পিবিএ,সিরাজগঞ্জ: নামের আগে ডাক্তার এবং নামের পরে ডিগ্রী লাগিয়ে চিকিৎসা নামে প্রতারণা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষের সাথে। একদিকে চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ঠিক অপরদিকে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসায় আর স্বাস্থ্য ও আর্থিক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলাধীন সলঙ্গা থানার বিশ্বরোড সংলগ্ন নলকার মোড়ে ডিগ্রীধারী ডাক্তার না হয়েও নামের আগে ডাক্তার এবং নামের পরে সনদধারী ডিগ্রী লাগিয়ে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করছে আসলাম হোসেন। তার এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন, লিফলেট এমনকি সিরাজগঞ্জ ডিস এন্টিনিয়ায় দেখা যায়, ১০০% গ্যারান্টি সহকারে পলিপাস/নাকের মাংস বৃদ্ধি অপারেশন ছাড়া চিকিৎসা, যা ৫ দিনের মধ্যে নাকের বৃদ্ধি মাংস ঝড়ে যাবে, কোন প্রকার রক্ত বাহির হবে না। এছাড়াও অর্শ/পাইলস, বাত ব্যথা, কিডনী পাথ, জন্ডিস, হাঁপানী, মহিলাদের বেষ্ট টিউমার, সাদা স্রাব ও যৌন রোগের এবং জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা করা হয় নামে চলছে বিজ্ঞাপন।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার জোয়ালভাঙ্গা গ্রামের এক ভুক্তভোগী জহুরুলের স্ত্রী বাসিরা খাতুন (২৪) নামে এক মহিলা নাকের পলিপাস থেকে মুক্ত পেতে সলঙ্গার নলকার মোড়ে আতিয়া হোমিও হল হলের ডা: আসলাম সেখের কাছে যান। অপারেশনের নামে তার কাছে ফি বাবদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে ডা: আসলাম হোসেন ওই নারীকে নাকে এসিড ঢেলে দেয়। এতে তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ অবস্থায় সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। নাকের ভিতরে ছিদ্র নাকের হাড় বেকে যাওযায় তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল এন্ড কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। একই গ্রামের ওমর ফারুকের স্ত্রী গর্ভবর্তী রত্না খাতুন (২৩) বলেন, আমি গত সপ্তাহের টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে তার কাছে নাকের পলিপাস রোগের কারণে যাই। তিনি আমার নাকে তুলার সাথে এসিড মিশিয়ে নাকের ভিতরে ঢুকে দেয়। নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। সিরাজগঞ্জ নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল হাসপাতালের ডাক্তার ডা: রাশেদ বলেন, গর্ভাবস্থায় নাকের পলিপাস অপারেশন করা যাবে না। গর্ভাবস্থায় এই সমস্যা সমাধানের জন্য ওষুধের দ্বারা ঠিক করতে হবে। ডেলিভারী হওয়ার পর এই অপারেশন করাতে হবে।
এবিষয়ে আসলাম হোসেনকে নামের আগে ডাক্তার কিভাবে লিখলেন প্রশ্ন করলে তিনি কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। নামের পদবী শেষে ডিএইচ এম.এস (ঢাকা) এল.এইচ.এম.পি (খুলনা) লেখার সার্টিফিকেটও দেখাতে পারেনি তিনি।
স্থানীয়রা অনেকেই এমন অপচিকিৎসা ঠেকানোর চেষ্টা করে তার সঙ্গে তর্কে জড়ায়। এদের মধ্যে স্থানীয় এক নাম প্রকাশ না শর্তে অপচিকিৎসার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র ও অসচেতন মানুষের দূর্বলতাকে পুঁজি করে আতিয়া হোমিও হলের ডাক্তার আসলাম হোসেন দীর্ঘদিন ধরে পাইলস ও পলিপ অপসারণের ‘চিকিৎসা’ করে আসছেন। আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে পলিপ ও পাইলস রোগীদের নানা কায়দায় ফাঁদে ফেলে তিনি ‘চিকিৎসা’ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এ.কে.এম মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, কেবল নাক-কান-গলা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া আর কোনো চিকিৎসকের এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসার এখতিয়ার নেই। এটা জঘন্যতম অপরাধ।
এ ব্যাপারে সলঙ্গা থানার ওসি জাহাঙ্গীর জান্নাত তাজুল হুদা বলেন, এমন ব্যক্তির চিকিৎসা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি আমি অবগত নই তবে খতিয়ে দেখা হবে।
এবিষয়ে সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডঃ মোঃ কাজী শামীম হোসেন জানান, চিকিৎসা সেবায় এ ধরনের ঘটনা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই ঘটনা আমার জানা নেই তবে, এনরনের অপরাধে আমরা সর্বদা সজাগ। আর ডাঃ নামধারী আসলাম হোসেনের ব্যাপারটি ক্ষতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
পিবিএ/এসএলকে/এমএসএম