পিবিএ, ভারত ডেস্ক– হাতির আক্রমণ ঠেকাতে সীমান্তে স্থাপন করা হচ্ছে ব্যাটারি চালিত ইলেকট্রিক কাঁটাতারের বেড়া। তার সংস্পর্শে এলেই ইলেকট্রিক শক খেয়ে পিছু হটবে অন্য রাজ্য থেকে আসা হাতির দল। রাজ্যের এহেন পরিকল্পনায় চিন্তিত পশুপ্রেমীরা। তাদের আশঙ্কা, হাতির যাত্রাপথে এ ভাবে বাধা সৃষ্টি করলে তারা হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। পরিণামে বন্য হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘাত আরও বাড়বে।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন বিভাগের কর্তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, জঙ্গলমহলে কেন হাতির তাণ্ডব বন্ধ করা যাচ্ছে না? তারই জবাবে বন বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ইন্দিবর পাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বলেন, হাতির হামলা ঠেকাতে ঝাড়খণ্ড সীমান্তে ইলেকট্রিক ফেন্সিং করা হচ্ছে। সেটা হলে দলমা হাতিকে ঝাড়খণ্ড সীমান্তের ওপারেই রুখে দেওয়া যাবে।
বন বিভাগের খবর, ঝাড়খণ্ড থেকে আসা দলমা হাতিরা যে সব রুট দিয়ে এ রাজ্যে প্রবেশ করে, সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে। তাতে ব্যাটারি চালিত ইলেকট্রিক সংযোগ থাকবে। হাতির হামলা রুখতে অনেক জায়গায় পরিখা বানানোর কাজও শুরু হয়েছে। এগুলো দেখতে সরু খালের মতো। প্রায় ৩ মিটার গভীর এবং দুই থেকে আড়াই মিটার চওড়া। ঝাড়খণ্ড থেকে আসা দলমার হাতিরা যাতে মেদিনীপুর শহরে ঢুকে না পড়ে তার জন্য জামশোল-পাঁজাশোল এলাকায় প্রায় ৬ কি.মি দীর্ঘ পরিখা বানানো হয়েছে। বাঁকুড়ার বড়জোড়ার ঘুতগোরিয়া মৌজায় প্রায় ১ কিমি লম্বা পরিখা তৈরি হয়েছে। ঝাড়গ্রামের বিনপুর দু’নম্বর ব্লকের বেলপাহাড়ি, বেলাসোলা-নূতনগ্রাম মৌজাতে পরিখা তৈরির জন্য সম্প্রতি টেন্ডার ডেকেছে বনদপ্তর। সরকারি কর্তারা সেটাকে মুশকিল আসান হিসেবে দেখলেও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন পশুপ্রেমীরা।
দীর্ঘদিন ধরেই বন্য হাতিদের নিয়ে কাজ করছে ‘ওয়াইল্ডওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’। সংস্থার রাজ্য অধিকর্তা শাশ্বতী সেন জানিয়েছেন, বাংলা নেপাল সীমান্তে হাতি আটকাতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হলেও সেটা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। উল্টে সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। অনেক জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে দিয়েছে হাতির দল। যে সব হাতিরা এপারে রয়ে গিয়েছিল, কাঁটাতার বসে যাওয়ার পর তারা আর পরবর্তীকালে ফিরতে পারেনি। সেখানে পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় সেই সব হাতিরা সমস্যায় পড়ছে। এতে হাতিদের সঙ্গে মানুষের সংঘাত বেড়ে যাচ্ছে।
বনদপ্তরের খবর, হাতির যাত্রাপথে পরিখা বানানো নিয়ে ইতিমধ্যেই আপত্তি তুলেছে ঝাড়খণ্ড সরকার। সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে দুই রাজ্যের বনদপ্তরের আধিকারিকদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই হাতির করিডরে পরিখা বানানোর বিরোধিতা করেছেন ঝাড়খণ্ডের আধিকারিকরা। ঝাড়খণ্ড বনদপ্তরের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘাটশিলা সীমান্তের কাছে পরিখা বানানোর পর থেকেই ঝাড়খণ্ডের দিকে থেকে আসা দলমা হাতির দল বাংলায় ঢুকতে বাধা পাচ্ছে। ফিরে গিয়ে তারা ঝাড়খণ্ডের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে তাণ্ডব চালাচ্ছে।
যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ রাজ্য বনদপ্তর। বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের দাবি, দলমার হাতিরা যাতে গ্রামে বা কোনও জনবসতি অঞ্চলে ঢুকতে না পারে, তার জন্যই কিছু জায়গায় পরিখা বানানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘হাতিরা যে পথ দিয়ে সাধারণত যাতায়াত করে, এরকম কোনও জায়গায় পরিখা বানানো হয়েছে বলে আমি শুনিনি। বরং আমরা ময়ূরঝর্ণায় দলমা হাতিদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
তাঁর অভিযোগ, সেচের নাম করে ওডিশা সরকার সীমান্ত বরাবর খাল খনন করেছে। তার ফলে হাতিরা বাংলা থেকে ওডিশা ঢুকতে গিয়ে বাধা পাচ্ছে। আগে হাতিরা বাংলায় দু’তিন মাস কাটানোর পর খাবারের সন্ধানে ওডিশা চলে যেত। কিন্তু খাল পেরোতে না পারায় তাদের অনেকেই পিছু হটছে। তারা জঙ্গল ছেড়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে হানা দিচ্ছে। অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। এই সমস্যার কথা ওডিশা সরকারকে জানানো হয়েছে।
পিবিএ/এমটি/এএইচ