সিলেটে পাঁচ সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় বিএমএফএফ’র উদ্বেগ প্রকাশ

পিবিএ ডেস্ক: সিলেটে পাঁচ সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএফএফ’)ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্ধ এবং সিলেট প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্ধ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার সংগঠনের নেতৃবৃন্ধ এক বিবৃতিতে সিলেটে-সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।
বুধবার সিলেট মহানগরীতে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের প্রচার সম্পাদক, সিলেট প্রেসক্লাবের সহযোগী সদস্য ও দৈনিক সিলেটের দিনকাল এর নুরুল ইসলামের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ হামলায় সাংবাদিক নুরুল ইসলাম সহ চার জন আহত হয়েছেন।
আহতরা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলার ঘটনায় এসএমপি’র দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার নং- (০২ (০৭) ১৯ ইং)। এছাড়া সাংবাদিক নুরুল ইসলামের উপর হামলা ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন মহল নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানান। এমনকি হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে সাংবাদিক নুরুল ইসলামের উপর হামলাকারীদেরকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা ।মামলা সূত্রে জানা যায়- বুধবার দুপুরে সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র রায়হান ইসলাম দীপুকে সন্ত্রাসীরা মারধর করতে থাকে। তখন ওই রাস্তা দিয়ে নিজ কর্মস্থল দৈনিক সিলেটের দিনকাল কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন সাংবাদিক নুরুল ইসলাম ও নাইমূল ইসলাম। তখন দীপুকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে যান সাংবাদিক নুরুল ইসলাম ও নাইমূল ইসলাম। এসময় দীপুকে হামলাকারী সন্ত্রাসী মো. আরিফ, নয়ন, সম্রাট, বাঁধন, বক্কর সহ অজ্ঞাত ১৫/২০ ও তাদের সহযোগীদের নিয়ে ধারালো অস্ত্র সহকারে সাংবাদিক নুরুল ইসলাম ও নাইমূল ইসলাম এর উপর অর্তকিত হামলা চালায়।
হামলাকারী সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ী আঘাতে মাথায়, হাতে ও শরীরে রক্তাক্ত জখম হয় নুরুল ইসলামের। এছাড়াও হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অর্তকিত হামলা ও অস্ত্রের আঘাতে নাইমুল ও মাহিন আহত হন।
এ সময় সন্ত্রাসীরা নুরুল ইসলামের সাথে থাকা একটি ডি-৪০ ডিজিটাল স্টিল ক্যামেরা যার মূল্য অনুমান ৬০ হাজার টাকা , নগদ ২৭ হাজার ৭৮০ টাকা ও তার হাতে থাকা একটি কেসিও ঘড়ি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত নুরুল ইসলাম, নাইমুল ইসলাম ও মাহিন শোর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। আর রক্তাক্ত আহতাবস্থায় সাংবাদিক নুরুল সহ ৪ জনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।
এসএমপি’র দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল ফজল মামলার সত্যতা স্বীকার করেন।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার মন্দিরের নামে খাস কালেকশানের আড়ালে অতিরিক্ত টোল আদায় এবং অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে স্থানীয় সাংবাদিক অমৃতিজ্যোতি রায় সামন্তকে একদল দুর্বৃত্ত ডেকে নিয়ে তার উপর হামলা ও মারধর করে আটকে রাখে। পরবর্তীতে থানা পুলিশ ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে।
এর আগে বুধবার সিলেট মহানগরীতে চ্যানেল আই, রেডিও টুডে ও দৈনিক শেয়ার বীজের সিলেট প্রতিনিধি সাদিকুর রহমান সাকী ও সবুজ সিলেটের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার সুবর্ণা হামিদের বাসায় হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
বুধবার দিবাগত রাতে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানায় সাদিকুর রহমান সাকী নিজে বাদি হয়ে এজাহার দায়ের করেন। পরে মামলা রেকর্ড করেন ওসি শাহদত হোসেন।মামলায় আসামী করা হয়েছে মল্লিকা এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে কামরুল (২৩), কুনু মিয়ার ছেলে মামুন (৩৭), মৃত পাখি মিয়ার ছেলে কামাল হোসেন (৪৮), কামাল হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৮), মেয়ে আমিনা বেগম (৩২), কুঠিনা বেগম (১৯), মৃত পাখি মিয়ার আরেক ছেলে নিজাম (৩২), কুনু মিয়ার ছেলে সোলেমান (২৩), শেখ শাহনুর ওরফে হাক্কাই (২১ সহ অজ্ঞাত ৩-৪ জন। এ ব্যপারে ওসি শাহদত হোসেন বলেন- আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। গভীর রাতেও অভিযান চালানো হয়েছে। শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে।

এরআগে, বুধবার বেলা দুইটার দিকে নগরের গোয়াইটুলা এলাকায় তাঁদের বাসভবনে হামলা চালায় অভিযুক্তরা। এতে সাংবাদিক সুবর্ণা, তাঁর মা, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহানারা খানম মিলন, খালা রাজিয়া খানম দোলন (৫০) এবং ছেলে শাহরিয়ার শিশির (১৪)সহ চারজন গুরুতর আহত হন।
এদিকে, সিলেটে একেরপর এক সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্ধ উদ্ভেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে হামলাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের প্রতি আহবান জানান।,
বৃহস্পতিবার বিএমএসএফর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম পাইলট, সাধারন সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হাবিব সরোয়ার আজাদ এক যৌথ বিবৃতিতে এসব হামলার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিকগণের নিরাপওা নিশ্চিত করণের দাবি জানান।
অপরদিকে সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ এক বিবৃতিতে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি স্বরূপ। নেতৃবৃন্দ হামলাকারীদের অভিলম্বে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান। এছাড়া সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ, সহ-সভাপতি এম এ হান্নান, সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল আহাদ ও সহকর্মী সাংবাদিকবৃন্দ।
অপরদিকে, সাংবাদিক নুরুলের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে নিন্দা জানিয়েছেন ফটো জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির সদস্য মো. নুরুল ইসলামের উপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগঠনের সিলেট বিভাগীয় সভাপতি মামুন হাসান ও সাধারণ সম্পাদক শংকর দাস।
এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পন। জীবনের ঝূকি নিয়ে তাদের কর্তব্য পালন করে আসছে। কিন্তু অতি দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, প্রতিনিয়ত সাংবাদিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন। আমরা সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...