সুস্থ্যভাবে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে যা করতে হবে

পিবিএ ডেস্ক: দেহকে কালজয়ী করে তুলতে হলে আয়ু ও বয়স সম্পর্কিত কিছু সার্বজনীন ভ্রান্ত ধারণা প্রথমে দূর করতে হবে। কারণ এ ধারণাগুলো আসলেই সত্য নয়। এ ব্যাপারে মূল ভুল ধারণা হচ্ছে, বার্ধক্যের প্রক্রিয়ায়ই মানুষ মারা যায়। সত্যি কথা হচ্ছে, বার্ধক্যের সঙ্গে সংযুক্ত জ¦রা-ব্যাধিই মৃত্যুর কারণ।


সবাই চায় একশ’ বছর বেঁচে থাকতে, নিরোগময় দীর্ঘ আয়ু। কিন্তু, দীর্ঘ আয়ু তো আর বললেই পাওয়া যায় না। এর জন্য আপনাকে করতে হবে অনেক সাধনা। শুধু মনে মনে আশা করলেই হবে না।
একশ’ বছর বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে জীবনযাত্রায় আনতে হবে অনেক পরিবর্তন। মেনে চলতে হবে অনেক কিছু। আবার ত্যাগ করতে হবে অনেক কিছু। আসুন তাহলে আজ আমরা জেনে নেই- জীবনযাত্রায় এমন কিছু নিয়ম আছে- যা মেনে চললে আপনি পেতে পারেন একশ’ বছর আয়ু।
পরিমিত ঘুম: দিনে ঠিক কতটুকু সময় ঘুমাচ্ছেন এবং সেই ঘুম কেমন হচ্ছে সেটা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। খুব বেশি ঘুম যেমন খারাপ, তেমনি খারাপ অল্প ঘুমও। চিকিৎসকরা বলেন, সে কারণে ঠিকঠাক মতো ঘুমাতে হবে। ঠিক মতো ঘুমানো খুব জরুরি। ফলে আমরা যারা ঘুমের চাহিদা মিটিয়ে নিতে অল্প একটু সময় চোখ বন্ধ রেখে ভাবছি যে আমাদের ঘুম হয়ে গেছে, তাদের একটু সতর্ক হতে হবে।


ওজন নিয়ন্ত্রণ: দিনে একবার খান। ডিনারে মাছ ও সবজির ওপর বেশি জোর দিন। মাংস অবশ্যই খেতে হবে। তবে সপ্তাহে দু’বারের বেশি নয়। অলিভ অয়েল খাওয়ার ওপর জোর দিন। শরীরের ত্বক, শিরা ও ধমনি ভালো রাখার জন্য জলপাই তেল ভালো কাজ করে।
কার্বোহাইড্রেট নিয়ে সচেতনতা: ভাত ও রুটির মতো কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার পরিহার করা আজকালকার দিনে হয়তো একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, ব্যালেন্সড ডায়েটের জন্য আমাদের এসবও খেতে হবে। খুব বেশি আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। সবসময় রিফাইন বা মসৃণ কার্বোহাইড্রেট না খেয়ে বরং একটু ফাইবার যুক্ত (মোটা আটার) কার্বোহাইড্রেট খাওয়া ভালো। যেমন: বাদামি চাল, আস্ত শস্য দানা সমেত মোটা আটার রুটি ইত্যাদি।


নেশাকে না বলুন: দীর্ঘদিন বাঁচার জন্য আপনাকে অবশ্যই যে কোনো ধরনের নেশা থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন: এক গস্নাস রেড ওয়াইন হয়তো অনেকের কাছে খুব আনন্দের কিছু। কিন্তু, প্রতিদিন সন্ধ্যায় পান করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
দেরিতে অবসর নিন: যত দেরিতে কর্মজীবন থেকে অবসর নেবেন, তত ভালো। সাধারণত চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অবসর নেয়ার পর যেন তাদের বার্ধক্য হু হু করে বাড়ে। দেখা দিতে থাকে নানা অসুখ-বিসুখ। কাজ মানুষের বার্ধক্য আটকে রাখে।
হাঁটা-চলা করুন: অফিসে যারা কাজ করে থাকেন তারা ছাড়াও বাড়িতে আমাদের অনেকেই প্রচুর সময় বসে থেকে কাটাই এবং এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। দীর্ঘদিন বাঁচার জন্য যেটা করতে হবে সেটা হলো শরীরটাকে একটু নাড়ানো, অর্থাৎ নিয়ম করে হাঁটা-চলা করা।
জিন সম্পর্কে জানুন: জিন আমাদের শরীরে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই মুহূর্তে হয়তো আপনি আপনার জিন নিয়ে বেশি কিছু করতে পারবেন না। কিন্তু, কোনো কোনো জিনের কারণে আমরা বিশেষ একটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছি কিনা সেটা জানলে আমাদের সুবিধা হবে। বিশেষ কোনো অসুখে পডার প্রবণতা হয়তো আপনার মধ্যে বেশি থাকতে পারে। কিন্তু, আপনার পরিবারের বা বংশের অন্যান্য সদস্যদের অসুখ-বিসুখের ইতিহাস জানা থাকলে সেটা আমাদের সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করতে সাহায্য করতে পারে।
প্রাণ খুলে হাসুন: সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকা অত্যন্ত আনন্দের, এটা মনে রাখতে হবে। এটাকে দৈনন্দিন টুকিটাকি কাজের অংশ হিসেবে দেখলে হবে না। এখানে মানসিকতার একটা পরিবর্তন প্রয়োজন। তাই থাকতে হবে হাসিখুশি। এমন কিছু করুণ যা প্রতিদিন আপনাকে হাসিখুশি রাখবে।


স্ট্রেস বা চাপ কমান: আজকের দিনে নানা কারণে স্ট্রেসের সৃষ্টি হয়। সেটা কাজের কারণে হতে পারে, হতে পারে সম্পর্কের কারণেও। পারিবারিক কারণেও হয়। কিন্তু, এসব চাপ থেকে কিভাবে মুক্ত থাকা যায় তার উপায় প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে খুঁজে নিতে হবে। কারণ, একেজনের বেলায় এটা একেকভাবে কাজ করে। এজন্য একজন চিকিৎসক অথবা এ-সংক্রান্ত অন্যান্য পেশাজীবীদের কাছ থেকেও সাহায্য নেয়া প্রয়োজন।

এ ছাড়া এত কিছু করতে না চাইলেও শুধু এটা আপনাকে মনে রাখতে হবে যে একজন মানুষকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে গেলে অন্তত তিনটি উপায় মেনে চলতে হবে। সেগুলো হলো- ছয় ঘণ্টা ঘুম, এক ঘণ্টা শারীরিক ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।

পিবিএ/হক

আরও পড়ুন...