সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ : ১৪০ প্রকল্পের কাজ শুরু

সুনামগঞ্জ হাওয়
সুনামগঞ্জ হাওর এলাকায় বাঁধ রক্ষা কাজ চলছে

পিবিএ, সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অনুমোদিত ৫৫৩ পিআইসি’র (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি)’র মধ্যে সবগুলোই গঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনটি উপজেলা বাদে বাকি ৮টি উপজেলায় ১৪০টি প্রকল্পে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করেছেন প্রকল্প বাস্তায়ন কমিটির লোকজন। ছাতক, তাহিরপুর ও সুনামগঞ্জ সদরে পিআইসি গঠিত হলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এই তিনটি উপজেলায় এখনো কাজ শুরু হয়নি। গত শনিবার জগন্নাথপুর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজের উদ্বোধন করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বাঁধ নির্মাণকাজের উদ্বোধনকালে তিনি জানিয়েছেন হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে কোন দুর্নীতি ও অনিয়ম সহ্য করা হবেনা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বছর হাওরের ৪৪০ কি.মি. ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রাক্কলন চূড়ান্ত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৩৭টি হাওরে এবার ৫৫৩টি পিআইসি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৪৪০ কি.মি. বাঁধ মেরামত, নির্মাণ ও সংস্কাওে সরকার প্রাথমিকভাবে ৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ইতোমধ্যে এক তৃতীয়াংশ টাকা ছাড় দিয়েছে সরকার। অনুমোদিত প্রকল্প অনুযায়ী সুনামগঞ্জ পওর বিভাগ-১ এর অধীনে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৯টি, ধর্মপাশায় ৭৪টি, জামালগঞ্জে ৫৩টি, তাহিরপুরে ৬৬টি, বিশ্বম্ভরপুওে ১৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলাগুলোতে অনুমোদিত ২১৮ প্রকল্পের সবগুলোই গঠিত হয়ে গেছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক ও তাহিরপুর উপজেলায় ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরুই হয়নি। এই বিভাগের আওতায় জামালগঞ্জের ৫৩টি প্রকল্পের মধ্যে ২০টি, ধর্মপাশায় ৫০ টির মধ্যে ৪০টি ও বিশ্বম্ভরপুরের ১৬টির মধ্যে ৪টি প্রকল্পে হাওর রক্ষা বাঁধে কাজ শুরু হয়েছে।

পওর বিভাগ-২ এর আওতায় অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৪০টি, ছাতকে ৭টি, জগন্নাথপুরে ৫০টি, দোয়ারাবাজারে ২৩টি, দিরাইয়ে ১০১টি এবং শাল্লা উপজেলায় ১১৪টি প্রকল্প গ্রহণ করা রয়েছে। এ পর্যন্ত এ বিভাগে ছাতক উপজেলা বাদে অন্য ৫টি উপজেলায় কমবেশি কাজ শুরু হয়ে গেছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৪০টির মধ্যে ২০টি, জগন্নাথপুরে ৫০টির মধ্যে ৪০টি, দোয়ারাবাজারের ২৩টির মধ্যে ১৪টি, দিরাই উপজেলায় ১০১টির মধ্যে ১২টি, শাল্লা উপজেলায় ১১৪টির মধ্যে ১৬টি প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে। সব প্রকল্পের পিআইসি গঠিত হওয়ায় সংশ্লিষ্টরা সবাইকে দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে
জানা গেছে।এদিকে দ্রুত হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবিতে গত শনিবার একযোগে জেলার ১০টি উপজেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় কৃষকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে জন্ম নেওয়া সংগঠন ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’। এছাড়াও ‘হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সমিতি’ও আলাদাভাবে একই দাবিতে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলছে।

হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সমিতির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, আমরা গত বছর থেকেই শুধু হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধই নয় হাওরকেন্দ্রিক কৃষির উন্নয়নে সরকারকে বিভিন্নভাবে লিখিতভাবে জানিয়েছি। হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ যথাসময়ে কৃষকদের অংশগ্রহণে নির্মাণ, চাষাবাদে কৃষকদের সহায়তা, উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য, মৌসুমে গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ন্যায্যমূল্যে ধানসংগ্রহ ও মিলিংয়ের ব্যবস্থাসহ নানা দাবিতে লিখিত স্মারকলিপি দিয়েছি। এখন আমাদের প্রধান দাবি যথাসময়ে হাওরের কাজ শুরু ও শেষ করা। তিনি বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্তই বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি।

হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদচৌধুরী খসরু বলেন, ‘আমরা তিনটি দাবিতে গত শনিবার জেলাব্যাপী মানববন্ধন করে দ্রুত কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছি। আমাদের আন্দোলনে স্বতস্ফূর্ত সাড়া দিয়েছেন কৃষকরা। কাজে কোন গাফিলতি ও দুর্নীতির চেষ্টা হলে আমরা আবারও কৃষকদের নিয়ে মাঠে নামব’। তিনি বলেন, যথা সময়ে প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ শেষ করার দাবি জানাই সংশ্লিষ্টদের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের জেলা কমিটির সদস্য সচিব মো. আব বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, ‘আগের চেয়ে কাজের অগ্রগতি ভালো। ৩টি উপজেলা বাদে ৮টিতেই আমরা কম-বেশি কাজ শুরু করেছি।’

পিবিএ/জিজি

আরও পড়ুন...