সিরাজগঞ্জে মাদ্রাসার সহকারী সুপারকে মারধর ও চাঁদা দাবি

সোহাগ হাসান জয়,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের চন্ডিদাসগাঁতী আব্বসীয়া দাখিল মাদ্রাসার সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামানের ইন্ধনে সহকারী সুপারিনটেডেন্ট মোঃ নজরুল ইসলামকে মারধর ও ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে।

গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হলেও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নজরুল ইসলামের নেয়নি কোনো খোঁজ খবর। এমনকি দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানেও প্রবেশ করতে পারছেন না। এ বিষয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে গত ২১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন সহকারী সুপারিনটেডেন্ট নজরুল ইসলাম।

সরেজমিনে প্রতিষ্ঠান ঘুরে ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই বিভিন্ন অজুহাতে শিয়ালকোল ইউনিয়নের চন্ডিদাসগাঁতী আব্বসীয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপারিনটেডেন্ট মোঃ নজরুল ইসলামের কাছে নৈশ প্রহরী আমিনুল ইসলামের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামান। তার দাবিকৃত চাঁদা না দিলেও তার বিরুদ্ধে ছাত্র ও এলাকাবাসীদের দিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী করবেন বলেও হুমকি দেন। তবুও দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় শিক্ষক কামরুজ্জামানের প্রতক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় ছাত্র ও এলাকাবাসীদের দিয়ে ৭ আগস্ট সহকারী সুপারিনটেডেন্ট নজরুল ইসলাম মাদ্রাসায় আসলেই তার উপর হামলা চালায় ছাত্র ও এলাকাবাসী। এলোপাথারী মারধরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন শিক্ষক নজরুল ইসলাম। এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় ম্যানেজিং কমিটিসহ স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের নিকট বিচার হলেও সেটাও ভন্ডুল করে দেন শিক্ষক কামরুজ্জামান। এমনকি ওই দিনের মারধরের ঘটনার পর থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় বিশ্রাম থাকেন নজরুল ইসলাম। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ্য হলে গত ১২ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসায় উপস্থিত হলে আবারও কামরুজ্জামানের ইন্ধনে তাকে চাকরিচ্যুত করতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভে শুরু করেন ছাত্র ও এলাকাবাসীরা। এরপরও গত ১৬ অক্টোবর মাদ্রাসায় উপস্থিত হলেই তাকে মাদ্রাসা থেকে জোরপূর্বক বাড়িতে পাঠিয়ে দেন এবং ১৭ অক্টোবর থেকে চাকরিচ্যুতির জন্য বিভিন্ন হুমকি দিয়ে চলেছেন। এমনকি তাকে চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে নৈশ প্রহরীর মাধ্যমে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন শিক্ষক কামরুজ্জামান।

লিখিত অভিযোগে আরও জানা যায়, শিক্ষক কামরুজ্জামান মাদ্রাসাটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে গ্রুপিংসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকায় তিনি সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। এছাড়াও কামরুজ্জামান শিক্ষকতের পাশাপাশি জাল সনদ বিক্রির ইতিহাস রয়েছে।

এ বিষয়ে চন্ডিদাসগাঁতী আব্বসীয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপারিনটেডেন্ট মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আমি নিজের জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাদের দাবিকৃত ২ লাখ টাকা না দেয়ায় আমাকে মাদ্রাসায় ক্লাস নিতে দিচ্ছেন না। এমনকি আমাকে চাকরিচ্যুতির ভয় দেখানো হচ্ছে। আমাকে মাদ্রাসায় ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থাসহ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছি।

এ বিষয়ে চন্ডিদাসগাঁতী আব্বসীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবু বক্কার বলেন, মাদ্রাসা চত্বরে শিক্ষক নজরুল ইসলামকে মারধরের ঘটনা শুনেছি। এ বিষয়ে প্রশাসনিকভাবে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। স্থানীয়ভাবে মিমাংসা না হলেও কতিপয় মাদ্রাসার ছাত্ররা শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দিয়েছে। মাদ্রাসা চত্বরে শিক্ষক নজরুল ইসলামকে মারধর করা হলেও কেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন এমন প্রশ্ন করলে সুপার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

এব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) গণপতি রায় বলেন, এখনও লিখিত অভিযোগটি পায়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন...