
পিবিএ, কুড়িগ্রাম: ১৪ এপ্রিল রোববার ও পহেলা বৈশাখ সিন্দুরমতী দিঘীতে সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্নাননোৎসব ও মিলন মেলা । কুড়িগ্রামের রাজারহাট-লালমনিরহাট সীমান্তবর্তী সিন্দুরমতী নামক এলাকায় রহস্যময় এ দিঘীর জলে সনাতন ধর্মাবলম্বী পূর্ণাথীরা পাপমোচন হওয়ার জন্য স্নানন করেন।
রোববার ভোর বেলা থেকে দিনব্যাপী নবমী তিথিতে দিঘীর জলে স্নান ও বসে মিলন মেলা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ছাড়াও পাশ্ববর্তী চীন-ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী লাখ লাখ পূর্ণার্থীগণের এ মেলায় আগমন ঘটে। এক সময় এ মেলা জুয়া ও সার্কাসের জন্য বিখ্যাত ছিল। ফলে অনেকে এ মেলায় এসে সর্বসান্ত হয়ে খালি হাতে ফিরে যেত। তাই নিছিদ্র নিরাপত্তায় র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দাবাহিনীর সহযোগীতায় সার্কাস ও জুয়া মুক্ত হয়ে এবার মেলা হতে যাচ্ছে বলে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমান ও রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ কৃষ্ণ কুমার সরকার জানিয়েছেন।
স্নাননোৎসবকে কেন্দ্র করে যাতে কোন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় তাই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী মাঠে রয়েছে। এছাড়া ¯স্নাননোৎসবকে কেন্দ্র করে সিন্দুরমতী বৃহৎ দিঘীর পাড়ের চর্তুদিকে মেলা বসে। মেলায় চিড়া-মুড়ি, দই, মিষ্টির ভান্ডার, খাবার হোটেল, পান-সুপারী,শাকসবজী, মাছ, মাটির তৈরি জিনিসপত্র, লোহার তৈরি জিনিসপত্র, হাড়-পাতিল, হিন্দুদের পূজার্চনার জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনা সামগ্রীসহ নানা রং-বেরঙ্গের বাহারি জিনিসপত্রের দোকানে ভরপুর হয়। আশপাশের হিন্দু ও মুসলিম বাড়ীতে আত্মীয়দের পদচারনায় চর্তুদিকে মিলন মেলায় পরিনত হয়। এলাকাটি বেশ রমরমা হয়ে উঠে। সব মিলে ওই এলাকায় পুরো দিনটি চলে জাঁকজমকপূর্ণ।
কথিত আছে, পৌরাণিক যুগে প্রজাদের জলকষ্ট দুর করার জন্য পুকুর খনন করেন রাজা রাজ নারায়ন। কিন্তু পুকুরে জল না পাওয়ায় দৈববাণীর আদলে রাজা তার ঘর আলো করা সিন্দুর আর মতী নামের দুই কন্যাকে দিয়ে ঐ দিঘীতে পূজা দেয়ার সময় প্রবল জল রাশিতে তাঁরা আত্মত্যাগ করেন। মানব কল্যাণার্থে নিবেদিত এ কন্যাদ্বয়ের মহতী ত্যাগের মহিমায় প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই দু’জনের নামানুসারেই পুকুরটি পরিচিতি লাভ করে। লাখ লাখ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পাপ মোচন করে পূর্ণ সঞ্চয়ের আশায় প্রতিবছর এ দিনে সূর্যদ্বয়ের আগে স্নান করে। এ উপলক্ষে বাসন্তী ও সিন্দুরমতী পূঁজা অনুষ্ঠিত হয়। কথিতে আরো আছে, চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে ব্রক্ষপুত্রের স্নান শেষে সিন্দুরমতী দিঘির পাড়ে রাত্রি যাপন করে নবমী তিথিতে স্নান করলে তবেই পাপমোচন হয়। কথিত নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে পূর্ণ, নান্দনিককতায় স্নান, কিংবদন্তির কল্পলোকে ঘেরা, উল্লেখযোগ্য প্রাচীন তীর্থ এ দিঘী।
পিবিএ/পিএমএস/হক