পিবিএ, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নে সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা খাসিয়ামারা নদীতে বছরের ৮ মাস থাকে প্রায় ৩০০ ফুট দীর্ঘ বাঁশেরসেতু। এই নদীর পশ্চিমপাড়ে মাঠগাঁও এবং পূর্বপাড়ে ভাংগাপাড়া গ্রাম। দুই গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে খাসিয়ামারা নদী। এই নদীর উভয় পাড়ের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষএই বাঁশের সেতু দিয়েই প্রতিদিন সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সাথে এবং দোয়ারাবাজার উপজেলা ও ছাতক উপজেলার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে খাসিয়ামারা নদীর উপর এলাকার বাসিন্দারা বাঁশের সেতুতেই যোগাযোগ রক্ষা করছেন। দুরত্ব কমাতে কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এই বাঁশের সেতু ব্যবহার করে আসছেন। এলাকাবাসী এই নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ সাড়া দিচ্ছেন না। বাঁশের সেতু ব্যবহারকারীরা জানান, বছরের ৮ মাস এলাকার রোগী, চাকুরীজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে আসা-যাওয়া করতে সুবিধা হয় এই পথ দিয়ে। কিন্তু বর্ষায় নৌকায় পারাপার হতে হয় । শুকনা মৌসুম শুরু হলে নদীর স্রোত কমে আসে, তখনবাঁশের সেতু কাজে লাগে। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ, কয়েকশ’ মোটর সাইকেল এবং সিএনজি চলাচল করে থাকে।
উপজেলার লিয়াকতগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী আলেয়া বেগম ও ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাড়ি খাসিয়ামারা নদীর পূর্বপাড়ে। আমরা প্রতিদিন এই বাঁশের সেতু দিয়েই যাতায়াত করি। কিন্তু বর্ষায় ভোগান্তি বেড়ে যায়। খাসিয়ামারা নদীর উপর একটি সেতু হলে এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হতো। আমাদের ভোগান্তি কমে আসতো। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ নদীর উপর সেতু নির্মাণ করে আমাদের ভোগান্তির অবসান করুক।’ বাঁশের সেতুর টোল আদায়কারী সাকিল আহমদ জানান,‘খাসিয়ামারা নদীতে বছরে ৪ মাস নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার হয়। পানি কমে গেলে বাঁশের মাচান দিয়ে সেতু তৈরি করি। এই সেতু দিয়ে প্রায় ৮ মাস মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। এতে আমাদের খরচ বাদে সামান্য লাভ হয়। আমরাও এই নদীর উপর সেতু চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা কামাল উদ্দিন, আব্দুল কাদির বলেন, ‘খাসিয়ামারা নদীতে আমাদের সহজযোগাযোগ ব্যবস্থা রক্ষায় নিজেদের উদ্যোগে বাঁশের সেতু নির্মাণ করেছি। মানুষজন ও যানবাহন চলাচলে সেতুর খরচ হিসাবে সামান্য টোল আদায় করি। প্রতিদিন কয়েক শত মোটর বাইক, সিএনজি এই সেতু দিয়ে চলাচল করে। সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এই বাঁশের সেতু ব্যবহার করছেন জরুরি প্রয়োজনে।
লক্ষীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল হক বলেন, ‘খাসিয়ামারা নদীর উপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়ন, নরসিংপুর, বাংলাবাজার, বোগলা, সুরমা ইউনিয়ন ছাড়াও ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ও ইসলামপুর ইউনিয়নের মানুষজন এই বাঁশের সেতু দিয়েই চলাচল করে থাকেন। মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে প্রতি বছর এই সেতু নির্মাণ করেন এলাকাবাসী। শুনেছি একবার নদীতে সেতু নির্মাণের জন্য সার্ভে করা হয়েছে। কিন্তু এরপর আর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।’
দোয়ারাবাজার উপজেল প্রকৌশলী হরজিৎ সরকার বলেন,‘লক্ষীপুর ইউনিয়নের খাসিয়ামারা নদীর উপর সেতু নির্মাণের লক্ষে কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে সংশ্লিষ্টরা এসে সার্ভে করে গেছেন। এখন কোন পর্যায়ে আছে তা আমার জানা নেই।’ সুনামগঞ্জ এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল আহমদ বলেন, ‘খাসিয়ামারা নদীর উপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা এলজিইডি’র রয়েছে। কিন্তু এখনো কার্যকর কিছু হয়নি।’
পিবিএ/জেএইচআর/জিজি