প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা বিদ্রোহীদের সমর্থনে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মোহাম্মদ আল-বশির।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণে মোহাম্মাদ আল-বশির বলেছেন, ‘‘তিনি ১ মার্চ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব দেবেন।’’ ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, সিরিয়ার তুলনামূলক কম পরিচিত এই বিদ্রোহী নেতার অতীতে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ছোট এক অঞ্চলের প্রশাসন পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ওই অঞ্চলটি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
তিনি বলেছেন, ‘‘আজ আমরা মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছি। বৈঠকে ইদলিব ও এর আশপাশের মুক্তিকালীন সরকারের একটি দল এবং ক্ষমতাচ্যুত সরকারে কাজ করা সদস্যরা অংশ নিয়েছিলেন।’’
মোহাম্মদ আল-বশির বলেন, ‘অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে ফাইল ও প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর’ শিরোনামে ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার সময় সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর পেছনে দুটি পতাকা দেখা যায়।
এক দশকের বেশি সময়ের গৃহযুদ্ধকালীন আসাদের বিরোধীদের ব্যবহার করা সবুজ, কালো এবং সাদা রঙের একটি পতাকা এবং কালো কালিতে কালিমা লেখা আরেকটি সাদা পতাকা ছিল। সাধারণত সুন্নি ইসলামপন্থী যোদ্ধারা সিরিয়ায় কালো কালিতে কালিমা লেখা সাদা পতাকা উড়ান।
বিদ্রোহীদের আন্দোলনে টিকতে না পেরে গত রোববার পরিবারসহ রাশিয়া পালিয়ে গেছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় আল-আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের বেশি সময়ের শাসনের অবসান ঘটেছে। আসাদের পতনের পর মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে মঙ্গলবার সিরিয়ার রাজধানীতে প্রথমবারের মতো সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংক পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দামেস্কের রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন কর্মীরা। কিছু রাস্তায় যানবাহনের চলাচল বেড়েছে। দোকান পাট পুনরায় খুলতে শুরু করেছে। নির্মাণ শ্রমিকরা শহরের কেন্দ্রস্থলের গোলচত্বর মেরামত করছেন।
রয়টার্স বলেছে, সিরিয়ার রাস্তায় সশস্ত্র ব্যক্তির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। বিদ্রোহীদের ঘনিষ্ঠ দু’টি সূত্র জানিয়েছে, তাদের কমান্ড যোদ্ধা ও পুলিশকে শহরগুলো থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর পরিবর্তে সেখানে প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) সঙ্গে যুক্ত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীকে সেখানে মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আসাদের পতনের পর দেশজুড়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের প্রবল প্রচেষ্টার মাঝে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর দুই শতাধিক স্থাপনা ও ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। আসাদের পতনের পর সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অস্ত্র যাতে অন্য কোনও শত্রুর হাতে না যায়, সেই লক্ষ্যে ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
এমনকি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামরিক ট্যাংক দামেস্কের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলেও সিরিয়ার একাধিক সূত্র দাবি করেছে। তবে সিরিয়ার সাথে সীমান্ত এলাকার নির্ধারিত বাফার জোনের বাইরে সিরীয় ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রবেশের খবর অস্বীকার করেছে তেল আবিব।
সিরিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীর অনুপ্রবেশ এবং হামলার নিন্দা জানিয়েছে মিসর, কাতার ও সৌদি আরব। রিয়াদ বলেছে, ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপ সিরিয়ায় নিরাপত্তা ফেরানোর সম্ভাবনাকে নষ্ট করবে।