাদ। আর তার রেশ ধরে গত কয়েকদিন অসুস্থতার অজুহাতে সিএমএইচ হাসপাতালে অবস্থান করেন তিনি। বর্তমানে জাতীয় পার্টির ১৪২ প্রার্থী মাঠে লাঙ্গল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

অধিকাংশ প্রার্থীই দাবি করছেন, তাদের জন্য এখনো বিশেষ কোনো সংবাদ অপেক্ষা করছে। আর সে সংবাদটি হয়তোবা সিঙ্গাপুর থেকেই আসবে বলে তাদের ধারণা। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে কঠোর নজরদারিতে রয়েছেন এরশাদ। সেখানে দর্শনার্থীদের দেখা-সাক্ষাতের বিষয়ে কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তারই সফরসঙ্গী জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) খালেদ আখতার।

এরশাদের সঙ্গে গেছেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এরশাদ দুটি আসনে প্রার্থী হলেও বর্তমান সংসদ সদস্য বাবলু নির্বাচনে নেই।

সূত্রটি জানায়, জিয়াউদ্দিন বাবলুর সিঙ্গাপুরে যাওয়া রহস্যজনক। কারণ এর আগেও দুবার এরশাদের সঙ্গে জিয়াউদ্দিন বাবলু সিঙ্গাপুরে গেছেন। জিয়াউদ্দিন বাবলুর বিতর্কিত ভূমিকার কারণে এবার তাকে মহাজোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

ভোটের ডামাডোলের মধ্যে ‘রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায়’ অসুস্থ হয়ে পড়া ৮৮ বছর বয়সী সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যাওয়া-আসা করছিলেন।

কিন্তু তার অসুস্থতার বিষয়ে জাতীয় পার্টি এবং তাদের জোটসঙ্গী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের পক্ষ থেকে একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দেওয়া হচ্ছিল সাংবাদিকদের।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও তাতে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ভর্তি থাকা অবস্থায় তিনি এমপি নির্বাচিত হন এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পান।

এবারও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় ‘অসুস্থ’ এরশাদের সিএমএইচে ভর্তির খবর এলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।

নানামুখী গুঞ্জনের মধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত মাসের শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এরশাদের অসুস্থতা ‘রাজনৈতিক‘ নয়; তিনি ‘সত্যিই’ অসুস্থ। তাকে দুই-এক দিনের মধ্যে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে।

কিন্তু জাতীয় পার্টির তখনকার মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার তখন সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেন ভিন্নভাবে। তিনি বলেন, এরশাদের অসুস্থতা ‘এমন কিছু নয়’। তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এর মধ্যে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষে বেশ কয়েকজন নেতা ‘মোটা টাকায়’ মনোনয়ন বিক্রির অভিযোগ তোলেন এরশাদ ও হাওলাদারের বিরুদ্ধে। হাওলাদার সে সময় তা অস্বীকার করেন।

পিবিএ/জেআই

আরও পড়ুন...